সালাহুদ্দীন আইউবি ও বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয়
[সেদিন একটা বই পড়ছিলাম পাশে বসে থাকা বন্ধু জিজ্ঞেস করল বইটি কি নিয়ে লেখা? আমি উত্তর দিলাম সালাহুদ্দীন আইউবিকে নিয়ে লেখা। ও আমাকে জিজ্ঞেস করল, সে আবার কে?! ... বন্ধু আমার একজন মুসলিম। কিন্তু সে সালাহুদ্দীন আইউবিকে চিনে না (!)।
জাতি আসলে সেই মহাপুরুষ দের ভুলে যেতে চলেছে যারা ইসলামের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়েছে।
জাতি আসলে তাদের ভুলে কাদেরকে মনে রাখছে? তারা কাদের জীবনী পড়ছে?? কাদের সম্পর্কে জানছে ?? তাই ভাবলাম জাতিকে কিছু জানানো যায় কিনা। তাই এই লেখাটা লেখা। যতটুকু পেরেছি সংক্ষিপ্ত করে লিখেছি। এর চেয়ে সংক্ষিপ্ত করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ] [ দয়া করে নিজে জেনে শেয়ার করে অন্যকে জানার সুযোগ করে দিন ]
জাতি আসলে সেই মহাপুরুষ দের ভুলে যেতে চলেছে যারা ইসলামের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়েছে।
জাতি আসলে তাদের ভুলে কাদেরকে মনে রাখছে? তারা কাদের জীবনী পড়ছে?? কাদের সম্পর্কে জানছে ?? তাই ভাবলাম জাতিকে কিছু জানানো যায় কিনা। তাই এই লেখাটা লেখা। যতটুকু পেরেছি সংক্ষিপ্ত করে লিখেছি। এর চেয়ে সংক্ষিপ্ত করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ] [ দয়া করে নিজে জেনে শেয়ার করে অন্যকে জানার সুযোগ করে দিন ]
মহান আল্লাহ এই মহাজগতের সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা। আল্লাহ মানুষ সহ বহু প্রকারের প্রাণী, জীবজন্তুসৃষ্টি করেছেন। তাদের মধ্যে মানুষকে করেছেন সৃষ্টির সেরা জীব। আর তাদের হাতেই ন্যাস্ত করেছেন পৃথিবীর পরিচালনার ভার। আর সঠিক উপায়ে পরিচালনার জন্য পৃথিবীর ঊষালগ্ন থেকেই সেখানে প্রেরণ করেছেন নবী-রাসুল যারা মানুষের মাঝে আল্লাহর আইন-কানুন ও জীবন চলার পদ্ধতি শিক্ষা দিয়ে সে অনুযায়ী চলতে মানুষকে সাহায্য করেছেন। আর নবী-রাসুলদের এই কাজের সাহায্যার্থে আল্লাহ তাদের অনেকের উপর প্রেরণ করেছেন আসমানি কিতাব এবং তাদের দিয়েছেন সর্বযুগের চিরন্তন আদর্শ ইসলাম। রাসুল (সাঃ) ছিলেন সেই নবী – রাসুলদের মধ্যে শেষ রাসুল যার পর আর কোন নবী বা রাসুল আসবেন না। কিন্তু মানুষের মাঝে আল্লাহর আইন-কানুন ও জীবন চলারপদ্ধতি পৌছিয়ে দিতে এবং সেগুলো সূক্ষ্মরূপে - সুশৃঙ্খল উপায়ে পালনের উদ্দেশ্যে সমগ্র পৃথিবীতে একক রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষের মধ্য থেকে নির্বাচিত খলীফাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। আর সেই ক্রমধারায় নবী-রাসুলের পর খলিফাগণ দাওয়া ও জিহাদের মাধ্যমে একের পর এক অঞ্চলে ইসলামকে পৌছিয়ে দিয়েছেন। সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবি ছিলেন তেমনি একজন সুলতান যিনি ইসলামিক রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোর একটি বায়তুল মুকাদ্দাস ( ইহুদী-খৃষ্টানদের কথ্য মতে জেরুজালেম) ক্রুসেডারদের দ্বারা দখলের প্রায় ৯০ বছর পর পুনরায় (হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) এর খিলাফতের সময় সেটি ইসলামিক রাষ্ট্রের ছায়াতলে আসে) তাদের হাত থেকে মুক্ত করেন, এবং সেখানকার মুসলিম নাগরিকদের তাদের অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষাকরেন।
