Monday, October 7, 2013

ফুটবলাধিকার

- No comments

"ফুটবলাধিকার"

by Nazmus Sakib
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

আমরা সবাই জানি ফুটবল খেলায় ১১ জন খেলোয়াড় থাকেন। এই ১১ জনের দায়িত্ব হল ১১ রকম। কোন একজনের দায়িত্ব অপরের চাইতে কম নয়। একজন গোলকীপারের জন্যে কোচের প্ল্যানিং থাকে একরকম। ডিফেন্ডারের জন্যে একরকম
, মিডফিল্ডারের জন্যে একরকম, স্ট্রাইকারের জন্যে একরকম। বেশিরভাগ সময়েই স্ট্রাইকাররা হয় স্কোরার। মিডফিল্ডাররা হয় গোল মেকার আর ডিফেন্ডার-গোলকীপারের কাজ হল গোল খাওয়া থেকে দলকে বাঁচানো। তাছাড়া ২ জন মিডফিল্ডার এর দায়িত্বও বেশিরভাগ সময় একই হয় না। কেউ রাইট উইং দেখে রাখে, কেউ লেফট উইং। স্ট্রাইকারের ক্ষেত্রেও একই। একজন স্ট্রাইকার রাইট উইং এ প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করেন,আরেকজন করেন লেফট উইং থেকে।


অন্যদিকে ৩-৪ জন ডিফেন্ডারের কাজও কিন্তু সবসময় এক হয়না। দেখা যায় রাইট সাইডের ডিফেন্ডারের কাজই হল প্রতিপক্ষের কোন বিশেষ ফরোয়ার্ডকে আটকে রাখা। আবার অনেক সময় সব ডিফেন্ডারই একসাথে এই দায়িত্ব পালন করে। আর গোলকীপারের কাজ হল ডি-বক্সেই ঘোরাফেরা করা আর গোলপোস্ট পাহারা দিয়ে দলকে গোল খাওয়া থেকে বাঁচানো।


কিন্তু যদি কোনদিন এমন হয়, যে গোলকীপার দাবি করে বসেন অন্যদের তুলনায় তাকে অধিকার বঞ্চিত করা হচ্ছে, তখন কেমন হবে? তিনি যদি বলেন, সবাই কী সুন্দর দৌড়াচ্ছে আর আমি হাবার মত এখানে দাঁড়িয়ে আছি? এটা তো চরম অন্যায়! আবার কোন ডিফেন্ডার যদি বলেন, এটা কিছু হল? মিড আর ফরোয়ার্ডরা কী চরম ভাব নিয়ে গোল দিতে যায়, আর আমরা আছি আরেকজনকে আটকানোর মত “নিচু” কাজে ব্যাস্ত। এটা তো আমাদের অধিকার লঙ্ঘন!


আবার ধরুণ ফরোয়ার্ড বলছেন, “ধুশশালা! এই কোচ তো বেজায় শয়তান! আমাকে সারাদিন দৌড়ের উপর রাখছে আর ঐ ব্যাটা গোলকীপার কি আরামসে গোলপোস্টে হেলান দিয়ে আমাদের দৌড়াদৌড়ি দেখছে। এটা তো চরম অন্যায়!”

এখন সত্যিই যদি বিভিন্ন পজিশনের খেলোয়াড়রা এই ধরণের দাবি তুলে বসেন, যে আমাদের ‘ফুটবলাধিকার’ লঙ্ঘিত হচ্ছে, আমরা সমান অধিকার পাচ্ছিনা, আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে, তাই আমরা খেলবোনা – তাহলে কেমন হবে?

যদি মিডফিল্ডার আর স্ট্রাইকাররা গোলের পর গোল করে যায়, আর গোলকীপার-ডিফেন্ডাররা এই বলে বসে থাকে যে তারা ফরোয়ার্ডদের মত সমঅধিকার পায়নি, তাহলে কিন্তু দলটি এক-দুইশ গোলের ব্যবধানে হারার কথা। আবার ফরোয়ার্ডরা যদি বলে তারা গোলকীপারের মত আরাম আয়েশে থাকতে পারেনা, তাই তারা খেলবেনা, তাহলে কোন ভাবেই দলের জেতার সম্ভাবনা নেই।

ইসলামে নারী-পুরুষের কর্তব্য ও দায়িত্ব অনেকটাই এই ফুটবলের ফর্মেশানের মত। নারীর দায়িত্ব এক, পুরুষের দায়িত্ব এক। কিন্তু কারো দায়িত্ব একইরকম নয়। দুজনের দায়িত্ব একই ধরনের নয়। কিন্তু ওজন করতে গেলে কারো দায়িত্ব কারো চাইতে কম নয়। একজন পুরুষ বা নারী যদি বলে তাদেরকে সমান দায়িত্ব বা অধিকার দেয়া হয়নি তাই তারা কাজ করবেনা, তাহলে পারিবারিক ও সামাজিক জটিলতা সৃষ্টি হতে বাধ্য। ফুটবলের একেকজন খেলোয়াড় একেকজনের পরিপূরক। কোন দলই চায়না একজনও লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ুক। গোলকীপারের কাজ স্ট্রাইকারের মত না। স্ট্রাইকারের কাজ গোলকীপারের মত না। কিন্তু একজনের কাজ আরেকজনকে দিয়ে হবেনা। কল্পনা করুন তো, গোলকীপার সাহেব ফাউল করে লাল কার্ড খেয়ে মাঠ ছাড়ছেন। তাহলে বেচারা ফরোয়ার্ডের কি অবস্থা হবে?

আবার ভেবে দেখুন, দুইজন স্ট্রাইকার কিংবা ৪ জন ডিফেন্ডার লাল কার্ড খেয়ে বেরিয়ে গেছেন, অবস্থাটা কি হবে খেলার? গোলকীপার সাহেব, যিনি নিজেকে দায়িত্বহীন আর বঞ্চিত ভাবতেন, এখন তার অবস্থা ও দায়িত্ব কি হবে?


ইসলামেও তেমনি নারীর কাজ আর পুরুষের কাজ পরস্পর পরিপূরক। নারী যদি তার নির্ধারিত কাজে “সমঅধিকার” লঙ্ঘিত হচ্ছে, এই অজুহাতে কাজ কর্মে ইস্তফা দিয়ে বসেন, কিংবা পুরুষ যদি “বেশি দায়িত্ব চলে এসেছে” বলে ঘরে বসে থেকে বউকে বাইরে পাঠিয়ে দেন, তবে অবস্থা হবে এই ফুটবল টীমের মত। হ য ব র ল।

‘সমফুটবলাধিকার’ এর নাম করে ইকার ক্যাসিয়াসকে যদি ফরোয়ার্ডে পাঠিয়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে গোললাইনে দাঁড় করিয়ে গোল বাঁচাতে দেয়া হয়, তবে রিয়াল মাদ্রিদের ম্যাচের ফলাফল কি হবে, তা সহজে অনুমেয়। তেমনি সমঅধিকারের নাম করে নারীর কাজ পুরুষকে করানো আর পুরুষের কাজ নারীকে করানোটাও হবে দায়িত্ব-সংকটের কারণ। এই ধরনের অদূরদর্শী দায়িত্ব বণ্টনের ফলে ফুটবল টীমের যেমন দফারফা অবস্থা হয়ে যাবার কথা, তেমনি আল্লাহ্‌ কর্তৃক নারী-পুরুষের ওপর অর্পিত দায়িত্বকে অদূরদর্শিতার সাথে EXCHANGE করা হলে, পারিবারিক, সামাজিক তথা গোটা পার্থিব জীবনেই বিপর্যয় নেমে আসতে বাধ্য।


ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে নারী-পুরুষের দায়িত্ব বন্টন আসলে ফুটবল টীমের মতই। এখানে একজনের দায়িত্বের সাথে অন্যের দায়িত্বের তুলনা চলেনা। বোকার মত দেখতে চাইলে একজনের দায়িত্ব ও অধিকার আরেকজনের চাইতে কম বলে মনে হতে পারে, কিন্তু কারো দায়িত্ব কমিয়ে দিয়ে আরেকজনের দায়িত্ব বাড়িয়ে দিলে কিংবা একজনের দায়িত্ব আরেকজনকে দিয়ে EXCHANGE করে দেখতে গেলেই বোঝা যায় প্রত্যেকের দায়িত্ব আসলে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামে একজন নারীর দায়িত্ব,একজন পুরুষের দায়িত্বকে পূর্ণতা দান করে। যেটা নারীর কাজ নয়, সেটা নারীকে করতে দিলে, কিংবা যেটা পুরুষের কাজ নয়, সেটা পুরুষকে করতে দিলে হিজিবিজি লেগে যেত বাধ্য। হ্যাঁ, অনেকেই বলতে পারেন যে এমন অনেক গোলকীপার আছেন যারা গোল করেছেন। হুম। কথা সত্য। কিন্তু ফুটবল ইতিহাস নিজেই বলে এইসব উদাহরণ হল বিচ্ছিন্ন উদাহরণ। মানুষ শুধুমাত্র “সাধারণ জ্ঞান” এর অংশ হিসেবেই এইসব গোলকীপারকে মনে রাখে। কিন্তু এত এত গোলকীপার গোল স্কোর করা স্বত্বেও আজ পর্যন্ত গোলকীপারের দায়িত্ব গোল বাঁচানোই রয়ে গেছে। স্ট্রাইকিং এ দেয়া হয়নি। তাই অনেক সময় আমরা নারীদের পুরুষদের সাথে মেলামেশা করে পুরুষদের দায়িত্ব সফলভাবে পালন করতে দেখলেও সেটা কখনই নারী-পুরুষের অধিকার EXCHANGE এর কারণ হতে পারেনা। গোলকীপারের মতই নারীর দায়িত্ব নারীর কাছেই থাকবে। এটাই আল্লাহ্‌ প্রদত্ত ফিতরা।


তাই যতদিন নারী-পুরুষ তাদের একে অপরের পরিপূরক হিসেবে না দেখে প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখবে, ইসলাম বিদ্বেষীরা তার সুযোগ নিয়ে তাদের কানে ‘সমঅধিকার’ নামক বিষ ঢালতে থাকবে, যা ধীরে ধীরে জন্ম দেবে এক লাগামহীন সমাজের, যা নারীর জন্যে কিংবা পুরুষের জন্যে, কারো জন্যেই কল্যান বয়ে আনবেনা।


ডাঙার প্রাণীকে পানিতে ফেলে, জলের প্রাণীকে ডাঙায় তুলে আনলে সাময়িক উথালপাথালের পরে উভয় প্রাণীই ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যায়।