১১৬৯ সালের ২৩ মার্চ। সালাহুদ্দিন আইউবি গভর্নর ও সেনাপ্রধান হয়ে মিসর আগমন করেন।ফাতেমি খিলাফতের কেন্দ্রীয় খলীফা তাকে এ-পদে নিয়োগ দিয়ে বাগদাদ থেকে প্রেরণ করেন।তার (দ্বাদশ শতাব্দীর) আগে থেকেই ইউরোপ, ফ্রান্স ও জার্মানি ইসলামিক রাষ্ট্র ভাঙ্গার জন্য ক্রুশ ছুঁয়ে শপথ করে, ইসলামের নাম নিশানা মুছে দিয়ে বিশ্ব জুড়ে ক্রুশের রাজত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শুরু করে নানা চক্রান্ত। সেই সঙ্গে তারা চালায় সশস্র অভিযান। মুসলিমদের থেকে ছিনিয়ে নিয়ে দখল করে রাখে ইসলামের মহান স্মৃতি চিহ্ন প্রথম কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস।
সালাহুদ্দীন আইয়ুবি ছোটবেলায় গভর্নর নিজামুল মূলক এর মাদরাসায় জাগতিক ও আদর্শিক পড়াশুনা ও যুদ্ধ বিদ্যায় জ্ঞান লাভ করেন। রাজনীতি, কূটনীতি, ভূগোল, ইতিহাস ও প্রত্যক্ষ যুদ্ধ কৌশলের উপর গভীর জ্ঞান ও আগ্রহের কারণে চাচা শেরেকাহ ও নুরুদ্দীন জঙ্গী তাকে স্পেশাল প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। প্রশিক্ষণটি মূলত তৈরি হয় এক যুদ্ধের ময়দানে , যেখানে সালাহুদ্দিন আইউবি দীর্ঘকাল আবরোধের মধ্যে যুদ্ধ করেও হতাশ না হয়ে সম্পূর্ণ ঠাণ্ডা মাথায় সৈন্যদের নিয়ে যুদ্ধ করে ফিরে আসেন। এর পরই নুরুদ্দীন জঙ্গী তাকে মিশরের গভর্নরের পদের জন্য মনোনীত করেন।
১১৬৯ সালের ২৩ মার্চ। সালাহুদ্দিন আইউবি গভর্নর ও সেনাপ্রধান হয়ে মিসর আগমন করেন।ফাতেমি খিলাফতের কেন্দ্রীয় খলীফা তাকে এ-পদে নিয়োগ দিয়ে বাগদাদ থেকে প্রেরণ করেন।তার (দ্বাদশ শতাব্দীর) আগে থেকেই ইউরোপ, ফ্রান্স ও জার্মানি ইসলামিক রাষ্ট্র ভাঙ্গার জন্য ক্রুশ ছুঁয়ে শপথ করে, ইসলামের নাম নিশানা মুছে দিয়ে বিশ্ব জুড়ে ক্রুশের রাজত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শুরু করে নানা চক্রান্ত। সেই সঙ্গে তারা চালায় সশস্র অভিযান। মুসলিমদের থেকে ছিনিয়ে নিয়ে দখল করে রাখে ইসলামের মহান স্মৃতি চিহ্ন প্রথম কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস।
সালাহুদ্দীন আইয়ুবি ছোটবেলায় গভর্নর নিজামুল মূলক এর মাদরাসায় জাগতিক ও আদর্শিক পড়াশুনা ও যুদ্ধ বিদ্যায় জ্ঞান লাভ করেন। রাজনীতি, কূটনীতি, ভূগোল, ইতিহাস ও প্রত্যক্ষ যুদ্ধ কৌশলের উপর গভীর জ্ঞান ও আগ্রহের কারণে চাচা শেরেকাহ ও নুরুদ্দীন জঙ্গী তাকে স্পেশাল প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। প্রশিক্ষণটি মূলত তৈরি হয় এক যুদ্ধের ময়দানে , যেখানে সালাহুদ্দিন আইউবি দীর্ঘকাল আবরোধের মধ্যে যুদ্ধ করেও হতাশ না হয়ে সম্পূর্ণ ঠাণ্ডা মাথায় সৈন্যদের নিয়ে যুদ্ধ করে ফিরে আসেন। এর পরই নুরুদ্দীন জঙ্গী তাকে মিশরের গভর্নরের পদের জন্য মনোনীত করেন।
সুলতান নুরুদ্দীন জঙ্গীও চিন্তা চেতনায় ছিলেন সালাহুদ্দীন আইউবির মতই। সেসময় যেখানে ইসলামিক খিলাফতের সব আমির, গভর্নর ও উজিররা খৃষ্টানদের চক্রান্তে পা দিয়ে তাদের থেকে সুন্দরি মেয়ে ও প্রচুর ধন-সম্পদ নিত এবং মূলত ক্ষমতার লোভে ইসলামিক রাষ্ট্র থেকে স্বাধীন হয়ার স্বপ্ন দেখত, ঠিক তখনই সালাহুদ্দীন আইয়ুবি ও নুরুদ্দীন জঙ্গী ইসলামিক খিলাফত রাষ্ট্রকে ইহুদী–খৃষ্টানদের চক্রান্ত থেকে মুক্ত করে বাইতুল মুকাদ্দাস কে সেই ক্রুসেডারদের থেকে মুক্ত করার জন্য একের পর এক জিহাদ করে গেছেন।
সালাহুদ্দীন আইয়ুবি মিশরের গভর্নর হয়ার পরই সর্ব প্রথম সেখান থেকে খৃষ্টানদের চক্রান্তে পা দেয়া আমির-উজিরদের সুকৌশলে সরকারী দায়িত্ব থেকে দূরে সরিয়ে দেন। এজন্য তাকে মারার জন্য ক্রুসেডারদের দালালরা অনেক ফন্দি আটার পরও তারা ব্যর্থ হয়। দালালরা অনেক সুন্দরী মেয়ে ব্যবহার করেও পাথরের মত সালাহুদ্দীনকে গলাতে পারেনি। যেখানে অন্যান্য আমিররা সানন্দেই তাদের গ্রহণ করত।
দালালরা সালাহুদ্দীনকে গলাতে না পেরে তাকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে নিজেরা ক্ষমতায় বসার জন্য মিশরের সেনাবাহিনির মধ্যে থাকা সুদানি সেনাদের মধ্যে বিদ্রোহ করার চেষ্টা করে এই বলে যে তোমরা সুদানি তারা মিসরি। সুদানের বর্ডার মিশরের কাছে থাকাতে বিদ্রোহের পর সেখান থেকে আক্রমণ করাও সহজ ছিল। কিন্তু সালাহুদ্দীন আইয়ুবি তার চৌকস গোয়েন্দা প্রধান আলি বিন সুফিয়ান কে দিয়ে সব তথ্য আগেই পেয়ে যান । আর খুবই কৌশলে তাদের বিদ্রোহ দমন করেন। এদিকে সেনা বিদ্রোহ করিয়ে দালালরা সম্রাট ফ্রাঙ্ককে আক্রমণ করার আগমনও জানায়। কিন্তু সালাহুদ্দীন আইউবি আগেই বিদ্রোহ দমন করেন, আর যখন পরে ফ্রাঙ্ক-এর সেনাবাহিনী আসে তারা পুরোপুরিভাবে সালাহুদ্দীনের কাছে পরাজিত হয়। এই দিকে ফ্রাঙ্ক মিসরে আক্রমণ করলে সিরিয়া থেকে নুরুদ্দীন জঙ্গিও ফ্রাঙ্ক-এর দেশে আক্রমণ করে বসেন। তাতে আক্রমনের খবর পেয়েই ফ্রাঙ্ক তার দেশে ফিরে যেয়ে দেখেন সেখানের চিত্রই বদলে গেছে। সব দিক দিয়েই ফ্রাঙ্কের শোচনীয় পরাজয় ঘটে।
ফাতেমি খিলাফতের খলীফা আজেদ ও যখন ক্রুসেডারদের চক্রান্তে পা দেন তখন সালাহুদ্দীন আইউবি তাকে সুকৌশলে খিলাফতের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে মিশরকে বাগদাদের কেন্দ্রীয় খিলাফতের অধীনে দিয়ে দেন , এতে করে খিলাফত রাষ্ট্র আবারো একটি রাষ্ট্রে পরিনত হয়। মূলত ক্রুসেডাররা ফাতেমি খলীফাকে মদ আর নারীতে ব্যাস্ত রেখে তাকে অধমে পরিণত করে, এমনকি সে সালাহুদ্দীন আইয়ুবিকে হত্যারও পরিকল্পনা করে। আর খলীফা হওয়া সত্ত্বেও তিনি সালাহুদ্দিন আইউবির উপর কথা বলতে ভয় পেতেন। চরিত্রের অধপতনের কারণেই মূলত এমনটি অনুভব করতেন তিনি। তাই তাকে সরিয়ে খিলাফতের দায়িত্ব একজনকে দেয়া ও একমুখী করা সালাহুদ্দীন আইয়ুবির পক্ষে সহজ হয়।
সেকালে মাসজিদে জুময়ার খুৎবাতে আল্লাহর ও রাসুলের নামের পর খলীফার নাম উচ্চারন করতে হতো। সালাহুদ্দীন আইয়ুবি জুময়ার খুৎবা থেকে খলীফার নাম উচ্চারন করা বাদ দিয়ে দেন।
সুলতান আইয়ুবি যেখানে ক্রুসেডারদে আক্রমণ করে করে তাদের ইসলামিক রাষ্ট্রের দখলকৃত অঞ্চল থেকে বিতারিত করবেন, সেখানকার মুসলিমদের তাদের অত্যাচার থেকে মুক্তি দিবেন, সেখানে ক্রুসেডাররা সারাক্ষণই তাদের গয়েন্দাদের ব্যবহার করে মিসরে কোন না কোন সমস্যা তৈরি করে রাখত। যাতে করে সালাহুদ্দীন আইয়ুবি নতুন করে তাদের আক্রমনের সময় না পান, তিনি যেন মিসর ঠিক করতেই তার সকল সময় পার করে দেন। তারা প্রায়ই চেষ্টা করত সুদানি বাহিনী দিয়ে সুদান থেকে মিসরে আক্রমণ করাতে, যাতে সালাহুদ্দীন শুধু তাদের নিয়েই ব্যাস্ত থাকেন। তারা মিসরের বিভিন্ন মাসজিদে তাদের প্রশিক্ষিত গোয়েন্দা ইমাম পাঠাত যারা সেখানে জিহাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে মানুষের ভিতর থেকে জিহাদের চেতনাকে ধ্বংস করতে চাইত। ক্রুসেডাররা মুসলিমদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করত মেয়েদের দিয়ে। তারা প্রায় সব আমিরদের কাছেই তাদের সুন্দরী মেয়েদের প্রেরণ করত, তাদের দিয়ে সেই আমির দের চরিত্র ধ্বংস করার পায়তারা করত। তারা জানত মুসলিমদের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে তাদের ঈমানী শক্তি যেটা দিয়ে তারা ক্রুসেডারদের সাথে লড়ে । আর সে শক্তির কাছেই তারা বার বার হারে, আর সে শক্তির বলেই তাদের চেয়েও অনেক কম পরিমাণ সৈন্য নিয়ে মুসলিমরা বার বার জয় লাভ করে।
ক্রুসেডাররা তাদের নিজেদের মেয়েদের কে মুসলিমদের চরিত্র হরণের প্রশিক্ষণ দিত। তারা এ কাজে সেসকল মেয়েদেরও ব্যবহার করত যাদেরকে তারা মুসলিমদের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অপহরণ করে এনেছিল তাদের বাল্যকালে। তারা ক্রুশের স্বার্থে এরূপ করাকে পুণ্য মনে করত।
সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবি মিশরের স্থায়িত্ব আনার পরই আবার তার সেই বায়তুল মুকাদ্দাসকে মুক্ত করার সপথ পুরন করার জন্য বের হয়ে যান। তিনি সর্ব প্রথম খৃষ্টানদের ফিলিস্তিনের শোবক দুর্গ অবরোধ করে সেটা জয় করে ফেলেন। পরে নুরুদ্দীন জঙ্গীর সহায়তায় কার্ক দুর্গও জয়করেন। কার্ক দুর্গ অবরোধ করার সময় সুদানিরা আবারো মিসরে সমস্যা তৈরি করতে চায় ক্রুসেডারদের সাহায্যে। পরে সুলতান আইয়ুবি কার্কের অবরোধ নুরুদ্দীন জঙ্গীকে দিয়ে মিসরে চলে আসেন। পরে নুরুদ্দীন জঙ্গী কার্ক দুর্গ সহ ফিলিস্তিনের আরও কিছু জায়গা দখল সম্পন্ন করেন।
ফিলিস্তিনের শোবক ও কার্ক দুর্গ পরাজয়ের প্রতিশোধ স্বরূপ ক্রুসেডাররা পাল্টা আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নেয়। স্পেনের পূর্ণ নৌ বহর এতে যুক্ত হয়। ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়ামও যুক্ত হয়। গ্রিস ও সিসিলির জঙ্গি কিশতিগুলোও যুক্ত হয়। ব্রিটিশরা ভাবতো তারা চাইলে একাই মুসলিমদের পরাজয় করতে পারে তাই তারা যুক্ত হতে চায় নি। কিন্তু তাদের পোপের অনুরধে তাদের কিছু যুদ্ধ জাহাজগুলোও যুক্ত করে। ...... এদিকে সুলতান আইয়ুবি গোয়েন্দা মারফত তাদের আগমনের খবর পেয়ে যান, তিনি এও জেনে যান যে তারা আগে এসে মিসরের উপকুলের আলেকজান্দ্রিয়া অঞ্চল দখল করবে। তাই সুলতান আলেকজান্দ্রিয়া থেকে সকল জনগণকে সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যান এবং সেখানে ঘরগুলোতে মুসলিম সৈন্য দিয়ে ভরে রাখেন। ক্রুসেডাররা যখন উপকুলে এসে ভিরে তারা সেখানে আক্রমণের জন্য কোন সৈন্য না দেখে খুশি হয়, এবং পরে হেসে খেলে উপকূলের আলেকজান্দ্রিয়া দখল করতে যায়। রাতে যখন তারা নগরীতে প্রবেশ করে তখনই আইউবির সৈন্যরা ঘর থেকে বেরিয়ে তাদের উপর আক্রমণ করে নিষ্পেষিত করে দেয়। ওই দিকে তাদের জাহাজগুলোতে যেই সৈন্যদেরকে রেখে এসেছিল তাদের উপর হঠাৎ পেছন থেকে সুলতান আইয়ুবির যুদ্ধ জাহাজ আক্রমণ করা শুরু করে। তারা মিনজানিকের সাহায্যে বড় বড় আগুনের গোলা ও পাথর মারতে শুরু করে ক্রুসেডারদের জাহাজের উপর। ক্রুসেডাররা পালাতে থাকে জাহাজ নিয়ে এবং ধ্বংস হতে থাকে। ক্রুসেডারদের আরেকটা অংশ ফিলিস্তিন থেকে আক্রমনের জন্য আসলে সুলতান নুরুদ্দীন জঙ্গী তাদের উপর আক্রমণ করে তাদের পরাজয় করে দেন। এই যুদ্ধ শেষে নুরুদ্দীন জঙ্গী সুলতান আইয়ুবিকে তার অধিকৃত অঞ্চল দিয়ে সিরিয়ায় নিজ এলাকায় চলে যান।