আল্লাহ্‌ আমাদের হিদায়া দান করুন।


আল্লাহ্‌ সর্বজ্ঞানী

নাস্তিকতার অন্ধ বিশ্বাস

- No comments

নাস্তিকতার অন্ধ বিশ্বাস

 by মুক্তির পথিক

ইসলামের বুদ্ধিবৃত্তিক অবনমনের পর এবং ধর্মনিরপেক্ষতার উপর ভিত্তি করে পুঁজিবাদ এবং সমাজতন্ত্রের উত্থানের পর একটা বিশাল সময় ধরে তথাকথিত আঁতেল বুদ্ধিজীবীদের মুখে স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাসকে অন্ধ বিশ্বাস বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। এখনও সমাজতন্ত্রীরা স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাসকে আফিমতুল্য মনে করে, বিজ্ঞান কর্তিক স্রষ্টাকে আবিষ্কার করার ব্যর্থতা এবং বিবর্তনবাদ তাদের আত্মতৃপ্তির পালে হাওয়া দিয়েছিল। নিম্নে আমরা আলোচনা করার চেষ্টা করব যে, স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস অন্ধ বিশ্বাস, নাকি নাস্তিকতা অন্ধ বিশ্বাস। এইখানে clear হয়ে নেয়া ভাল যে, স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণিত হলে, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র, ফ্রীডম, গণতন্ত্র প্রভৃতি ধারণাগুলো বুদ্ধিবৃত্তিক বৈধতা হারাবে। অর্থাৎ স্রষ্টা প্রদত্ত জীবনব্যবস্থার বাইরে অন্য সকল জীবনব্যবস্থা বুদ্ধিদীপ্ত মনের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।
প্রথমে, আমরা দেখব যে, science or scientific way দিয়ে স্রষ্টাকে প্রমান করা কতটা যৌক্তিক। বস্তুত, science শুধুমাত্র ঐসব বিষয় নিয়ে মতামত দিতে পারে, যেইসব বিষয় মাপার বা পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা তার আছে। উদাহরণস্বরূপ, ১ টা ৫ ফুট লম্বা টেবিল যে ৫ ফুট, এইটা science তখনি বলতে পারবে, যখন তার কাছে ফুট এর সংজ্ঞা জানা থাকবে। কিন্তু টেবিলকে মাপতে পারলেও কোন ব্যক্তি এটা বানিয়েছে, বা আদৌ এটা কেউ বানিয়েছে কিনা, কিংবা সে দেখতে কেমন, কি খায়, কি পরে এইসব প্রশ্নের উত্তর science দিতে পারেনা। science শুধু বস্তুকে পর্যবেক্ষণ করে তার বৈশিষ্ট্য আমাদেরকে জানাতে পারে। কিন্তু বৈশিষ্ট্যের কারণ জানাতে পারেনা। যেমন ২ টা H ১ টা o এর সাথে মিলে পানি তৈরি করে, কিন্তু কেন পানিই তৈরি করল, আগুন কেন তৈরি করলনা, এই ব্যপারে science নীরব। সে শুধু বস্তুর গুনাগুন বা বৈশিষ্ট্য বলতে পারে, ততটুকুই যতটুকু মাপার ক্ষমতা তাকে দেয়া আছে। তাই এই সীমিত science কে দিয়ে স্রষ্টাকে খুঁজে না পেলেই যে তাকে অস্বীকার করতে হবে, এটা হাস্যকর।
দ্বিতীয়ত, অনেকেই logical method ব্যবহার করে স্রষ্টার অস্তিত্ব বুঝার জন্য (যেমন Zakir Nayek)… কিন্তু এর দুর্বলতা হল যে, logic সবসময় ১ টা premise এর উপর ভর করে চলে। premise যদি ভুল হয় তাহলে, logic এর answer ভুল হবে। যেমন ধরুন, কেউ বলল, “ কাঠ আগুনে পুড়ে, রফিকের নৌকাটি কাঠের তৈরি, তাই ওটাও আগুনে পুড়বে”......... এই কথাটি মিথ্যা হবে যদি, নৌকাটি পানিতে ডুবানো থাকে। এখন logic সবসময় যে premise নিয়ে কাজ করে তা যে comprehensive হবে তার কোন মানে নেই। অন্য একটা উদাহরণ দেই, “বাঙ্গালীরা দুর্নীতিবাজ, ফারযানা একজন বাঙ্গালী, সুতরাং সেও দুর্নীতিবাজ”...... এই কথাটা সত্যও হতে পারে আবার মিথ্যাও হতে পারে। কোন guarantee নাই। তাই logic দিয়ে স্রষ্টাকে প্রমান করার প্রমান যেমন আছে, অপ্রমান করার প্রমাণ ও আছে। logical method চূড়ান্ত ও সুনিদৃস্ট কোন সিদ্ধান্ত দেয়না।
এইবার আসি চিন্তার ঐ পদ্ধতিতে যা মানবজাতি সার্বজনীনভাবে তার জীবনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যবহার করে থাকে। আর তা হল, rational method. এই পদ্ধতিতে মানুষ তার চারপাশের বস্তুসমুহকে তার ইন্দ্রিয় দ্বারা উপলব্ধি করে। সেই বস্তু সম্পর্কে তার কাছে কিছু previous information থাকে। সেই previous information কে use করে সে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। সব মানুষই এই পদ্ধতিতে চিন্তা করে থাকে। scientific method আর logical method কে rational method এর শাখা বলা যেতে পারে। মানুষ কিভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহন করে, তার একটা উদাহরণ দেই। যখন আপনার দরজায় কেউ knock করে, তখন আপনি কিন্তু মাপতে বসেন না যে, কত frequency তে sound wave টা আসল, তারপর হিসাব করেন যে একজন মানুষ কত জোরে বা কত frequency তে আঘাত করতে পারে, তারপর দরজা খুলেন। না, আমরা কেউই এইভাবে সিদ্ধান্ত নিইনা। বরং দরজায় knock করলে তা আমরা ইন্দ্রিয় (শ্রবণ) দ্বারা উপলব্ধি করি, আমাদের মস্তিষ্কে এর ব্যপারে previous information আছে যে, knock করা মানে কেউ এসেছে, এবং তখন আমরা দরজা খুলার সিদ্ধান্ত নিই। তার মানে দাঁড়াল যে, rational method এ সিদ্ধান্ত নিতে যে কয়টা জিনিষ লাগে, তা হল
১. বাস্তবতা
২.ইন্দ্রিয় দ্বারা বাস্তবতাকে উপলব্ধি করা
৩.বাস্তবতা সম্পর্কে previous information
4.previous information এর সাথে link করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অর্থাৎ sound mind
হুমমমমমমমম, মনের মধ্যে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জেগেছে, স্রষ্টার কোন বাস্তবতা আমাদের সামনে নেই যে আমরা তাকে ইন্দ্রিয় দ্বারা উপলব্ধি করব, তাহলে স্রষ্টার অস্তিত্ব এই পদ্ধতিতে বুঝব কিভাবে??............... ১০০% correct. আপনার দরজায় নক করলে আপনি দরজার বাইরে কারো অস্তিত্ব বুঝতে পারেন, কিন্তু যিনি নক করছে, তিনি কি পুরুষ না মহিলা, ফর্সা নাকি কালো তা কিন্তু বুঝার উপায় নেই। কিন্তু তার অস্তিত্ব বুঝা যায়। আমাদের সামনে স্রষ্টার বাস্তবতা না থাকলেও সমস্যা নেই। আমাদের চারপাশে যে বস্তুসমুহ আছে, যাদেরকে আমরা ইন্দ্রিয় দ্বারা উপলব্ধি করতে পারি, চলুন সেগুলোকে rational study করে দেখি। আমরা আমাদের আশপাশের প্রকৃতিকে পর্যবেক্ষণ করব, এবং দেখব আদৌ কোন স্রষ্টার প্রয়োজন আছে কিনা। এখানে মনে রাখতে হবে এই পদ্ধতিতে আমরা দেখব মহাবিশ্বের স্রষ্টা আছে কিনা, কিন্তু তিনি দেখতে কেমন, কিভাবে কাজ করেন তা rationally জানা সম্ভব নয়, কারণ উনি আমাদের ইন্দ্রিয়ের বাইরে, তাকে জানতে হলে একটা পদ্ধতিই আছে, আর তা হল উনি যদি নিজে থেকে আমাদেরকে জানান (পরে আলোচনা করা হবে)।
আমাদের চারপাশের প্রত্যেকটি বস্তুর মধ্যেই ২ টি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এরা প্রত্যেকেই সীমাবদ্ধ এবং নির্ভরশীল। যেমন, গাছ আকার আকৃতি, দ্বারা সীমাবদ্ধ এবং নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য সূর্য, পানি এগুলর উপর নির্ভরশীল। মানুষ নানা দিক দিয়ে সীমাবদ্ধ এবং নির্ভরশীল। আলো তরঙ্গদৈর্ঘ্য, গতি দ্বারা সীমাবদ্ধ, নির্ভরশীল উৎস কিংবা রুপান্তর প্রক্রিয়ার উপর। প্রত্যেকটি বস্তু নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য অন্য কিছুর উপর নির্ভরশীল। এবং এরা কেউই নিজেরা নিজেদের অস্তিত্তের জন্য দায়ী নয়। যদি নিজেরা নিজেদেরকে অস্তিত্তে আনত তাহলে সীমাবদ্ধতা আর দুর্বলতার উর্ধে থাকত।
যদি ধরে নেই যে, নির্ভরশীলতায় একে অপরের উপর নির্ভরশীল এবং কোন স্রষ্টার দরকার নেই, তাহলে আদিকাল থেকে চলে আসা ঘটনা বা বস্তুসমুহের সরুপ দাঁড়ায়,
…..y
এইটা অসম্ভব, কারণ কোন শুরু না থাকলে, v, w, x, y এদের কারো অস্তিত্তে আসা সম্ভব নয়। একটা উদাহরণ দেই। আপনি একটা ক্রিকেট দলের ১০ নাম্বার ব্যাটসম্যান। আপনি কয়জনের পর নামবেন? ৯ জনের পর। আপনি কোন দলের ১০০ তম ব্যাটসম্যান হলে নামবেন ৯৯ জনের পর। আপনার দলে যদি অসীম সংখ্যক ব্যাটসম্যান থাকে, তাহলে আপনি কবে নামবেন? কখনই নামবেন না, কারন আপনার পূর্বে অসীম সংখ্যক ব্যাটসম্যান আছে (অর্থাৎ শুরুও নাই, শেষ ও নাই)... আপনার আগেরজনের পূর্বেও অসীম সংখ্যক, তার আগের জনের পূর্বেও অসীম সংখ্যক............ সুতরাং কোন ব্যাটসম্যানই নামতে পারবেনা, কারণ প্রত্যেকের পূর্বেই আছে অসীম সংখ্যক...... অর্থাৎ কোন শুরু যদি না থাকে তাহলে কেউই exist করেনা। অসীম এই শব্দটা শুধু mathematical ব্যপারে use করা হয়, বাস্তবতায় কোন কিছুই অসীম নয় (আমাদের চেনা বাস্তবতায়)। সুতরাং একটা শুরু আছে...আরেকটা উদাহরণ দেই, আপনাকে যদি বলি ১০ থেকে শুরু করে ৯৯ পর্যন্ত আসেন, আপনি গুণতে পারবেন, কিন্তু যদি বলা হয়, অসীম থেকে শুরু করে ৯৯ পর্যন্ত গুনেন, it’s impossible ….. আপনি শুরুই করতে পারবেন না এবং ৯৯ তেও আসতে পারবেন না। ৯৯ তে আসতে হলে শুরু আপনাকে করতেই হবে। সুতরাং মহাবিশ্বের শুরু আছে, এবং সে নিজে নিজে তা শুরু করেনি।
wait…. Wait….. wait…. The atheists still didn lose hope….. তারা বলছে zyxwvz অর্থাৎ এটা একটা বৃত্তাকার চক্র........(NICE!!!) অর্থাৎ Z থেকে শুরু হয়ে আবার Z এ এসে মিশেছে। এবং Z হল INITIATOR. অর্থাৎ চক্রটাকে ছোট করলে হয় যে Z Y….(প্রথম আর শেষ বস্তু)... সুতরাং z, y এর উপর নির্ভরশীল, আর y, z এর উপর নির্ভরশীল। কিন্তু z না থাকলে তো y existence এ আসতে পারেনা, আবার y না থাকলে zআসতে পারেনা। তাহলে হয় দুইজন একইসাথে exist করে অথবা দুইজনই তাদের অস্তিত্বে আসার জন্য এই বৃত্তের বাইরে তাদের কোন স্রষ্টার উপর নির্ভরশীল।
দুইজন একসাথে exist করলে সমস্যা আছে। তাহলে পৃথিবীর তথা মহাবিশ্বের সব ঘটনাকে একসাথে exist করতে হবে... অর্থাৎ আমি , আমার দাদা, আমার দাদার দাদার দাদার দাদা, আমার নাতি, আমার নাতির নাতির নাতি সবাইকে একসাথে exist করতে হবে। কিন্তু আমরা বাস্তবতায় এটা দেখিনা। উপরন্তু z যেহেতু y এর উপর নির্ভরশীল, সেহেতু Y এর এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা INITIATOR z এর নাই। তার মানে y, তার অস্তিত্তের জন্য z এর উপর নির্ভরশীল নয় (বিবর্তনবাদ খাইল বাঁশ)... একইভাবে z এর কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যার কারণ y নয়। তাই z ও y এর উপর নির্ভরশীল নয়। এরা প্রত্যেকেই এদের অস্তিত্তের জন্য এদের চক্রের বাইরের কারো উপর নির্ভরশীল।
সুতরাং মহাবিশ্ব নিজেকে নিজে অস্তিত্তে আনেনি, এবং এর পুর অস্তিত্ব অন্য কারো উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ মহাবিশ্বের একজন স্রষ্টা আছে। এবং সেই স্রষ্টা মহাবিশ্বের উপর dependentনন, কারণ তাহলে তিনিও চক্রের মধ্যে ঢুকে পড়েন এবং তিনিও অস্তিত্তের জন্য অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। সুতরাং আমরা সিদ্ধান্তে আসলাম এই মহাবিশ্বের অস্তিত্তের জন্য একজন স্রষ্টা থাকা অপরিহার্য। স্রষ্টা ছাড়া আমাদের অস্তিত্ব অসম্ভব। সুতরাং পরের আলোচনা হতে পারে,
Who is the Creator of the Creator…..

মুসলিম উম্মাহ্‌র অধঃপতনের বিশ্লেষণ

- No comments
মুসলিম উম্মাহ্‌র অধঃপতনের বিশ্লেষণ
ভূমিকা

অধঃপতন উন্নতির বিপরীত। উন্নতি = বুদ্ধিবৃত্তিক উত্থান। তারাই একটি উন্নত জাতি যারা সমাজে সকল সমস্যার সমাধানের জন্য একটি দর্শন বা আদর্শকে চিন্তার ভিত্তি হিসেবে বেছে নেয় এবং তাতে ঐক্যবদ্ধ থাকে। অর্থাৎ একটি উন্নত সমাজের মানুষেরা তাদের সকল প্রবৃত্তিগত ও জৈবিক চাহিদা মেটানোর জন্য জীবন সম্পর্কে একটি আদর্শের উপর ভিত্তি করে চলে, এই আদর্শটি আবার একটি বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থকে। এটাই উন্নত সমাজ, কেননা এটি একটি যুক্তিসঙ্গত (Rational) ও যাচাই বাছাইকৃত (Justified) মৌলিক বিশ্বাসের উপর সংগঠিত এবং সমাজের প্রতিটি ধ্যান-ধারণাই এই মৌলিক বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। অতএব, সেই সমাজই অধঃপতিত, যা কোন মৌলিক বিশ্বাসকে তার সকল চিন্তার উৎস হিসেবে বেছে নেয় না, অথবা তাতে ঐক্যবদ্ধ থাকেনা।

বুদ্ধিবৃত্তিক উত্থান

কোনও জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক উত্থান ঘটতে পারে দু'টি বিষয়ে ঐক্যমতের ভিত্তিতে। বিষয়ে দু'টি হলো:-

১. কোন একটি আদর্শের মূল বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা।
২. রাষ্ট্রের সকল মতবিরোধ ঐ মূল বিশ্বাসের ভিত্তিতে সমাধান করা যাতে জনগণের মাঝে ঐক্য টিকে থাকে।

মূল বিশ্বাসের উপর জাতিকে ঐক্য:

উন্নত সমাজের একটি সুন্দর উদাহরণ হচ্ছে মদীনা। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে মদীনার সমাজ আওস, খাযরাজ ও ইহুদীদের মাঝে তিন ভাগে বিভক্ত ছিল। তাদের পারস্পরিক স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণে সেখানে যুদ্ধ-কলহ লেগে থাকত এবং তারা ছিল একটি দুর্বল জাতি। ইসলাম গ্রহণের পর তারা সমাজের সকল ধ্যান-ধারণা ও সমস্যা সমাধানের মূলভিত্তি হিসেবে ইসলামী জীবনাদর্শকে বেছে নেয়। যদিও ইহুদীরা অনিচ্ছাসত্ত্বে তা মেনে নেয় কিন্তু সামগ্রিকভাবে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের বিষয়ে সকলেই ঐক্যবদ্ধ থাকে। সমাজের পারস্পরিক স্বার্থগুলোকে তারা ইসলাম অনুযায়ী হালাল হিসেবে গ্রহণ করে অথবা হারাম হিসেবে প্রত্যাখ্যান করে।