সালাহুদ্দীন আইয়ুবির যুদ্ধ কৌশলের সবচেয়ে ভয়ানক কৌশল ছিল তার গেরিলা হামলা। তার সৈন্যরা গেরিলা বাহিনী দিয়ে শত্রুদের সেনা বহরের পেছনের অংশে আঘাত হরে নিমিষেই হারিয়ে যেত। তার এই কৌশল আজো সামরিক বিশ্লেষকরা প্রশংসা করে।
১১৭৪ সালের মে মাসে নুরুদ্দীন জঙ্গী মৃত্যু বরন করেন। তার মৃত্যুতে নেমে আসে শোকের ছায়া। সালাহুদ্দীন আইয়ুবি হারান তার প্রান প্রিয় চাচাকে জিনি বরাবরই তাকে সাহায্য দিয়ে আসতেন বিভিন্ন সময়ে। ক্রুসেডাররা এতে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। কারন তারা এখন সালাহুদ্দীন আইয়ুবির সাথে আগের চেয়ে কম কষ্টে লড়তে পারবে। জঙ্গীর মৃত্যুর পর তার মাত্র ১১ বছরের নাবালেক ছেলেকে ক্রুসেডারদের গাদ্দাররা ক্ষমতার লোভে খিলাফতের মসনদে বসায়। যদিও মাত্র ১১ বছরের নাবালেগ ছেলেকে খলীফা হিসেবে মসনদে বসানো সকলের জন্য হারাম, তবুও তারা ক্ষমতার জন্য এটা করে। এতে নুরুদ্দীন জঙ্গীর স্ত্রী রোজি খাতুন অনেক বাধা দিলেও তারা তা অমান্য করে। রোজি খাতুনও ছিলেন মুলত তার স্বামীর মতোই একজন খাটি ইমানদার। যিনি এই অন্যায় মেনে নিতে না পেরে সালাহুদ্দীন আইয়ুবিকে চিঠি লিখেন এই বলে যে, উনি যেন এসে সিরিয়া দখল করেন।
এদিকে সালাহুদ্দীন আইয়ুবি আসবেন জেনে রোজি খাতুন সেখানকার জনগণকে বুঝাতে থাকেন যে একজন নাবালেগকে খলীফা হিসেবে মানা হারাম। আর এ কাজ গাদ্দাররা একারনে করেছে যাতে করে তারা তার নাবালক ছেলেকে ভুল বুদ্ধি দিয়ে সব করিয়ে নিতে পারে।
একদিন সালাহুদ্দীন আইয়ুবি মাত্র ৭০০ সৈন্য নিয়েই সিরিয়ার মুল দুর্গ অবরোধ করেন। এতে সিরিয়ার জনগন খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় এবং তারা সালাহুদ্দীন আইয়ুবিকে ভিতরে আসতে দেয়ার জন্য নগরীর মুল ফটক খুলে দিতে বলে। তারা বাধ্য হয়ে ফটক খুলে দিলে সালাহুদ্দীন আইয়ুবি ভিতরে প্রবেশ করে। সকলে তাকে স্বাগত জানায়।
এদিকে সুলতান আইয়ুবির আগমনের খবর পেয়ে সকল আমলা- উজিররা দামেস্ক ছেড়ে পালিয়ে যায়। নুরুদ্দীন জঙ্গীর ছেলেও পালিয়ে যায়। সাথে করে তারা প্রচুর মূল্যবান সম্মত্তি ও প্রচুর দিরহাম নিয়ে যায় আর সাথে করে খৃষ্টানদের দেয়া মেয়েগুলোও নিয়ে যায়। তারা সিরিয়ার অদূরে হালব, হাররান ও মাশুল দুর্গে যেয়ে আশ্রয় নেয়। সেখানে খৃষ্টানদের প্রভাব থাকায় তারা নিরাপদেই থাকতে শুরু করে।
হালব ও মাসুলে আশ্রয় নেয়া আমিররা ক্রুসেডারদের সাথে আতত করে সুলতান আইয়ুবিকে পরাজিত করে পুনরায় সিরিয়া দখল করার ফন্দি আটে। এতে ক্রুসেডাররাও তাদের সাহায্য করতে থাকে। সুলতান আইয়ুবি যেন নিজেদের মুসলিম ভাইদের সাথেই যুদ্ধ করতে করতে শেষ হয়ে যান সেই লক্ষ্যে ক্রুসেডাররা হালব, মাসুল ও আশে-পাসের আমিরদের সালাহুদ্দীন এর বিরুদ্ধে উদবুদ্ধ করতে থাকে। তাদের সাহায্য করতে থাকে। তারা সেখানকার মুসলিম জনগণদের গোয়েন্দা মারফত বিভ্রান্ত করতে থাকে। তাদের বুঝাতে থাকে সুলতান সালাহুদ্দীন অত্যাচারী, নির্দয় শাসক।
পরে বহু দিন যাবত সুলতান আইয়ুবি বায়তুল মুকাদ্দাসের বাঁধা স্বরূপ সেই কথিত মুসলিম আমিরদের সাথেই যুদ্ধ করতে থাকেন। ক্রুসেডাররা সেই আমিরদের প্রচুর ধন-সম্পত্তি ও সুন্দরী মেয়ে দিয়ে রেখেছিল। আর ক্ষমতার নেশা সে সকল আমিরদের জেকে বসেছিল।
একদিন মরহুম সুলতান নুরুদ্দীন জঙ্গীর ছেলে প্রচুর মদ্য পানের ফলে ভুগে ভুগে মৃত্যুবরন করে। তাকে দেখার জন্য তার মা রোজি খাতুন আর কখনো যান নি।
অতঃপর অনেক দিন পর অনেক যুদ্ধ ও অনেক কষ্টের পর সুলতান আইয়ুবি হালব, মাসুল ও হাররান দখল করে নেন। তখন সেখানকার মুসলিমরাই তাদের আমিরদের বিরুদ্ধে সালাহুদ্দীন এর জন্য দরজা খুলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে বলে, পরে তারা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এতে সুলতানের নিজেদের সাথে যুদ্ধ করেই প্রচুর মুসলিম সৈন্য শেষ হয়ে যায়। ক্রুসেডারদের গাদ্দার আমিরগুলোও তাদের সৈন্যদের এই বলে যুদ্ধে নিত যে, সালাহুদ্দীন ক্রুসেডারদের সাথে আতত করেছে , আর আমরাই প্রকৃত ইসলামের পথে আছি।
হালব, হাররান আর মাসুল দুর্গ জয় করার পর সালাহুদ্দীন আইয়ুবির সামনে বাইতুল মুকাদ্দাসের পথে আর কোন বাধা রইলনা।
সুলতান আইয়ুবির এইবার বাইতুল মুকাদ্দাস এরদিকে আগমনের পালা। ক্রুসেডাররা এইবার আর মুসলিমদের থেকে সাহায্য পাবে না। কারন সব আমিরই এখন সালাহুদ্দীন আইয়ুবির আনুগত্য শিকার করেছে। সুলতান আইয়ুবি এইবার সর্ব প্রথম কার্ক আক্রমণ করেন। সালাহুদ্দীন আইয়ুবি এর আগেও একবার কার্ক দখল করেন, কিন্তু ১ মাস পর সেটা আবারো ক্রুসেডারদের হাতে চলে যায়। কার্কের শাসনভার ছিল অরনাত এর উপর। অরনাত একজন নাস্তিক ছিল যে রাসুল (সাঃ) কে নিয়ে বিদ্রুপ করত, তাই সুলতান তাকে ঘৃণা করতেন আর তাকে কাছে পেলেই হত্যা করবেন বলে শপথ নিয়েছিলেন। অরনাত মিসর আর সিরিয়ার হজ্ব কাফেলাগুলোর উপর হামলা করে তাদের সম্পত্তি ডাকাতি করত, আর মেয়েদের তুলে নিত।
সুলতান আইয়ুবি কার্ক আক্রমণ করলেন। কিন্তু তিনি সেটা অবরোধ না করে শত্রু যেন তার ইচ্ছা মত এলাকায় এসে যুদ্ধ করতে বাধ্য হয় সেই পরিবেশ তৈরি করলেন। তিনি শত্রুর সকল রসদ বন্ধ করে তাদের পানির উৎস গুলো দখল করলেন আর তাদের পানির তৃষ্ণায় যুদ্ধ ক্ষেত্রে পাগল করে ফেললেন। ক্রুসেডাররা বর্ম পরে যুদ্ধে আসতো, আর তিনি যুদ্ধের জন্য সময় ঠিক করলেন জুন-জুলাই মাস, এতে তারা বর্মের ভিতর উত্তাপে জ্বলে-পুড়ে মরতে লাগলো। তাদের পরাজয় হল। সুলতান কার্ক ও আশে পাসের দুর্গ জয় করে নিলেন। সেই যুদ্ধে অরনাত সহ মোট ছয় জন সম্রাট ধরা পরে। সুলতান পরে তার শপথ মত অরনাত কে হত্যা করে বাকিদের ক্ষমা করে দেন।
এই যুদ্ধে ক্রুসেডাররা তাদের সবচেয়ে বড় ক্রুশটা (তারা ভাবে এইটাতেই ইসা (আঃ) কে শূলে চড়ানো হয়েছিল) যুদ্ধের ময়দানে এনেছিল। তাদের সবচেয়ে বড় পাদ্রি (পোপ) এটা আনে। পরে পোপ মৃত্যু বরণ করে আর বড় ক্রুশটি মুসলিমদের হাতে চলে আসে। পরে সুলতান বায়তুল মুকাদ্দাস জয় করার পর ক্রুসেডারদেরকে তাদের ক্রুশটি দিয়ে দেন।
এরপর পালা আক্রার দুর্গের । ক্রুসেডাররা ভেবেছিল সুলতান আগে বায়তুল মুকাদ্দাস আক্রমণ করবেন। তাই তারা বুঝে উঠার আগেই সুলতান আগে আক্রা আক্রমণ করলেন। ২-৩ দিন অবরোধের পর সেটা জয় করে ফেলেন।
তারপর সুলতান আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ আসকালান অবরোধ করেন। প্রায় ৩৪ টি বছর পর এই অঞ্চলটি আবার স্বাধীন হল। ১১৫৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সম্রাট ফ্রাংক এটি দখলকরে নেয়। আসকালান থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার পূর্বে বায়তুল মুকাদ্দাস অবস্থিত।
এইবার পালা বায়তুল মুকাদ্দাসের ..........