যদিও সে সমাজে মুনাফিকেরা ছিল, তবুও কেউ কখনও ইসলামের মূল বিশ্বাস ও তার উপযোগিতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেনি। ফলে মুনাফিকেরা যখন 'মসজিদে দিরার' প্রতিষ্ঠা করে ইসলামের মূল বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করে, তখন রাষ্ট্র এর সমুচিত জবাব দেয় এবং 'মসজিদে দিরারকে' ধ্বংস করে। রাসূল (সাঃ) জীবদ্দশায় মুসলিম উম্মাহ্‌র অভ্যন্তরে ইসলামের মূল বিশ্বাস নিয়ে নূন্যতম সন্দেহের নিদর্শন পাওয়া যায়নি। অতএব সেসময় মুসলিমদের অধঃপতনের প্রশ্নই আসে না। উপরন্তু ইসলামের মূল বিশ্বাসে ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় মুসলিম উম্মাহ্‌ আরবের বর্বর জাতি থেকে অত্যন্ত দ্রুত শক্তিশালী একটি জাতিতে পরিণত হয়েছিল।

সমাজের মতবিরোধ নিরসনে মৌলিক আদর্শের ভূমিকা

রাষ্ট্র যখন সমাজের পারস্পরিক স্বার্থ নির্ধারণকারী মৌলিক বিশ্বাসকে সংরক্ষণ, প্রতিষ্ঠা ও প্রচার করে তখন কোনও কোনও ক্ষেত্রে কিছু লোক অসন্তুষ্ট হলেও রাষ্ট্রীয় বিধি-নিষেধকে সকলেই মেনে নেয়। ফলে সমাজে কখনও কোনও বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে জনগণ তার মৌলিক বিশ্বাস, জীবনাদর্শ এবং মূল্যবোধের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ থাকে। জনগণ সরকারকে এই মৌলিক বিশ্বাসের সংরক্ষক হিসেবে নিয়োগ করে।

মৌলিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে মতবিরোধ নিরসন করে এমন সমাজের উদাহরণ:

১৮৬১ সালে আমেরিকার অভ্যন্তরীণ বিভক্তির কারণে গৃহযুদ্ধ (Civil War) শুরু হয় যা কিনা তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ ছিল। প্রায় ৬,২০,০০০ সৈন্য এতে নিহত হয় এবং অসংখ্য সাধারণ মানুষ আহত হয়। আব্রাহাম লিংকন এসে সকল জাতিগুলোকে গণতন্ত্রের মূল বিশ্বাসের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করে। এই ঐক্যের ঠিক পরপরই আমেরিকা বিশ্বের রাজনীতেতে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্ররূপে আবির্ভূত হয়। আজ পর্যন্ত তারা গণতন্ত্রকে তাদের সকল মতবিরোধ সমাধানের উৎস হিসেবে মেনে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আছে।

৯/১১ এর পর মার্কিন সরকার যখন আফগানিস্তান আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন আমেরিকান জাতির মাঝে বড় কোনও বিভক্তি দেখা দেয়নি, বরং তারা রাষ্ট্রের দেয়া সিদ্ধান্তের প্রতি ঐক্যবদ্ধ ছিল। এমনকি সাম্প্রতিক নির্বাচনী প্রচারণাতেও বারাক ওবামা ও ম্যাককেইন দুজনই ইসরাইলকে অবৈধ সমর্থনের ব্যাপারে একমত রয়েছেন। দুজনই ইরাক যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একমত, একজন ভাবছেন এই দখলদারীত্ব দীর্ঘসময় থাকবে, অপরজন ভাবছেন তুলনামূলকভাবে কিছুটা দ্রুততর হবে। দুজনই আফগানিস্তানে দখলদারীত্ব টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে একমত।

মতবিরোধ নিরসনে মৌলিক কোন বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে না এমন সমাজের উদাহরণ:

- ১৯৪৫ সলে জোসেফ টিটো যুগোস্লভিয়ায় ঐ অঞ্চলের সার্বিয়ান, ক্রোয়েশিয়ান, বসনিয়ান ও অন্য জাতিগুলোকে একত্রে শাসন করেন। তিনি তাদেরকে সামাজতন্ত্রের কথা বললেও, প্রত্যেক জাতির জাতীয়তাবাদ বহাল রাখেন এবং তাদেরকে পারস্পরিক স্বার্থের সমঝোতার ভিত্তিতে শাসন করেন। কিন্তু ঐ অঞ্চলের জাতিগুলো কখনই সমাজতন্ত্রের মোলিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয়নি। ফলে সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পরপরই এই জাতিগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত শুরু হয়ে যায় যা আজোবধি চলছে।

- বাংলাদেশে ১/১১ এর আগে ও পরে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলাও ঐ একই কারণে ঘটেছে। এদেশের পুরো জাতি বিএনপি ও আওয়ামীলীগে বিভক্ত হয়ে আছে। পুরো দেশবাসী কোন একটি মৌলিক জীবনাদর্শকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরেনি। ফলে এদেশে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা (Anarchy) এখনও চলছে।

কখন একটি জাতির অধঃপতন ঘটে

অতএব রাষ্ট্রের ভিত্তি হচ্ছে একটি মৌলিক বিশ্বাস যা থেকে একটি জীবনাদর্শ আসে এবং যা সমাজের সব ধরণের পারস্পরিক স্বার্থকে সংজ্ঞায়িত করে এবং তাকে প্রতিষ্ঠিত করে। যে রাষ্ট্র তার মৌলিক বিশ্বাসের প্রতি যতবেশী দৃঢ় ও ঐক্যবদ্ধ সে রাষ্ট্র তত বেশী শক্তিশালী।

যদি শক্তিশালী জাতি বলতে আমরা এমন একটি জাতিকে বুঝি যে প্রতিটি সমস্যার সমাধান করে তার মূল বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে, তবে অধঃপতিত জাতি বলতে আমরা সে জাতিকেই বুঝবো যে সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে তার মৌলিক বিশ্বাসের উপযোগিতার উপর সন্দেহ পোষণ শুরু করে।

সমাজের এই অধঃপতন দুইভাবে ঘটতে পারে।

প্রথমত : কোন আন্দোলন বা অন্য কোন আদর্শিক রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ আসলে অধঃপতন ঘটতে পারে।
দ্বিতীয়ত : সমাজের যে কেউ মূল বিশ্বাসকে প্রশ্ন করা শুরু করলেই অধঃপতন ঘটে না। যেমন আবদুল্লাহ্‌ ইবনে উবাই ইবনে সালুল ইসলামকে মেনে না নিলেও সমাজে এর প্রভাব পড়েনি। আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে কোনও কমিউনিষ্টপন্থীর মতামত মার্কিন রাষ্ট্র পরিচালনায় কোনও ভূমিকা রাখে না।

সমাজে যারা বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবে কাজ করেন যেমন - বুদ্ধিজীবি, রাজনৈতিক দল বা কোনও রাজনীতিবিদ, তারা যদি সমাজের মূল বিশ্বাসের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়ে প্রশ্ন করা শুরু করেন তখন তার প্রভাব সমাজে পড়ে। অর্থাৎ সমাজের প্রভাবশালী লোকেরা যখন রাষ্ট্রের মূল ভিত্তিকে নিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করে তখনই ঐ জাতি অধঃপতনের মুখে পড়ে।

মুসলিম উম্মাহ্‌র অধঃপতন

আলী (রা.) ও মু'আবিয়া (রা.) এর বিরোধকাল:

মু'আবিয়া (রা.) ও আলী (রা.)-এর বিরোধকালে ইসলামের মূল বিশ্বাস, আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার একত্ববাদ বা ইসলাম কি যুগোযোগী কিনা - এ ধরণের কোনও মৌলিক বিষয়ে তাদের মাঝে মতানৈক্য হয়নি। তারা খলীফার বিশেষ একটি বিষয়ে নির্দিষ্ট একটি আহকাম নিয়ে বিরোধের মুখোমুখি হন। উসমান (রা.) এর হত্যার বিচার ও খলীফা নির্বাচনের মাঝে কোনটি আগে হবে তা নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। মু'আবিয়া (রা.) এর মতামত ছিল আগে উসমান (রা.) এর হত্যাকারীর বিচার করতে হবে, তিনি আলী (রা.) কে খলীফা হিসেবে বাই'আত দিতে অস্বীকৃতি জানান। আলী (রা.), পক্ষান্তরে, খলীফা নির্বাচন ও হত্যাকারীর বিচারের বিষয় দুটিকে আলাদা দুইটি বিষয় হিসেবে বিবেচনা করেন যা কিনা সঠিক ছিল। ফলে মু'আবিয়া (রা.) এর বাই'আতের অস্বীকৃতিকে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে দেখেন। এখানে লক্ষণীয় যে, খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা বা ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস নিয়ে তাদের মাঝে কোনও প্রশ্ন উঠেনি। ফলে রোমনরা যখন মু'আবিয়া (রা.) কে সাহায্যের আহ্বান করে, তখন তিনি কেবল তা প্রত্যাখ্যানই করেননি বরং এই বিরোধ শেষে রোমানদের সাম্রাজ্য ধ্বংস করে তা ইসলামের পতাকাতলে নিয়ে আসার বার্তা পাঠিয়েছিলেন। যদিও এটা বড় ধরণের একটি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ছিল, তথাপি ইসলামের মূল বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্র পরিচালনা নিয়ে উম্মাহ্‌র মাঝে কোনও প্রশ্ন উঠেনি। অতএব, এসময়ে মুসলিম উম্মাহ্‌র অধঃপতন ঘটেনি।

ইয়াজীদ এর খলীফা মনোনয়ন:

ইয়াজীদকে খলীফা হিসেবে বাই'আত দেয়ার বিষয়টি একটি ভুল ইজতিহাদ ছিল। এই ইজতিহাদ বায়াত প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে ফেলে, যার প্রভাব পরবর্তিতে ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই। যাই হোক, এটা ছিল একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে ভুল। কিন্তু ইসলামের মূল বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্র পরিচালনা নিয়ে তখন উম্মাহ্‌র মাঝে কোন সন্দেহ দেখা দেয়নি। অর্থাৎ সে সময়ও উম্মাহ্‌র কোনও অধঃপতন ঘটেনি।

ইজতিহাদের দরজা বন্ধ করা:

হিজরী চারশত সালের দিকে 'আল কাফফাল' ইজতিহাদ প্রক্রিয়া বন্ধ করার ফতোয়া ঘোষণা করেন। এতে যে কোন নতুন বিষয়ের উদ্ভব হলে অথবা অন্য কোন আদর্শ থেকে আঘাত আসলে করণীয় বিষয় নির্ধারণে ইসলামের মূল উৎসে ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।

এই প্রক্রিয়া বন্ধ হওয়ার পর সর্বত্র পূর্ববর্তী মুজতাহিদগণ কর্তৃক ইজতিহাদকৃত ফতোয়াগুলো লিপিবদ্ধ করে পুস্তকাকারে সংরক্ষণের প্রবনতা দেখা যায়। যেমন উসমানী খিলাফতকালে হানাফি মাযহাবের ফতোয়াগুলো লিপিবদ্ধ করা হয় এবং উম্মাহ্‌ এর বাইরে ইজতিহাদ করা থেকে দূরে সরে আসে। উল্লেখ্য এ অঞ্চলে মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব ইসলাম প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট থাকলেও তার শাসনামলেই হানাফি মাযহাবের সব হুকুমগুলোকে 'ফতোয়া-ই-আলমগীরি' গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা হয়।

ইজতিহাদ বন্ধ করার উদ্দেশ্য ছিল মূলত দু'টি।

প্রথমত : উম্মাহ্‌ ইজতিহাদের বিষয়ে নিয়মনীতি মানার কঠোরতার বিষয়ে অসতর্ক হয়ে পড়েছিল, ফলে খুবই দুর্বল ধরণের ইজতিহাদ করা হচ্ছিল।

দ্বিতীয়ত : পূর্ববর্তী ফকীহ্‌গণ এত ব্যাপক ও সুনির্দিষ্ট বিষয়ে ইজতিহাদের বিশাল জ্ঞানভান্ডার রেখে গিয়েছিলেন যে অনেকের ধারণা ছিল ভবিষ্যতে সকল পরিস্থিতির জন্যই হয়তো ইজতিহাদ করা হয়ে গেছে।

এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে উম্মাহ্‌ তখনও অধঃপতিত হয়ে পড়েনি। কেননা উম্মাহ্‌ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন জীবনদর্শকে বেছে নেয়ার জন্য ইজতিহাদ করা বন্ধ করেনি। উম্মাহ্‌র জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইসলামকে সমস্যার সমাধানের উৎস হিসেবে ব্যবহার করেছে, ইসলামের মূল বিশ্বাসকে নিয়ে সন্দেহ করার প্রশ্নই আসেনি।

উসমানি খিলাফতকাল:

উসমানী খিলাফতের শুরুর দিকে মুসলিম সেনাবাহিনী দূর্দমনীয় একটি শক্তি ছিল। ইউরোপিয়ানরা সে সময় সুলায়মান আল কানুনীকে 'সুলায়মান দি ম্যাগনিফিসেন্ট' নামে আখ্যায়িত করত। কিন্তু আমরা যদি একটু গভীরভাবে লক্ষ্য করি তবে দেখতে পাব যে, মুসলিম উম্মাহ্‌র মাঝে তখন অনেকগুলো উলাইয়া (প্রদেশ) ছিল। এসব উলাইয়াগুলো অনেকটা স্বাধীন ও বিচ্ছিন্ন ছিল। উসমানী খিলাফত কর্তৃক ইউরোপ বিজয়কে প্রথম দিকে সাহাবা (রা.) কর্তৃক আরব বিজয়ের সাথে তুলনা করা যায় না। সাহাবারা (রা.) বিভিন্ন অঞ্চল বিজয়ের সাথে সাথে সে অঞ্চলের জনগণের মাঝে ইসলামের মূল বিশ্বাস প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলেন। ফলে খিলাফত ধ্বংসের পর আজও আরব জাতিতে ইসলামের মূল বিশ্বাস অটুট আছে। রাজনৈতিকভাবে ইসলামী শাসন না থাকলে আরবের জনগণ আজও জীবনাদর্শ হিসেবে ইসলামকে প্রত্যাখ্যান করেনি।

পক্ষান্তরে উসমানী খিলাফত ইউরোপ বিজয়ের পর কেবলমাত্র সামরিক শক্তিতে নিজেদেরকে শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগী ছিল। ইসলামের মূল বিশ্বাস ইউরোপে প্রচার ও প্রতিষ্ঠার বিষয়ে এবং সে অঞ্চলের জনগণকে এর ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে তাদের উল্লেখযোগ্য কোন প্রচেষ্টা ছিল না। ফলে খিলাফত ধ্বংসের পর এসব অঞ্চলের বেশিরভাগ রাষ্ট্রই ইসলামী জীবনাদর্শ পরিত্যাগ করে।

এ অঞ্চলেও একই ঘটনা ঘটেছিল। ভারত উপমহাদেশে মুসলিম শাসকেরা রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায় থাকলেও এ অঞ্চলের সাধারণ জনগণকে ইসলামের মূল বিশ্বাসে ঐক্যবদ্ধ করে আদর্শিক জাতিতে পরিণত করার উল্লেখযোগ্য কোনও চেষ্টা তারা করেননি। ফলে হিন্দু ও মুসলমানদের মাঝে বিভেদ সমাজে সুপ্ত অবস্থায় ছিল। একমাত্র আওরঙ্গজেব তার শাসনামলে এব্যাপারে কিছুটা সচেষ্ট হন। কিন্তু বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহ্‌র অধঃপতনের কারণে তিনি ইসলামের ভিত্তিতে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় ততটা সফল হতে পারেননি। পরবর্তীতে ব্রিটিশরা এ অঞ্চল জয় করার জন্য হিন্দু-মুসলিম বিভেদকে ব্যবহার করে, যা কিনা 'ডিভাইড এন্ড রুল' নামে পরিচিত। বিট্রিশ শাসনামলে এ অঞ্চলে মুসলিমরা সাধারণভাবে শোষিত ছিল, কিন্তু হিন্দুরা অনেক বেশী পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিল। সেই জাতিগত বিভেদ থেকে এখনকার ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সৃষ্টি। অর্থাৎ এ অঞ্চলে কোন ধরণের ঐক্য কখনই প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

এখানে উল্লেখ্য যে, যদিও সামরিক দিক থেকে ইউরোপের তুলনায় উসমানী খিলাফত শক্তিশালী ছিল, তথাপি মুসলিম উম্মাহ্‌ ভুল মাপকাঠি দিয়ে ইউরোপের সাথে নিজেকে তুলনা করত। তারা কেবল সামরিক শক্তিতে ইউরোপের চেয়ে এগিয়ে থাকার দিকে মনোযোগী ছিল, কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তিতে নিজেদের উৎকর্ষ সাধনে সচেষ্ট ছিল না। যাই হোক, উসমানী খিলাফতের শুরুকে আমরা অধঃপতন বলতে পারি না। কেননা রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসেবে ইসলামের মূল বিশ্বাসকে নিয়ে তাদের মাঝে তখনও কোনও প্রশ্ন ছিল না।

শিল্প বিপ্লব:

শিল্প বিপ্লবের পর পুঁজিবাদী আদর্শে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইউরোপের জাতিগুলো সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেক উন্নতি লাভ করে। তাদের সমাজের এই অগ্রগতি মুসলিম উম্মাহ্‌র প্রভাবশালীদের মাঝে আদর্শিক আঘাত হানে। তারা রাষ্ট্রের ভিত্তি ইসলাম হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করে। এ সময় মুসলিম উম্মাহ্‌র রাজনৈতিক পরিমন্ডলে পশ্চিমাদের সংবিধান নিয়ে আলোচনা শুরু হয় এবং ইসলামের যুগোপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। ইসলাম সংস্কারের দাবীতে অনেক আন্দোলনই তখন দানা বেঁধে উঠে। অনেকে পশ্চিমা সংবিধানের বিভিন্ন অংশ মুসলিম সমাজেও বাস্তবায়নের চেষ্টা চালায়। এটাতেই মুসলিম উম্মাহ্‌র অধঃপতনের লক্ষণ প্রকাশ পায়। পুঁজিবাদী আদর্শের পক্ষ থেকে যখন এই চ্যালেঞ্জ আসে তখন মুসলিম উম্মাহ্‌র অধঃপতন ঘটে।

অতএব, খ্রীস্টিয় আঠার শতকের দিকেই মুসলিম উম্মাহ্‌র অধঃপতন ঘটে। কেননা এ সময়ে মুসলিম উম্মাহ্‌ ইসলামের মূল বিশ্বাসকে রাষ্ট্রের ভিত্তি করা নিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করে। আলী (রা.) ও মু'আবিয়া (রা.) যেমন খলীফা কোন কাজটি প্রথমে করবেন সেটা নিয়ে বিতর্ক করেছিলেন, এসময়ে উম্মাহ্‌ সে ধরণের বিতর্ক না করে খলীফা পদটি থাকবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করে। গণতন্ত্র ও ইসলামের মাঝে তফাৎ নিয়ে আলোচনা না করে, সেটাকে ইসলামী সমাজে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দুর্বল ব্যাখ্যা দেয়া শুরু হয়। খিলাফত রাষ্ট্রের ওয়ালী এবং রাষ্ট্রের সম্পর্ক আলোচনা না করে, কি করে confederacy of states করা যায় তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার এই যে, যদিও ইসলামের উদার ব্যাখ্যা রোধের জন্য ইজতিহাদের প্রক্রিয়া বন্ধ করা হয়েছিল, অথচ এসময়ে মুসলিম উম্মাহ্‌র অনেক বুদ্ধিজীবী প্রচুর উদার ব্যাখ্যা দেওয়া শুরু করেন। তারা পশ্চিমা ধ্যান-ধারণাকে ইসলামের ভেতর প্রতিষ্ঠার চেষ্টা শুরু করেন, যদিও সেগুলো ইসলামের মূল বিশ্বাসের বিরোধী ছিল।

ফলে, ইসলামের মূল বিশ্বাস রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে কিনা - উম্মাহ্‌র এই প্রশ্ন করার এই প্রবণতার মাধ্যমেই তার অধঃপতনের শুরু প্রমাণিত হয়। কেননা যার ভিত্তিতে সমাজে উদ্ভুত সমস্যার সমাধান করা হবে, তাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। ইসলামের সমাধান বা রাজনৈতিক পরিমন্ডলে যারা এই সমাধান দেন (অর্থাৎ খলীফা, ওয়ালী) তাদের উপর উম্মাহ্‌ আস্থাহীন হয়ে পড়ে।

সারাংশ

মুসলিম উম্মাহ্‌র মাঝে এই ব্যাপক অধঃপতনের মূল কারণ এটাই ছিল যে নতুন নতুন পরিস্থিতিতে ইজতিহাদ করার প্রক্রিয়া তখন সমাজে প্রচলিত ছিল না। ফলে সমস্যার সমাধান ও ইসলামের মূল বিশ্বাসের মাঝে কোনও যোগসূত্র ছিল না। এক পর্যায়ে মুসলিম উম্মাহ্‌ ইসলামকে কেন জীবনাদর্শ হিসেবে বেছে নিয়েছে তার যৌক্তিক ব্যাখ্যা থেকে দূরে সরে যায়। শিল্প বিপ্লব, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার বিষয়গুলো গ্রহণযোগ্য কিনা তার সিদ্ধান্ত উম্মাহ্‌ নিতে পারছিল না। প্রিন্টিং মেশিনের ব্যবহার বর্জন করা অথবা গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টাই প্রমাণ করে যে উম্মাহ্‌র কাছে কোনও মাপকাঠি ছিল না।

অতএব কোনও সমাজে উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে যদি সেখানকার মূল বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন উঠে, তবে সেটাই হবে অধঃপতনের প্রথম লক্ষণ। আর সে সমাজে যদি অন্য কোনও আদর্শ থেকে আঘাত আসে, তবে সে সমাজ অধঃপতিত হয়।

মুস্তফা মিনহাজ

Sunday, October 6, 2013

সেই চিরন্তন শত্রুতা ...

- No comments

সেই চিরন্তন শত্রুতা ...

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

মুসলিমদের মনের মধ্যে খুব সিস্টেমেটিক্যালি গেথেঁ দেয়া হয়েছে ইসলাম পালনে কোন ধরণের কষ্ট বা শত্রুতা বা বাধাঁ-বিপত্তি নেই। ইসলাম নিয়ে তাই আজকাল সত্য কথা বললে যখন সমাজ সেটা সহ্য করতে পারে না তখন একটা chaos হয় আর লোকে তখন বলে,"ভাই ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার দরকার নাই"। আমরা যেটা মানতে পারছি না সেটাকে "বাড়াবাড়ি" হিসেবে চালিয়ে চুপ থাকাকে ইসলাম লাইসেন্স দেয় নি। বরং কুর'আন বলছে, ইসলাম পালনে এই 'বাড়াবাড়ি'র অভিযোগ নতুন কিছু নয়, বরং এটা একটা চিরন্তন স্বাভাবিক ঘটনা। যুগে যুগে যারা ইসলামের পথে ছিল তাদের সাথে যারা ইসলামের পথে ছিল না তাদের কোন প্রকার ঝামেলা হয় নাই-এরকম হয় নাই। এখানে সহাবস্থান বলে কিছু আশা করা বৃথা, হয় সত্য টিকে থাকবে না হয় মিথ্যা, দুটো একসাথে নয়।বরং এটাই inevitable যে ইসলাম প্রতিষ্ঠা পাবে মু'মিন এবং কাফিরদের শত্রুতা, বাইয়্যিনাহ (সত্য আগমনের পর মু''মিন এবং কাফিরদের মধ্যে সুস্পষ্ট বিভক্তি) এবং কাফিরদের উপর মু'মিনদের বিজয়ের মাধ্যমে।

নিচের লেখাটিতে মু'মিন এবং কাফিরদের মধ্যকার এই শত্রুতার স্বরুপ তুলে ধরা হয়েছে।

*** *** *** *** ***

আল্লাহ্‌, মহিমান্বিত তাঁর সত্তা, তাক্বদিরের মাধ্যমে মু’মিনদের ওপর  কাফিরদেরকে শক্তিশালী করেন  মু’মিনদের সাথে শত্রুতা পোষণ ও যুদ্ধ করার ব্যাপারে কাফিরদেরকে আল্লাহ্‌  সুবহানাহু ওয়া তা'আলা শারীয়াহr মাধ্যমে বা কোন নাবীর যবান এর মাধ্যমে আদেশ পাঠাননি; এটি 'তাক্বদির দ্বারা নির্ধারিত'। তিনি বরং তাদেরকে আদেশ দিয়েছেন  ইবাদত এবং আনুগত্যের। সুতরাং মু'মিনদের উপর কাফিরদের শক্তি অর্জন হলো 'তাক্বদির' আর কাফিরদের উপর  মু'মিনদের শক্তি অর্জন হলো 'শারয়ী হুকুম' এবং 'তাক্বদির'।

আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ

"আমি এভাবেই প্রত্যেক নাবীর শত্রু করেছিলাম অপরাধীদের মধ্য থেকে।" [সূরা ফুরকান ২৫:৩১]

তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ

"এইরূপে আমি মানুষ ও জ্বীনদের মধ্যে শয়তানদেরকে নাবীদের শত্রু করেছি।" [সূরা আন'আম ৬:১১২]

তিনি সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ

"এইরূপে আমি প্রত্যেক জনপদে সেখানকার অপরাধী প্রধানদেরকে চক্রান্ত করার অবকাশ দিয়েছি।" [সূরা আন'আম ৬: ১২৩]

উপরোক্ত তিনটি আয়াতেই আল্লাহ্‌, সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেছেনঃ

'আমি ... করেছি' বা 'আমি ... দিয়েছি' ....অর্থাৎ এগুলো তাক্বদির দ্বারা নির্ধারিত।

যুগ, জাতি, নাবী রাসূল অনেক কিছু পাল্টালেও তাদের এই শত্রুতার ধরণ কখনোই পাল্টায়নি। আর একারণেই আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ

"তোমার সম্বন্ধে তো তাই বলা হয় যা বলা হত তোমার পূর্ববর্তী রাসূলগণ সম্পর্কে।" (সূরা ফুসসিলাত ৪১:৪৩)

এবং তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ

"এভাবেই তাদের পূর্ববর্তীদের নিকট যখনই কোন রাসূল এসেছে তারা তাকে বলেছে, 'তুমি তো এক যাদুকর না হয় উন্মাদ'। তারা কি একে অপরকে এই মন্ত্রণাই দিয়েছে (বংশানু্ক্রমে শিখিয়েছে)? বস্তুত তারা সীমালঙঘনকারী সম্প্রদায়।" (সূরা যারিয়াত ৫১:৫২,৫৩)

তাদের এই শত্রুতার রয়েছে নানান রূপঃ

  • অন্তরের কুফরী (তাকযিব); আল্লাহ্‌  তা'আলা বলেনঃ 

"নিশ্চয় তোমার পূর্বে অনেক রাসূলকে মিথ্যাবাদী বলা হয়েছিল; কিন্তু তারা ধৈর্যধারণ করেন..." [সূরা আন'আম ৬:৩৪]

  • ঠাট্টা (সুখরিয়াহ) এবং বিদ্রুপ (ইসতিহজা) করা; আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