ক্রুসেডারদের দ্বারা বায়তুল মুকাদ্দাসের দখল হয় ১০৯৯ সালের ১৫ জুলাই মোতাবেক ৪৯২ হিজরীর ২৩ শাবান মাসে । ক্রুসেডাররা বায়তুল মুকাদ্দাস দখল করে মুসলিম শাসকদের সহায়তায়। সেসময় মুসলিম শাসকরা নিজেদের রাজ্য চলে যাবে বিধায় সকলেই একে একে ক্রুসেডারদের পথ ছেড়ে দেয়, কেউই তাদের বাধা দেয় না। বরং অনেকেই তাদের সাহায্য করে, রসদ দেয়।
শুধু আরাকার আমির ছিলেন একজন ইমানদার পুরুষ, যার সামরিক শক্তি খৃষ্টানদের তুলনায় কিছুই ছিল না। তবু তিনি খৃষ্টানদের দাবি পুরন করতে অস্বীকৃতি জানান। খৃষ্টান বাহিনি আরাকা ১০৯৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ মে পর্যন্ত অবরোধ করে রাখে। মুসলিমরা এমন প্রান-পন লড়াই করে যে বিপুল ক্ষতির পর ক্রুসেডাররা পথ পরিবর্তনকরে চলে যায়।
মুসলিম আমিরগনই সে সময়য় ক্রুসেডারদের নিরাপদে বায়তুল মুকাদ্দাস পৌঁছে দিয়েছিল। পরে ১০৯৯ সালের ৭ জুন মাসে তারা বায়তুল মুকাদ্দাস আবরোধ করে এবং ১৫ জুলাই বায়তুল মুকাদ্দাসের ভিতরে প্রবেশ করে। সে সময় বায়তুল মুকাদ্দাসের গভর্নর ছিলেন ইফতেখারুদ্দৌলাহ, তিনি প্রানপন লড়াই করেছিলেন ক্রুসেডারদের সাথে। কিন্তু তাদের রসদ ও সৈন্য অগণিত হয়ায় তিনি ব্যার্থ হয়েছিলেন। পরে ক্রুসেডাররা নগরীতে ঢুকে সব মুসলিমদের হত্যা করে, তাদের নারীদের অত্যাচার করে, শিশুদের মাথা কেটে সেটা দিয়ে ফুটবল খেলে। মুসলিমরা আস্রয়ের জন্য মাসজিদুল আকসা ও অন্যান্য মাসজিদে যায় তারা ভাবে মাসজিদুল আকসা উভয়ের নিকট সম্মানিত হয়ায় তারা তাদের ছেড়ে দিবে। কিন্তু না ক্রুসেডাররা সেখানে ঢুকে মুসলিমদের হত্যা করে, তাদের রক্ত মাসজিদ গড়িয়ে গড়িয়ে বাইরে পরছিল, রক্তে খৃষ্টানদের ঘোরার পা ডুবে গিয়েছিল। খৃষ্টান ঐতিহাসিকদের মতে উদ্বাস্তু মুসলিমের সংখ্যা ছিল ৭০ হাজার।
সুলতান আইয়ুবি বায়তুল মুকাদ্দাসের সেই অবমাননার কাহিনী তার পিতা নাজমুদ্দিন আইউব থেকে শুনতেন , নাজমুদ্দিন তার পিতার কাছ থেকে শুনতেন। পরে সুলতান এই কাহিনী তার নিজের ছেলেদের বলতেন।
১১৮৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রবিবার মোতাবেক ৫৮৩ সনের ১৫ রজব সুলতান আইয়ুবি দ্রুত বায়তুল মুকাদ্দাস পৌঁছে যান, অবরোধ করেন বায়তুল মুকাদ্দাস। এদিকে খৃষ্টানরাও তাদের পবিত্র ভুমি ছাড়তে নারাজ। তারাও আমরন লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। সেখানকার প্রায় সব মুসলিমই বন্দি। তারা জেলের ভিতর থেকেই আজান আর তাকবীর ধ্বনি দিচ্ছেন। অনুরূপ খৃষ্টানরাও গির্জায় গান গাইছে ও প্রার্থনা করছে। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। দুই পক্ষই দুই পক্ষকে আহত নিহত করে চলছে। শহিদদের সংখ্যা গোনে সুলতান আইয়ুবি টাস্কি খেয়ে যান। পরে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে ৫৮৩ হিজরীর ২৭ রজব মোতাবেক ১১৮৭ খ্রিস্টাব্দ ২ অক্টোবর শুক্র বার সালাহুদ্দীন আইয়ুবি বিজয়ী বেশে বায়তুল মুকাদ্দাস প্রবেশ করেন। এটিই ছিল সেই রাত যেদিন আমাদের প্রিয় নবী রাসুল (সাঃ) বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে মিরাজে গমন করেন। :)
বায়তুল মুকাদ্দাস মুক্ত হয়ার পর সেখানকার মুসলিমরা প্রায় ৯০ বছর পর ক্রুসেডারদের অত্যাচার থেকে রেহাই পেল।
ইংল্যান্ডের সম্রাট রিচার্ড যাকে ''ব্লাক প্রিন্স'' বলা হত সে এর প্রতিশোধ নিতে ৫২০ যুদ্ধ জাহাজ ও অনেকগুলো মালবাহী বড় জাহাজ নিজে রোম সাগর আসে। তখনই ঝড়ের কবলে পরে প্রায় অনেক জাহাজ তলিয়ে যায়। যা বাকি থাকে তা দিয়েই সে বায়তুল মুকাদ্দাস আবার দখল করতে আসে। তখন তার সৈন্য ছিল ২লাখ।
সুলতান চাচ্ছিলেন তারা যেন আগে উপকূলীয় অঞ্চল আক্রা অবরোধ করে, এতে করে তাদের সেখানেই ব্যস্ত রেখে শেষ করে দিতে পারলে বায়তুল মুকাদ্দাস রক্ষা করা যাবে।
রিচার্ড যখন আক্রা আগমন করে তারও আগেই তার জোট ভুক্ত রাষ্ট্ররা আক্রা অবরোধ করে। রক্ত ক্ষয়ী ও দীর্ঘ যুদ্ধের পর সকলে মিলে প্রায় ৬ লাখেরও বেশি সৈন্য নিয়ে আক্রা দখল করে নেয়। এতে তারা দখলের পর আক্রার প্রায় ৩ হাজার নিরস্র মুসলিমের হাত পা বেধে তাদের উপর পিচাশের মত ঝাপিয়ে পরে হত্যা করে।
রিচার্ড আক্রা দখলের পর উপকূলীয় বাকি অঞ্চল আসকালান ও হিফা দখল করতে যায়, যেন সেগুলোকে দখল করে ক্যাম্প বানিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাস দখল করা সম্ভব হয়। কিন্ত তারা যেন সেটা করতে না পারে তার জন্য সুলতান আইয়ুবি আগেই সেখান থেকে জনগনকে সরিয়ে সেগুলোকে পোড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেন। পড়ে ক্রুসেডাররা সেখানে যেয়ে আর কিছু পায় নি। শেষে একসময় রিচার্ড অসুস্থ হয়ে পরলে সে যুদ্ধ ত্যাগকরে নিজ দেশে চলে যায়, আর বলে যায় সে আবার আসবে বায়তুল মুকাদ্দাস দখল করতে। কিন্তু পরে আর কেউ পারেনি বায়তুল মুকাদ্দাস দখল করতে। ......
কিন্তু না, ইসলামিক খিলাফতের শেষের দিকে যখন মুসলিম আমিররা ক্রুসেডারদের সাথে বন্ধুত্বের কথা বলে মূলত তাদের দাসত্বকে গ্রহণ করল। তখনই ক্রুসেডাররা আবারো তুচ্ছ ও সংকীর্ণমনা জাতীয়তাবাদের নীতিতে ইসলামিক রাষ্ট্রকে ভেঙ্গে টুকরা টুকরা করে দিল। আবারো ক্রুসেডাররা ফিলিস্তিনে ইহুদীদের প্রবেশের মাধ্যমে মূলত নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করল। সেখানে মুসলিমদের হত্যা করল, তাদের নিজ ভুমি থেকে ছাড়া করল, গঠন করল সেখানে ইসরাইল রাষ্ট্র, আর সেটা কতিপয় নাম ধারি মুসলিম শাসকদের কারনেই সম্ভব হয়েছিল।
সুলতান সালাহুদ্দীন আইউবি তার জীবনে দুটো ইচ্ছা করেছিলেন এক বায়তুল মুকাদ্দাস জয় করা আর দুই হজ্ব করা। যদিও তিনি প্রথম ইচ্ছা পুরন করতে পেরেছিলেন কিন্তু তার দ্বিতীয় ইচ্ছা অর্থের অভাবে পুরন হয়নি। মিসরি কাহিনীকার মুহাম্মদ ফরিদ আবু হাদীদ লিখেছেন, মৃত্যুর সময় সালাহুদ্দীন আইউবির মাত্র ৪৭ দিরহাম রূপা আর এক টুকরো সোনা ছিল। তার নিজস্ব কোন বাসগৃহ ছিল না। তিনি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে কোন অর্থ নিয়ে হজ্ব করতে চান নি।
১১৯৩ সালের ৪ মার্চে অবশেষে ইসলামের মহান নেতা সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবি ইন্তিকাল করেন। সেদিন সমগ্র ফিলিস্তিনের নারী-পুরুষ তাদের ঘর থেকে রাস্তায় বেরিয়ে তাদের সুলতানের জন্য মাতম করছিল। নগরীর অলিতে-গলিতে কান্নার রোল বয়ে যাচ্ছিল। আজও সেই কান্নার রোল শোনা যায় সেই ফিলিস্তিনের অলিতে গলিতে আজও তারা তাদের সেই সালাহুদ্দীন আইউবিকেই খুজছে ক্রুসেডারদের অত্যাচার থেকে তাদের মুক্তির জন্য।
অবশেষে ১৯২৪ সালের ৩ মার্চ ক্রুসেডাররা ইসলামের সর্বশেষ খিলাফত থাকা অঞ্চল তুরস্ক থেকেও রাষ্ট্রীয় ভাবে থাকা খিলাফতকে ধ্বংস করল। লর্ড কার্জন বলল, আমরা মুসলিমদের মেরুদণ্ড খিলাফতকে ধ্বংস করে দিয়েছি, তারা আর দাড়াতে পারবে না । তারা সেই সুলতান সালাহুদ্দীন আইউবির কবরে লাথি মেরে বলল, উঠো সালাহুদ্দীন, তোমার বায়তুল মুকাদ্দাসকে রক্ষা কর। ....... আর আমরা কি করলাম? পেরেছি কি সেই খিলাফতকে পুনঃ প্রতিষ্ঠা করতে? পেরেছি কি সেই বায়তুল মুকাদ্দাস কে রক্ষা করতে?
[রেফারেন্সঃ ইমানদীপ্ত দাস্তান ...... এনায়াতউল্লাহ আলতামাশ, প্রখ্যাত উর্দু উপন্যাসিক এর লিখা। বইটি ৮ খণ্ডে এবং ৮#২৪০= ১৯২০ পৃষ্ঠা সম্বলিত।]

0 on: " "