"যারা অপরাধী তারা তো মু'মিনদেরকে উপহাস করত।" [সূরা মুতাফ্ফিফীন ৮৩:২৯]

পরিতাপ বান্দাদের জন্য; তাদের নিকট যখনই কোন রাসূল এসেছে তখনই তারা তাকে বিদ্রুপ করেছে।" [সূরা ইয়াসীন  ৩৬:৩০]

  • মু'মিনদেরকে পাগল (জুনুন) বলে অপবাদ দেয়া; আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ
"তারা বলে, 'ওহে যার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে! তুমি তো নিশ্চয় উন্মাদ।" [সূরা হিজর ১৫:৬]

  • মু'মিনদের কর্তৃত্ব (হ্বুকুম) ও ক্ষমতালোভী (রিয়াসাহ) বলে অপবাদ দেয়া; আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ
"তারা বলতে লাগলোঃ তুমি কি আমাদের নিকট এইজন্য এসেছ যে, আমাদেরকে সরিয়ে দাও সেই তরিকা থেকে, যাতে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের পেয়েছি, আর পৃথিবীতে তোমাদের দুইজনের আধিপত্য স্থাপিত হয়ে যায়? আমরা তোমাদেরকে কিছুতেই মানব না। " (সূরা ইউনুস ১০:৭৮)

  • মু'মিনদের ধর্মত্যাগ ও বিশৃঙ্খলা (ফাসাদ) সৃষ্টির দায়ে অভিযুক্ত করা; আল্লাহ্‌  তা'আলা বলেনঃ
"ফিরাউন বলল, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি মূসাকে হত্যা করি এবং সে তার প্রতিপালকের স্মরণাপনড়ব হোক।  আমি আশংকা করি যে, সে তোমাদের দ্বীনের পরিবর্তন ঘটাবে অথবা সে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।" [সূরা মু'মিন ৪০:২৬]

  • মু'মিনদের দারিদ্র ও অসহায়ত্বের সুযোগে গালমন্দ করা; আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ
"তারা বললঃ আমরা কি তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব অথচ নিচু শ্রেণীর লোকেরা তোমার অনুসরণ করছে।" [সূরা শূরা ২৬:১১১]

  • তারা এটি করত যাতে অন্য মানুষেরা মু'মিনদের নিকটে না আসে; আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ
"... কাফিররা মু'মিনদের বলেঃ দু'দলের মধ্যে কোনটি মর্যাদায় শ্রেষ্ঠতর ও মজলিস হিসেবে কোনটি উত্তম।" [সূরা মারইয়াম ১৯:৭৩]

  • মু'মিনরা অভিশপ্ত এবং মু'মিনদের কারণে তাদের উপর গযব আসবে এমন অভিযোগঃ
"তারা বললঃ আমরা তোমাদেরকে অমঙ্গলের কারণ মনে করি এবং যদি তোমরা বিরত না হও তবে অবশ্যই তোমাদেরকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করব; ..." (সূরা ইয়াসীন ৩৬:১৮)

  • সত্য প্রত্যাখ্যান এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা যুক্তি প্রদর্শন; আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ
“...কিন্তু কাফিররা মিথ্যা অবলম্বনে বিতন্ডা করে, এর দ্বারা সত্যকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য এবং আমার নিদর্শনাবলী ও যা দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে সেই সমস্তকে তারা বিদ্রুপের বিষয়বসত্দুরূপে গ্রহণ করে থাকে।" [সূরা কাহ্ফ ১৮:৫৬]

এগুলোর মাঝে লুকিয়ে ছিল তাদের বিভ্রান্তিসমূহ যা দ্বারা তারা আল্লাহ্‌র পথে বাঁধা সৃষ্টি করত।

  • সাধারণ মানুষকে মু'মিনদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা, আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ
"তার সমপ্রদায়ের কাফির প্রধানরা বললঃ 'তোমরা যদি শুআ'ইবকে অনুসরণ কর তবে তোমরা তো ক্ষতিগ্রস্থ হবে'।" [সূরা আ'রাফ ৭:৯০]

তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ

"ফিরাউন বলল, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি মূসাকে হত্যা করি এবং সে তার প্রতিপালকের শরণাপন্ন হোক। আমি আশংকা করি যে, সে তোমাদের দ্বীনের পরিবর্তন ঘটাবে অথবা সে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।" [সূরা মু'মিন ৪০:২৬]

  • মু'মিনরা মুষ্টিমেয় হওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ জনগণের উপর তাদের মতবাদ চাঁপিয়ে দিচ্ছে এমন অভিযোগ উত্থাপন। এর উদাহরণস্বরূপ আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেছেনঃ
"এরপর ফিরাউন শহরে শহরে লোক সংগ্রহকারী পাঠালো এই বলেঃ 'ইহারা তো ক্ষুদ্র একটি দল। ইহারা তো আমাদের ক্রোধের উদ্রেক করেছে এবং আমরা তো সকলেই সদা শৃঙ্খলাবদ্ধ ও সদা সতর্ক'।" [সূরা শু'আরা ২৬:৫৩-৫৬]

  • তারা দাবী করে যে, সত্য দ্বীনের ব্যাপারে তাদের অবস্থান মু'মিনদের চেয়ে উত্তম। আল্লাহ্‌ তা'আলা বলেনঃ
ফিরাউন বললঃ আমি যা বুঝি, আমি তোমাদেরকে তাই বলছি। আমি তোমাদেরকে কেবল সৎপথই  দেখিয়ে থাকি।" [সূরা মু'মিন ৪০:২৯]

তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা), বলেনঃ

"তারা বললঃ নিশ্চয় এরা দুইজন যাদুকর, তারা চায় তাদের যাদু দিয়ে তোমাদেরকে দেশ থেকে বের করতে এবং তোমাদের উৎকৃষ্ট জীবন ব্যবস্থা ধ্বংস করতে।" [সূরা ত্বাহা ২০:৬৩]

তিনি, (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা), বলেনঃ

"তাদের কাছে যখন স্পষ্ট নিদর্শনসহ তাদের রাসূল আসত তখন তারা নিজেদের জ্ঞানের দম্ভ করত।" [সূরা মু'মিন ৪০:৮৩]

  • নানাবিধ চক্রান্ত ও পরিকল্পনা করে সাধারণ মানুষকে মু'মিনদের অনুসরণ থেকে বিরত রাখা। আলাহ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ
"যাদেরকে দুর্বল বলা হত তারা ক্ষমতাদর্পীদেরকে বলবেঃ 'প্রকৃতপক্ষে তোমরাই তো দিবারাত্র চক্রান্তে লিপ্ত ছিলে, আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলে যেন আমরা আলাহকে অমান্য করি এবং তাঁর শরীক স্থাপন করি। যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে তখন তারা অনুতাপ গোপন রাখবে এবং আমি কাফিরদের গলায় শৃঙ্খল পরাব। তাদেরকে তারা যা করত তারই প্রতিফল দেয়া হবে।" [সূরা সাবা ৩৪:৩৩]

  • মু'মিনদেরকে সুবিধাবঞ্চিত করে দ্বীন থেকে দূরে রাখার প্রচেষ্টা। আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ
"তারা বলেঃ আল্লাহ্‌ র রাসূলের সহচরদের জন্য ব্যয় কর না যতক্ষণ না তারা তার থেকে সরে পড়ে। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর ধনভান্ডার তো আল্লাহ্‌রই কিন্তু মুনাফিকরা তা বুঝে না।" [সূরা মুনাফিকূন ৬৩:৭]

  • মু'মিনদেরকে নানাবিধ সমস্যায় ফেলে দ্বীন থেকে দূরে রাখার প্রচেষ্টা। আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ
"তারা চায় তুমি নমনীয় হও; তাহলে তারাও নমনীয় হবে।" [সূরা কালাম ৬৮:৯]

তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ

প্রতি কখনো সন্তুষ্ট হবে না,যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর।" [সূরা বাকারা ২: ১২০]

  • মু'মিনরা যদি তাদের দ্বীন থেকে না সরে অথবা কাফিরদের সাহায্য সহযোগীতা না করে তবে তাদেরকে জেল ও মৃত্যুদন্ডের ভয় দেখানো। আল্লাহ্‌  (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ
"কাফিররা তাদের রাসূলগণকে বলেছিলঃ আমরা তোমাদেরকে অবশ্যই আমাদের দেশ থেকে বহিষ্কৃত  করব।" [সূরা ইব্রাহীম ১৪:১৩]

আলাহ তা'আলা বলেনঃ

"তারা যদি তোমাদের ব্যাপারে জানতে পারে তাহলে তোমাদেরকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করবে অথবা তোমাদেরকে  তাদের ধর্মে ফিরিয়ে নিবে এবং সেক্ষেত্রে তোমরা কখনোই সফলকাম হবে না।"  [সূরা কাহ্ফ ১৮: ২০]

  • মু'মিনদের উপর অত্যাচার, হত্যা এবং সংঘাত চাঁপিয়ে দেয়া। আল্লাহ্‌  (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ
"তারা বললঃ তাকে পুড়িয়ে দাও; সাহায্য কর তোমাদের দেবতাদেরকে...।" [সূরা আম্বিয়া ২১:৬৮]

তিনি, (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা), বলেনঃ

"আর স্মরণ কর যখন কাফিররা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যে, তোমাকে বন্দী করবে অথবা হত্যা করবে অথবা নির্বাসিত করবে..." [সূরা আনফাল ৮:৩০]

তিনি,(সুবহানাহু ওয়া তা'আলা), বলেনঃ

"তারা সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে যে পর্যন্ত না তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দেয়।" [সূরা
বাকারা ২:২১৭]

তাই মু'মিন ভাইদের উদ্দেশ্যে বলছি, কাফিরদের শত্রুতা ও বিরোধিতার কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে যা কখনো বদলাবে না।  তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ

"তারা কি একে অপরকে এই মন্ত্রণাই দিয়েছে (বংশানু্ক্রমে শিখিয়েছে)?" [সূরা যারিয়াত ৫১:৫৩]

আর সবচেয়ে বড় কথা হলো মু'মিনদের ঈমানের কারণেই কাফিররা মু'মিনদের সাথে যুদ্ধ করে এবং শত্রুতা পোষণ করে। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ

“তারা তাদেরকে শাস্তি দিয়েছিল শুধু এ কারণে যে, তারা প্রশংসিত, পরাক্রান্ত আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের ক্ষমতার মালিক, আল্লাহর সামনে রয়েছে সবকিছু” [সূরা আল বুরুজ ৮৫:৭,৮]

এবং তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ

তারা এটাই কামনা করে যে, তারা যেমন কুফরী করেছে তোমরা সেরকম কুফরী কর; যাতে তোমরা তাদের সমান হয়ে যাও।" [সূরা নিসা ৪:৮৯]

সুতরাং কাফিরগণ মু'মিনগণকে শত্রু হিসেবে নেয় তাদের ঈমানের জন্য। একজন মুমিনের ঈমান যত বৃদ্ধি পায় তাঁর প্রতি কাফিরদের শত্রুতা ততই বৃদ্ধি পায়। এ ব্যাপারে রাসূলুলাহ  (সালালাহু আলাইহি ওয়া সালাম) বলেনঃ "সবচাইতে বেশী  পরীক্ষা করা হয় নাবীদেরকে, এরপর তাদের নিকটবর্তীদেরকে (ঈমানের স্তর ভেদে), তারপর তাদের নিকটবর্তীদেরকে  (ঈমানের স্তর ভেদে)। মানুষ তার ঈমানের স্তর অনুযায়ী পরীক্ষিত হবে... .."। [আত তিরমিযী; সহীহ্]

আর এটি বান্দা নিজেও বুঝতে পারে যে, তার ঈমান বৃদ্ধির সাথে সাথে তার প্রতি কাফির ও ফাসিকদের শত্রুতাও বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং সে তাদেরকে ভালো কাজের আদেশ দেয় এবং মন্দ কাজে নিষেধ করে, এতে শত্রুতা আরো বৃদ্ধি পায়। আর তার ঈমান যত হ্রাস পায় তাদের শত্রুতাও ততই হ্রাস পায়।

তবে মু'মিনরা যতদিন ঈমানের উপর থাকবে তাদের প্রতি কাফিরদের শত্রুতা ততদিন পর্যন্ত শেষ হবে না; যদিও এতে কিছু থাকে তবুও। আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ

"ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানরা তোমার প্রতি কখনো সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর।" [সূরা বাকারা ২:১২০]

তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ

"তারা সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে যে পর্যন্ত না তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দেয়।" [সূরা বাকারা ২:২১৭]

*** *** *** *** ***

লেখাটি শাইখ আব্দুল ক্বাদির বিন আব্দুল আজীজ রচিত "জিহাদ বিষয়ক মৌলিক আলো

মোল্লা VS নাস্তিক......১ম পর্ব (সিরিজ ২)

- No comments
মোল্লা VS নাস্তিক......১ম পর্ব (সিরিজ ২)
by মুক্তির পথিক

(মোহাম্মদপুরের কোন এক চায়ের দোকানে কিছু তরুণ বসে আলোচনা করছে)



১ম তরুণঃ তাহলে বুঝছ তো? আল্লাহ যদি থাকতই, তাহলে সমাজে কি গরীব থাকতো? ঐ লোকটার কি দোষ যে আল্লাহ তাকে গরীব করে বানাইছে?



(কথাটা কানে যেতেই দাঁড়িয়ে পড়ল মোল্লা। ভাল করে খেয়াল করল তরুণকে। মুখে ফ্রেঞ্চ কাট দাঁড়ি, DON 2 এর শাহরুখ খানের মত ঝুঁটি বাঁধা চুল, চে গুয়েভারার গেঞ্জি গায়ে.........যাকে বলা হচ্ছে, সে সাধারণ একজন তরুণ। তাদেরকে ঘিরে বসে আছে আরও কয়েকজন, সবাইকে ভার্সিটি পড়ুয়াই মনে হল...... বসল গিয়ে চায়ের দোকানে।)



উৎসুক শ্রোতা পেয়ে ১ম তরুণ আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল......



মোল্লাঃ ভাই, আপনার যুক্তিটা তো বুঝলাম না। সমাজে গরীব আছে বলে স্রষ্টা নেই, এটা কেমন কথা হল?



১ম তরুণঃ স্রষ্টা থাকলে তিনি কি আর গরীব লোকদের কষ্ট দেখে চোখ বুজে থাকতেন? অবশ্যই তিনি তার সৃষ্টিকে কষ্ট দিতেন না।



মোল্লাঃ এটা কোন কথাই হলনা। অনেক মানুষের অনেক টাকা পয়সা আছে, তারপরও তারা কষ্টে আছে। খালি গরীব হলেই কষ্ট, এটা ভুল। কষ্ট নাই, এমন কোন মানুষ পাইনি আমার জীবনে। কারো চেহারা নিয়ে কষ্ট, কারো টাক নিয়ে কষ্ট, কারো  GF কে না পাওয়া নিয়ে কষ্ট।



(......উৎসুক শ্রোতারা, আশেপাশের আরও কয়েকজন, যারা এতক্ষণ নাস্তিকতার কথা শুনছিল, কিন্তু পাল্টা যুক্তি দেখাতে না পেরে মনে মনে কষ্ট পাচ্ছিল, সবাই মনোযোগ দিল)



...আপনার লজিকটা ভুল। অনেকটা এইরকম,  NOKIA N8, N97 আর  6210 নিজেদের মধ্যে আলাপ করতেছে, “আমাদের মধ্যে যেহেতু বৈচিত্র্য আছে, সেহেতু NOKIA COMPANY বলে কিছু নাই”। এটা কোন কথা হল?



(বিন্দুমাত্র না দমে...)



১ম তরুণঃ কিন্তু আল্লাহ আছে, এই প্রমাণ কেউ করতে পারেনি, এর কোন প্রমাণই নেই, আপনার কাছেও প্রমাণ নেই, খালি অন্ধ বিশ্বাস।



মোল্লাঃ (দৃঢ়ভাবে) জী না, আমার কাছে প্রমাণ আছে। বরং স্রষ্টায় না বিশ্বাস করাটাই অন্ধ বিশ্বাস।



পাশ থেকে কেউ একজন : “ কিভাবে?? Zakir Nayek এর logic দিবেন তো? ওইটা তো Zakir Nayek না, Joker Nayek, ওর logic এর অনেক flaw আছে।’’



মোল্লাঃ আমি জাকির নায়েকের logic দিবনা।বরং আমি আপনাকে এমন প্রমাণ দিব যা আমদের বাস্তবতা (Reality)কে পর্যবেক্ষণ করে নেয়া, যা চূড়ান্তভাবে স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ করবে।



(এবার তারা কিছুটা উৎসাহিত হল)



দুইজন (সমস্বরে) : কিভাবে?



মোল্লাঃ দেখেন, আমাদের এই মহাবিশ্বটার যদি শুরু থাকে, তবে এই প্রশ্নটা সামনে চলে আসে যে, তা কিভাবে শুরু হল?



১ম তরুণঃ কিন্তু মহাবিশ্ব তো শুরু নাও হতে পারে, অনন্তকাল  ধরেও তো চলে আসতে পারে?



মোল্লাঃ না, মহাবিশ্ব অনন্তকাল ধরে চলে আসতে পারেনা, এর অবশ্যই অবশ্যই শুরু আছে।



১ম তরুণঃ আপনি এত Sure হলেন কিভাবে?



(বাকিরা উৎসাহী নয়নে চেয়ে আছে...)



মোল্লাঃ মনে করেন, আপনি বাসে উঠার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, আপনার সামনে আরও ৫ জন। আপনি কয়জনের পর বাসে উঠবেন?



কেউ একজনঃ ৫ জনের পর।



মোল্লাঃ যদি আপনার সামনে ১০ জন থাকে, তাহলে??



১ম তরুণঃ ১০ জনের পর।



মোল্লাঃ কিন্তু যদি আপনার সামনে অসীম সংখ্যক লোক দাঁড়িয়ে থাকে? তাহলে, কয়জনের পর বাসে উঠবেন?



(ব্যাপারটা হজম করতে সময় লাগল, কেউ কথা বলছেনা)



মোল্লাঃ তারমানে আপনি কোনদিন বাসে উঠতে পারবেন না। কারণ আপনার সামনের লাইন কোনদিনই শেষ হবেনা (যেহেতু অসীম)। সুতরাং আপনার serial কখনই আসবেনা। এখন এই মহাবিশ্ব যদি অনন্তকাল ধরে চলে থাকে, তবে একটা প্রশ্ন করি, পৃথিবীর জন্ম কবে হয়েছে? উত্তর হবে, পৃথিবীর  জন্ম এখনও হয়নাই, কখনই হবেনা, কারণ পৃথিবীর জন্ম হওয়ার আগে অসীম সংখ্যক ঘটনা ঘটতে হবে। আর অসীম মানে যার কোনও শেষ নাই, সেই ক্ষেত্রে পৃথিবীকে অনন্তকাল জন্ম হওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে, যেরকম আপনি লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন বাসে উঠার জন্য। আপনার সামনের লাইন কোনদিনও শেষ হবেনা, আপনিও বাসে উঠতে পারবেন না, পৃথিবীর সামনের লাইনও কোনদিন শেষ হবেনা। এখন মনে করি, পৃথিবীর সামনে সূর্য দাঁড়িয়ে আছে, জন্ম হওয়ার অপেক্ষায়, তারও কোনদিন জন্ম হবেনা, কারণ তার সামনের লাইনও তো অসীম! অসীমের সাথে ১ যোগ করলেও অসীম, ১ বিয়োগ করলেও অসীম, তাহলে আগের ঘটনাগুলোই যদি এখনও শেষ না হয়, তাহলে আমি, আপনি , পৃথিবী, সূর্য  কোন কিছুরই অস্তিত্ব সম্ভব হতনা। অবশ্যই একটা ঘটনার মাধ্যমে মহাবিশ্বের শুরু হয়েছে, তারপর ১,২,৩,৪, করে করে ঘটনাগুলো ঘটতে আরম্ভ করেছে......এখন আমি আপনি চায়ের দোকানে আলাপ করছি!



মাঝখান থেকে একজনঃ ভাই, আরেকটু বুঝিয়ে বলবেন কি?



মোল্লাঃ কঠিন হয়ে গেল? আচ্ছা, মনে করেন, আপনি শত্রু পক্ষের কাউকে স্নাইপার রাইফেল দিয়ে গুলি করবেন। আপনার উপর ৫ জন BOSS আছে, পর্যায়ক্রমে যাদের অনুমতি পেলে আপনি গুলি করবেন। এখন আপনাকে যদি অসীম সংখ্যক BOSS এর permission নিতে হয়, তাহলে আপনি কখন গুলি করবেন? আপনার permission নেয়াও শেষ হবেনা, গুলিও কোনদিন করতে পারবেন না। আপনার বাসায় যদি অসীম সংখ্যক মালামাল থাকে তাহলে কোনদিনই বাসা change করতে পারবেন না। কারণ মালামাল নামানো কোনদিনই শেষ হবেনা।



(চায়ের দোকানদারকে)...... ভাই, এক গ্লাস পানি দাও তো...



তারমানে কোনও একটা ঘটনা যদি ঘটে, বুঝতে হবে যে তার আগে অসীম সংখ্যক ঘটনা ঘটেনি, ঘটেছে সীমিত সংখ্যক ঘটনা, আর সীমিত ঘটনা মানেই, একটা শুরু আছে, তারপর ঘটনা গুলো ঘটতে ঘটতে আজকের এই পর্যায়ে এসেছে। সুতরাং মহাবিশ্বের অবশ্যই শুরু আছে। যেরকম ৫ জনের বা ১০ জনের পর আপনি বাসে উঠতে পারছেন, সেইরকম ৫টা, ১০টা বা ১০০টা ঘটনা ঘটার পর পৃথিবীর জন্ম হয়েছে। এ থেকেই প্রমাণ হয়, মহাবিশ্বের শুরু আছে, এটা অনন্তকাল ধরে চলে আসা কোনও মহাবিশ্ব নয়।



(বিংশ শতাব্দীর শুরুতে গণ্ডমূর্খ নাস্তিক INTELLECTUAL দের, যে যুক্তি, উঠতি তরুণ সমাজের মাঝে নাস্তিকতার হাওয়া যুগিয়েছিল, তার এরকম পতন দেখে  হতবাক হয়ে গেল তরুণগুলো)



(একটু নমনীয় সুরে......)



১ম তরুণঃ আপনার কথা ঠিক আছে... (অজানা ভয়ে...... আমতা আমতা করে...) কিন্তু এতেও প্রমাণ হয়না যে স্রষ্টা আছে।



মোল্লাঃ এখন অবশ্যম্ভাবী প্রশ্নটা চলেই আসে, তাহলে মহাবিশ্ব কিভাবে শুরু হল, মানে সৃষ্টি হল। সে কি নিজেকে নিজে তৈরি করেছে, অর্থাৎ শুন্য থেকে নিজেই নিজেকে তৈরি করেছে নাকি অন্য কেউ তাকে তৈরি করেছে?



১ম তরুণঃ আপনার যুক্তিটা কি? Stephen Hawkings কিন্তু বলেছেন যে, কোন স্রষ্টা ছাড়াই এই মহাবিশ্ব নিজেকে নিজে তৈরি করেছে।



মোল্লাঃ (তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে...) Grand Design বইটার কথা বলছেন তো? ঐ বইয়ের সমালোচনার জবাবে হকিংস নিজের মুখেই স্বীকার করেছেন যে,

“ স্রষ্টা নেই, এ কথা কেউ প্রমাণ করতে পারবেনা। কিন্তু বিজ্ঞান স্রষ্টাকে অপ্রয়োজনীয় বলে রায় দিয়েছে।’’

সুতরাং, ঐ বই থেকেও প্রমাণ হয়না যে স্রষ্টা নেই। বরং লেখক নিজেই বলছেন যে, স্রষ্টাকে আমাদের দরকার নেই। দরকার নেই, আর স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই, দুইটা তো এক জিনিষ না। আর তাছাড়া  বইটাতে বোকামিপূর্ণ বক্তব্য দেয়া হয়েছে।



(ব্যাপারটা হজম করতে না পারলেও, এই মোল্লার দৌড় যে শুধু মসজিদ পর্যন্ত না, তা তারা ভালই বুঝতে পেরেছে।)



মোল্লাঃ তা ভাই, আপনার নামটা যেন কি?



১ম তরুণঃ রুম্মান।



মোল্লাঃ চা চলবে ভাই?...... এই মামা, চা দাও সবাইকে......



রুম্মানঃ যা বলছিলেন, হকিংস......



মোল্লাঃ ও, হ্যাঁ। উনি বলেছেন যে, Gravityর কারণে এ মহাবিশ্ব নিজেই নিজেকে শূন্য থেকে তৈরি করতে পারে।



রুম্মানঃ তো, এতে সমস্যা কোথায়? Virtual Gravitons এর কারণে এই Gravity তৈরি হয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে মহাবিশ্বের সৃষ্টি, শূন্য থেকে।



মোল্লাঃ সমস্যা আছে। Gravity একটা গাণিতিক সমীকরণ। দুইটা বস্তুর মাঝে ভর অনুপাতে আকর্ষণ বুঝাতে এটা ব্যবহৃত হয়। তো মহাবিশ্ব যদি শূন্য থেকেই আসে, তাহলে সেখানে কোন বস্তু ছিলনা, তো Gravity  কোত্থেকে আসল সেই সময়? এইখানে আপনি বলছেন যে Virtual Gravitons ছিল, তো সেই প্রশ্ন এসে যায়, এরা কি অনন্তকাল ছিল? অনন্তকাল ধরে থাকতে পারেনা। আর একটা জিনিষ নাই, ছিলনা, আবার সেটা হইল, আবার নাই আবার হইল, এইটাত পুরাই irrational কথাবার্তা। আপনার সামনে আমি দাঁড়াইয়া আছি, আবার গায়েব হয়ে গেলাম, আবার দাঁড়াইয়া আছি, আবার গায়েব হয়ে গেলাম... science দেখি সিন্দাবাদের দৈত্যের মত কথা বলছে, Infact তার চেয়েও আজগুবি কথা বলেছে হকিংস। এই কারনেই ব্রিটিশ বিজ্ঞানী বেরনেস গ্রিনফিল্ড হকিংস কে তালিবানদের সাথে তুলনা করে বলেছেন যে, “যা খুশি তারা বলতে পারে, তালিবানদের মত তারা যখন বলে আমাদের কাছে সব প্রশ্নের উত্তর আছে, তখন তা আসলেই অস্বস্তিকর।’’ মানে Comment করতে তো আর পয়সা লাগেনা। science বুঝেনা এরকম নাস্তিকরাই আসলে হকিংস রে নিয়ে কাউ কাউ করে। Richard Dawkins এইরকম একজন। আমাদের দেশের নাস্তিকগুলাও না বুইঝা ফালাফালি করে। অনেক বিজ্ঞানীই হকিংসের সাথে একমত না।



..... আর gravity না হয় gravitons থেকে হইল, যেটার কারণে মহাবিশ্ব হইল, তাহলে gravitons কোত্থেকে হইলো? দ্বিতীয় আরেকটা প্রশ্ন হল, হকিংস শূন্য বলতে যে Quantum vacuum বুঝিয়েছেন, তা কিন্তু আসলেই শূন্য (nothing) না। সেখানে energy বিরাজ করত। এখন, energy আর gravity এই মহাবিশ্বেরই অংশ। হকিংসের কথার সাদামাটা মানে হল, আপনি নিজেকে তৈরি করেছেন শূন্য থেকে, নিজেকে তৈরি করার আগে আপনার হাত আগে থেকেই ছিল(যেটা আপনারই অংশ), তারপর সেই হাত আপনাকে তৈরি করেছে। তো প্রশ্ন হল, হাত কিভাবে ছিল? এটা একটা অবাস্তব কথাবার্তা।



মহাবিশ্বের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত একটা জিনিষ, মহাবিশ্ব তৈরি হওয়ার আগে থেকেই ছিল, এরপর মহাবিশ্বকে তৈরি করে সে নিজেই মহাবিশ্বের পেটের ভেতর  ঢুকে পড়েছে, Hw Funny???? Seems like fairy tales!! অর্থাৎ আপনি আগে থেকেই ছিলেন,এরপর আপনার মাকে আপনি বানাইছেন, বানাইয়া তার পেটের ভেতর ঢুকে বসে আছেন, আর মায়ের কাছ থেকে পুষ্টি নিয়ে বেঁচে আছেন। লুল, লুল মজা পাইলাম।



(পুরা দোকান মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনে যাচ্ছে, কেউ বুঝতেছে, কেউ বুঝতেছেনা, তবে সাধারণ জনগণ চাচ্ছে মোল্লাই জিতুক। চায়ে চুমুক দিয়ে.........)



এর চেয়ে অবাস্তব কথা আর কি হতে পারে? এ থেকেই বুঝা যায়, মহাবিশ্ব শূন্য থেকে আপনা আপনি তৈরি হয়েছে, এরকম কোন সত্য প্রমাণ বিজ্ঞানের কাছে আদৌ নেই। এটা শুধু থিওরি হিসেবে হকিংসের কল্পনায় (Fantasy) আছে, যার বাস্তব ভিত্তি নেই। না হলে কি আর হকিংস সাহেব বলতেন, “স্রষ্টার অনস্তিত্ব প্রমাণ করা সম্ভব নয়”



এজন্যই আল্লাহ কুরআনে  সুরা আত তুরে বলেছেন, “ তারা কি এমনি এমনিই তৈরি হয়েছে, নাকি তারা নিজেরাই নিজেদের স্রষ্টা? না তারা নভোমডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেছে? বরং তারা বিশ্বাস করেনা।’’



রুম্মানঃ (ব্যঙ্গ করে), এ কথা আপনি মহাজ্ঞানী বুঝলেন, আর হকিংস বুঝলনা??



মোল্লাঃ (তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে) হকিংস অজ্ঞানান্ধ (বিজ্ঞানে অন্ধ= অজ্ঞানান্ধ)। একজন রিকশাওয়ালাও তার চেয়ে rational। এক রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞাস করা হয়েছিলো, “ চাচা, আল্লাহ আছে, এটা বুঝলেন ক্যামনে?” কিছুক্ষণ চুপ থেকে তিনি উত্তর দিলেন,

“ বাবারে, আমি প্যাডেল চাপি, চাক্কা ঘুরে, আর এতবড় দুনিয়া ঘুরতাছে, প্যাডেল তো কেউ একজন মারতাছে......”



হকিংস সাহেবের এই বোধ বুদ্ধিটাও নাই। হাহাহাহাহা, দেখেন না, এখন কমেডি শোতে  অভিনয় করা শুরু করেছেন! এদের ব্যাপারেই আল্লাহ কুরআনে সুরা আল আরাফে বলেছেন, “ আর আমি সৃষ্টি করেছি দোজখের জন্য বহু জিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করেনা, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখেনা, তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শুনেনা। তারা চতুষ্পদ জানোয়ারের মত, বরং তার চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, উদাসীন।’’



২য় তরুণঃ তাহলে কি দাঁড়ালো? মহাবিশ্ব অসীম নয়, এর শুরু আছে। শুরুটা সে নিজে নিজে করেনি। তারমানে অবশ্যই কেউ একজন এই মহাবিশ্বকে শুরুতে সৃষ্টি করেছেন। ......(কিছুক্ষণ ভেবে) কিন্তু একটা সমস্যা তো রয়েই যাচ্ছে। তাহলে ঐ স্রষ্টা আসল কোত্থেকে? উনাকে কে বানাইছে?





(মোল্লাকে আটকানো গেছে ভেবে কতগুলো চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। বাকিরা দম বন্ধ করে ফেলল)............To be continued.....


উড়াধুড়া মোল্লা

উড়াধুড়া মোল্লা
উড়াধুড়া মোল্লা

Tuesday, June 11, 2013

পরাশক্তি রোমের বিরুদ্ধে ইয়ারমুকের যুদ্ধের একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা ও তার থেকে কিছু শিক্ষা

- No comments

পরাশক্তি রোমের বিরুদ্ধে ইয়ারমুকের যুদ্ধের একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা ও তার থেকে কিছু শিক্ষা

by Rashedul Islam (Notes) on Tuesday, June 4, 2013 at 8:50pm


১৩ হিজরিতে  সেকালের পরাশক্তি  রোম -এর সাথে মুসলিমদের 'ইয়ারমুকের'  জিহাদ  চলাকালে জিহাদের ময়দানে রোমের এক বিখ্যাত সেনাপতি জুরজা সৈন্যদের সারি থেকে বেরিয়ে এসে হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) এর সাথে কথা বলার প্রস্তাব দিলে দুই জনই কাছাকাছি আসেন।
জুরজা ও খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) এর মাঝে কথা চলছিলঃ
জুরজাঃ হে খালিদ,আপনি আমার সাথে সত্য কথা বলবেন, মিথ্যা নয়। কারণ স্বাধীন ও সাহসী ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলেন না। আমার সাথে প্রতারণা করবেন না। কারণ সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি প্রতারণা করেন না। বলুন তো, আল্লাহ তা'য়ালা কি আপনাদের নবীর নিকট আকাশ  থেকে কোন তরবারি নাযিল করেছিলেন যে, নবী নিজে ওই তরবারি আপনাকে হস্তান্তর করেছেন। আর আপনি ওই তরবারি যার উপর চালান সে-ই পরাজিত হয়--- পরাস্ত হয়।

খালিদ (রাঃ):   না,  তা তো নয়। আল্লাহ সরাসরি কোন তরবারি নাযিল করেন নি।

জুরজাঃ তাহলে আপনাকে সায়ফুল্লাহ---- আল্লাহর তরবারি বলা হয় কেন?
খালিদ (রাঃ): আল্লাহ আমাদের নিকট তার নবীকে প্রেরন করেছেন। তিনি আমাদের আল্লাহর পথে ডেকেছেন, আমরা সকলে তার নিকট থেকে পালিয়ে ছিলাম এবং দূরে  বহু দূরে সরে গিয়েছিলাম। এরপর আমাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ তাকে সত্য বলে মেনে নেয় এবং তার অনুসরন করে। কতক তাকে প্রত্যাখ্যান করে এবং দূরে চলে যায়, আমি ছিলাম তাদের দলে। এরপর আল্লাহ আমাদের কপাল চেপে ধরলেন এবং তার মাধ্যমে আমাদের হিদায়াত ও সৎ পথ দেখিয়েছেন। আমরা তার হাতে বায়াত করেছি। তার অনুসরনের অঙ্গিকার করেছি। রাসুল (সাঃ) আমাকে বললেন, তুমি আল্লাহর একটি তরবারি, এই খোলা তরবারি আল্লাহ তা'য়ালা মুশরিকদের উপর নিয়োজিত করে দিয়েছেন। তিনি আমাকে  সাহায্য করার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে দুয়া করলেন। আর আমি মুশরিকদের জন্য সর্বাধিক কঠোর বাক্তি।

জুরজাঃ আপনারা কোন বিষয়ের দিকে মানুষকে ডাকেন?

খালিদ (রাঃ):  আমরা ডাকি এই বিষয়ে সাক্ষ্য  দেয়ার জন্য যে
, আল্লাহ ব্যতিত কোন  ইলাহ নেই, আর মুহাম্মদ (সাঃ) তার  বান্দা ও রাসুল এবং এ বিষয়ে স্বীকৃতি দিবে যে, মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে যা  নিয়ে এসেছেন তা সত্য।

জুরজাঃ যদি কেউ আপনাদের ডাকে সারা না দেয়,  তার কি অবস্থা হবে?

খালিদ (রাঃ):  তাহলে সে জিযিয়া কর দিবে এবং বিনিময়ে আমরা তার  জান-মালের নিরাপত্তা দিব।

জুরজাঃ যদি সে  জিযিয়া দিতে অস্বীকৃতি জানায়?

খালিদ (রাঃ):   তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা দিব এবং তার বিরুদ্ধে জিহাদ করব।

জুরজাঃ আজকের এই  মুহূর্তে যদি কেউ আপনাদের ডাকে সারা দেয় এবং ইসলামে প্রবেশ করে তবে তার কি অবস্থা হবে?

খালিদ (রাঃ):  তাহলে আল্লাহর দেয়া বিধান অনুসারে সে এবং আমরা সকলের অবস্থান এক হয়ে যাবে। সে আমাদের সমমর্যাদার হয়ে যাবে। আশরাফ-আতরাফ,  উচু-নিচু ও পূর্ববর্তী-পরবর্তী সব একই মর্যাদার অধিকারী হবে।
জুরজাঃ  যে ব্যক্তি আজ ইসলাম গ্রহন করবে, আপনাদের দলভুক্ত হবে তার আর আপনাদের সওয়াব ও পুণ্য কি এক সমান হবে?

খালিদ (রাঃ): হা তাই হবে। তবে সে আরও উত্তম পুণ্য পাবে।

জুরজাঃ ওই বাক্তি কিভাবে আপনাদের সমান হবে অথচ ইসলাম গ্রহনে আপনারা তার চেয়ে অগ্রবর্তী ও পুরাতন?

খালিদ (রাঃ):  আমরা ইসলাম গ্রহন করেছি বাধ্য হয়ে। তারপর আমরা নবী (সাঃ) এর হাতে বায়াত করেছি যখন তিনি জীবিত ছিলেন। তার কাছে আসমান থেকে সংবাদ আসত। তিনি আমাদের কুরআনের আলোকে  বিভিন্ন বিষয় জানাতেন। তিনি আমাদের বিভিন্ন নিদর্শন ও মু'জিযা দেখাতেন। আমরা যা দেখেছি কেউ তা দেখলে এবং আমরা যা শুনেছি কেউ তা শুনলে সে ইসলাম গ্রহনে ও বায়াত সম্পাদনে বাধ্য হয়ে পড়ে।  ইসলাম গ্রহন ও বায়াত সম্পাদন তার কর্তব্য হয়ে যায়। আমরা যে সব আশ্চর্যজনক ঘটনা ও প্রমাণাদি শুনেছি আপনারা তা শুনেন নি। তসত্ত্বেও আপনাদের কেউ যদি খাঁটি নিয়তে ----স্বচ্ছ বিশ্বাসে এই ইসলামে প্রবেশ করে সে আমাদের চাইতে উত্তম হবে না বা কেন?
জুরজাঃ আল্লাহর কসম আপনি সত্য বলছেন তো? প্রতারনা করেন নি তো?

খালিদ 
(রাঃ): আল্লাহর কসম! আমি আপনার নিকট সত্য বলছি এবং আল্লাহ সম্পর্কে আপনি যা, জিজ্ঞাসা করেছেন , আমি যা বলেছি সে সম্পর্কে আল্লাহ অবগত আছেন।

 তখনি  জুরজা ঢাল  উল্টিয়ে ধরেন এবং খালিদ খালিদ (রাঃ) এর দিকে ঝুকে পড়েন।

জুরজাঃ আপনি আমাকে ইসলাম শিখিয়ে দিন।

জুরজাকে নিয়ে তখন খালিদ তাবুতে গেলেন, মশক থেকে পানি ঠেলে ওজু করিয়ে তাকে নিয়ে ২ রাকআত নামাজ পড়েন। জুরজা এরপর খালিদ (রা)  এর সাথে ময়দানে ফিরে রোমানদের বীরুদ্ধে জিহাদে  অংশগ্রহণ করেন এবং কিছুক্ষন পর প্রচণ্ড আক্রমণ করতে করতে  এক সময় আহত হয়ে শহীদ হন।  ....... খালিদ (রাঃ) এর সাথে ২ রাকআত নামজই ছিল  তার জীবনের প্রথম ও শেষ নামাজ।  কিন্তু রোমানদের  বীরুধে মুসলিমদের সাথে জিহাদে আল্লাহ তাকে কবুল করেছিলেন, এবং তাকে সর্বোচ্চ সম্মানি মৃত্যু শহীদ হওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন।

 মূলত যেখানে আমরা জন্মগত ভাবে পাওয়া মুসলিমরা জন্মগত ভাবে পাওয়া জীবনবিধান ইসলাম-এর ফরজ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করি, সেখানে এই মুসলিম ভাইটি তো চরম ঈমানের পরিচয় দেখিয়েছেন।  খ্রিষ্টান থেকে ইসলাম গ্রহন করার পরই তার উপর অর্পিত ফরজ দায়িত্ব পালনে তিনি একটুও সময় নষ্ট করেন নি। আল্লাহর প্রতি ঈমান তার থেকে মৃত্যুর ভয়কেও পরাজিত করেছে।  অথচ, সেই ইয়ারমুকের যুদ্ধে  মুসলিমদের থেকে রোমানদের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। রোমানদের ছিল ২লক্ষ সৈন্য, আর  মুসলিমদের ছিল মাত্র ২১ হাজার  মুজাহিদ। সে যুদ্ধে মুসলিমদের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা ছিল অনেক । যুদ্ধের ময়দান থেকে কিছু কিছু অধৈর্য ও পরিশ্রান্ত  মুসলিম পালিয়ে যাওয়ার সময় মহিলাদের হাতে পাথর নিক্ষেপ ও কাঠের  বাড়ি খেয়ে  লজ্জায় ময়দানে ফিরে আসে। মহিলাদেরকে এজন্যই নিযুক্ত করা হয়েছিল যেন তারা ভয়ে পালিয়ে যাওয়া মুজাহিদদের ময়দানে ফিরিয়ে আনে।  এছাড়াও মহিলারা এ যুদ্ধে  সশস্ত্র অংশগ্রহণ করে।  অবশেষে মুসলিমরাই প্রতিবারের মত কাফিরদের বিরুদ্ধে জয় লাভ করেন।

অবশেষে আমার মুসলিম ভাই-বোনদের  সুরা রা’দ-এর ২৭ নং আয়াতটি মনে করিয়ে দিয়ে শেষ করতে চাই,  .......  “....... বলুন, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথ ভ্রষ্ট  করেন এবং তিনি তাকে নিজের দিকে পথ প্রদর্শন করেন --- যে তার অভিমুখী হয়”।

আরেকটি প্রাসঙ্গিক আয়াত সংযোজন করতে ইচ্ছে করছে, .....  “
যেসব মুসলমান  কোন  প্রকার  অক্ষমতা  ছাড়াই  ঘরে  বসে  থাকে  আর  যারা ধন-প্রাণ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে, তাদের উভয়ের মর্যাদা সমান নয়।   যারা ঘরে বসে থাকে তাদের তুলনায়  জান-মাল  দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের মর্যাদা আল্লাহ বুলন্দ করেছেন।   যদিও সবার জন্য আল্লাহ কল্যাণ ও নেকীর ওয়াদা করেছেন,  তবুও তাঁর কাছে  মুজাহিদদের  কাজের মর্যাদা ঘরে বসে থাকা লোকদের তুলনায় অনেক বেশী৷ তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে  বিরাট মর্যাদা, মাগফেরাত ও রহমত ৷ আর আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়”। [সুরা নিসাঃ ৯৫-৯৬]





[সুত্রঃ "আল বিদায় ওয়ান নিহায়া" , ৭ম খণ্ড, "ইয়ারমুকের যুদ্ধ" পরিচ্ছেদ ......... আবুল ফিদা হাফিজ ইবন কাসীর  আদ- দামেশকী (র) (
"তাফসীরে ইবনে কাসীর" -এর লেখক) । ------ এই বইটি একটি বিখ্যাত ঐতিহাসিক গ্রন্থ যেখানে হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে খলীফাদের জীবনী পর্যন্ত বহু কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।]  


- No comments

মুহাম্মদ ইবনে কাশিম এবং ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের আগমন

by Rashedul Islam (Notes) on Tuesday, May 28, 2013 at 10:14pm


[মুহাম্মদ  ইবনে কাশিম সম্পর্কে অনেক গল্প ও উপন্যাস পাওয়া যায়। কিন্তু  ওনার সম্পর্কে এর চেয়ে সংক্ষিপ্ত  কোন ঐতিহাসিক রচনা না থাকার সম্ভাবনাই বেশি। তাই সবাইকে পড়ে শেয়ার করে অন্যকে জানানোর অনুরোধ করছি। কেউ যদি  জেনে কিছুটা হলেও ইসলামের পথে উপকৃত  হন, তবে সেটাই আমি আমার আজকের সারাদিনের কষ্টের ফল হিসেবে দেখবো। জাযাকাল্লাহ।]


খিলাফত হচ্ছে ইসলামিক শাসন ব্যবস্থার নাম। আর খিলাফত রাষ্ট্র দিয়ে বুঝায় ইসলামিক রাষ্ট্রকে যেই রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ব্যাবস্থা থেকে সামাজিক ও পারিবারিক সকল বিষয় আল্লাহর নিকট একমাত্র জীবন ব্যাবস্থা ইসলাম দিয়ে পরিচালনা করা হয়। ৬২২ খ্রিস্থাব্দে রাসুল (সাঃ) মদিনাতে হিজরতের পর সেখানে ইসলামের সর্বপ্রথম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন যা যুগের পর যুগ ধরে রাসুলের (সাঃ)  পর থেকে খলীফাদের মাধ্যমে পৃথিবীর কিছু অঞ্চল ব্যাতিত অধিকাংশ অঞ্চলেই বিস্তৃতি লাভ করে। খলীফাগন   রাসুলের (সাঃ) দেখানো পথ অনুসারে  দাওয়া ও জিহাদের মাধ্যমে  ইসলামিক খিলাফত রাষ্ট্রের বিস্তৃতি ঘটান। এই দাওয়া ও জিহাদের পেছনে রয়েছে বহু বীর সেনা মুজাহিদদের একান্ত প্রচেষ্টা। যারা নিজের জীবনের মায়াকে উপেক্ষা করে শহীদের মর্যাদা লাভের চেতনায় বছরের পর বছর পরিবার-পরিজন ছেড়ে দূর দূর দেশে ইসলামের সুশীতল শান্তির বার্তা পৌঁছে দিয়েই ক্ষান্ত হননি, বরং সেখানে তা রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রতিষ্ঠা করে শান্তি স্থাপনের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছেন।  মুহম্মদ ইবন কাশিম তেমনি একজন বীর মুজাহিদ যিনি সিন্দু দেশের একজন মজলুম মুসলিম বোনের একটিমাত্র  চিঠি হাতে পেয়েই খলীফার অনুমতি ক্রমে এক এক করে ভারতীয় উপমহাদেশের সিন্দু  প্রদেশের প্রত্যেকটি অঞ্চল হতে জুলুমের শেষ চিহ্ন পর্যন্ত ধ্বংস করে সেখানে ইসলামের সর্বকালের শান্তির বার্তা  পৌঁছে দেন এবং অল্পতেই উক্ত অঞ্চলের সমগ্র মজলুম অধিবাসীর হৃদয় জয় করেন।


হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ছিলেন বসরার গভর্নর, তখন ইসলামিক খিলাফত রাষ্ট্রের সাথে তুরস্ক ও আফ্রিকার যুদ্ধ চলছিল। খলীফা ওলীদ  ছিলেন মুসলিমদের খলীফা। তুরস্কের জিহাদের সেনাপতি  কুতায়বা যুদ্ধ বিষয়ে পরামর্শ করতে তার পক্ষ থেকে একজন দূত পাঠিয়েছেন হাজ্জাজ বিন ইউসুফের কাছে। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ  খিলাফতের সকল জিহাদ বিষয়ে নকশা তৈরি ও বিশ্লেষণ করতেন। তিনি মানচিত্র নিয়ে গবেষণা করার সময় এক দূতের আগমন শুনে তাকে তার নিকট আসতে বলেন। কিছুক্ষণ পর বর্ম পরিহিত পনের-ষোল বছরের এক যুবক প্রবেশ করল, তার মস্তকে তাম্র নির্মিত এক শিরস্রান সোভা পাচ্ছিল। দৃঢ় গঠন, দীপ্ত নয়ন এবং হালকা অথচ বদ্ধ ওষ্ঠ এক অসাধারণ দৃঢ়টা ও মনোবলের পরিচয় দিচ্ছিল।

যুবককে দেখে তিনি কুতায়বার পরিহাস করে বললেন আমি কুতায়বাকে একজন অভিজ্ঞ সেনাপতি প্রেরণ করতে বলেছিলাম, আর সে আমাকে আট বছরের বালককে পাঠিয়ে দিয়েছে। যুবক জবাব দিল,আমার বয়স ১৬ বছর ৮ মাস। আপনি যাকে পাঠাতে   বলেছেন আমি সেই। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ বললেন, তুমি কুতায়বার শ্রেষ্ঠতম সেনাপতি? কুতায়বার সাথে তোমার সম্পর্ক কি? যুবক জবাব দিল আমরা উভয়েই মুসলমান।

হাজ্জাজ বিন ইউসুফ বললেন, আমাকে বুঝিয়ে দাও যে সৈন্য বাহিনী হিরাতের ন্যায় সামান্য নগর জয় করতে অক্ষম, সে বোখরার মত দৃঢ় ও শক্তিশালী শহর কিভাবে জয়ের আসা করে? ওহ আগে বল তুমি মানচিত্র পাঠ করতে জান তো?

যুবক কোন প্রশ্নের জবাব না দিয়েই সম্পূর্ণ যুদ্ধ কৌশল এমন ভাবে মানচিত্র ধরে ধরে বুঝালেন যে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ বিস্ময়ের সাথে চুপ করে তার দিকে  তাকিয়েই  রইলেন। পরে জিজ্ঞাস করলেন তুমি কোন উপজাতির লোক? যুবক উত্তর দিল, আমি সাকাফি। হাজ্জাজ বললেন, তুমি সাকাফি?? তোমার নাম কি? যুবক উত্তর দিল, মুহম্মদ ইবনে কাশিম। হাজ্জাস চমকে বললেন, কাশিমের পুত্রের কাছে আমি এটাই আসা করেছিলাম। তুমি আমাকে চিন? ....... তুমি আমার ভাতুস্পুত্র।

আসলে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ যখন মক্কায় আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়রকে হত্যা করে মদিনায় ফিরে আসেন তখন থেকেই মদিনায় মুহম্মদ বিন কাশিমের পিতা, তার ভাই তাকে দেখতে পারতো না। আর এই কারনে মুহম্মদ বিন কাশিমের মা তাকে কখনো চাচা হাজ্জাজ বিন ইউসুফের সাথে দেখা করতে দেন নি।

পরে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ মুহম্মদ বিন কাশিমের সাথে তার নিজ কন্যা যুবায়দার বিয়ে দেন এবং তাকে দামেস্কে খলীফা ওলীদের নিকট যুদ্ধ বিষয়ক বিশ্লেষকের পদে নিযুক্ত করে প্রেরণ করেন। যাতে খলীফা  আফ্রিকার সাথে জিহাদের কৌশল ও বিশ্লেষনের জন্য   মুহম্মদ বিন কাশিমকে দায়িত্ব দেন। মুলত হাজ্জাজ  এই কাজে তাকে নিযুক্ত করেন নিজের ভাতুস্পুত্র হওয়ার কারনে নয় বরং তার যুদ্ধ কৌশলের উপর মুগ্ধ হয়েই।

মুহম্মদ   ইবনে কাশিম দামিস্কে খলীফার কাছে যাওয়ার পূর্বেই হাজ্জাজ বিন ইউসুফের কাছে মকরণ থেকে এক দূত আসে। দূত হাজ্জাজের কাছে এক মুসলিম বালিকার রক্তে লিখা এক চিঠি দিয়ে সিন্দু রাজ্যে কিছু মুসলিম এতিম ও নারী-পুরুষের উপর সেখানকার রাজার অত্যাচারের কথা বর্ণনা করেন। মুহম্মদ বিন কাশিমও তা শুনার পর সিদ্ধান্ত নেন দ্রুত দামিস্কে যেয়ে তিনি সবার আগে খলীফাকে সিন্দুর বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করার জন্য বলবেন। কিন্তু খিলাফত রাষ্ট্র তখন আফ্রিকা ও তুরস্কের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত এবং স্পেনের সাথে যুদ্ধ শুরু হবে হবে ভাব থাকায় খলীফা নতুন করে সিন্দুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সবাই চিন্তিত থাকেন। সৈন্য সংখ্যার সল্পতাই এই চিন্তার মুল কারন।


সিন্দুতে মুসলিমদের উপর অত্যাচারের কাহিনির সুত্রপাতঃ

অনেক আগে থেকেই লংকা দেশের সাথে আরব, রোম ও ইরানের ব্যবসা ছিল। লংকা দেশে কিছু আরব তাই প্রায় জন্ম থেকেই বসবাস করত। তখন রোম ও পারস্য (ইরান) ছিল সুপার পাওয়ার। তারা আরবদের উপর ক্ষমতা দেখিয়ে অন্য দেশের সাথে জোর পূর্বক ব্যবসা করত, এতে যে দেশের সাথে তারা ব্যবসা করত তারা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তারা রোম ও পারস্যের সাথে ব্যবসা করতে বাধ্য হত। ইতিমধ্যে আরবে এক বিশাল জাগরণের কারনে সেখানে এক নতুন আদর্শের ও জীবন ব্যাবস্থার উদ্ভব হয়েছে। সে ক্ষমতাধর আদর্শের সুবাদে  তারা রোম ও পারস্যকে পরাজিত করে নতুন সুপার পাওয়ার হয়।  এতে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলো খুবই খুশি হয়। তারা অনায়াসেই তাই আরবদের  সাথে ব্যাবসা করতে ইচ্ছা প্রকাশ করে। সে সুবাদে  কিছু উপটৌকন দিয়ে লংকার রাজা আব্দুস শামস নামক এক লংকান আরবকে আরব দেশে প্রেরণ করেন। কিন্তু  লংকান আরবের জাহাজ ডুবে যাওয়ায় সে ফিরে আসে। সেই লংকান আরবের এক কন্যা ছিল।

পরে একদিন আবুল হাসান নামক এক ব্যাক্তি তার জাহাজ নিয়ে লংকাতে ব্যবসা করার জন্য ৫০ টি ঘোড়া নিয়ে আসে। উপকূলে এসে তার সেই লংকান আরবের সাথে দেখা হয় ও পরে ভাল সম্পর্ক গড়ে উঠে। একদিন ঘটনা ক্রমে সকল লঙ্কান আরবই ইসলামের দাওয়াত পেয়ে একে একে   ইসলাম গ্রহণ করে।  ঘটনা ক্রমে আব্দুস শামসের কন্যার সাথে আবুল হাসানের বিয়ে হয়
। তাদের ঘরে দুই সন্তান হয় । তারা  লংকাতেই থেকে যায়। আবুল হাসানের সন্তানদের নাম  খালেদ ও তার ২ বছর ছোট মেয়ে নাহিদ।
একদিন আবুল হাসানকে লংকার রাজা আবারও কিছু উপহার দিয়ে আরবের বসরার গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ও দামেস্কের খলীফার নিকট প্রেরণ করে। লংকার রাজার সাথে আবুল হাসানের খুবই ঘনিসট সম্পর্ক গড়ে ওঠায় তাকেই রাজা বিশ্বাস করে এই দায়িত্ব দেয়। কিন্তু আবুল হাসানের নৌকা  সিন্দুর কাছা কাছি এলে সিন্দুর রাজা তা লুটপাট করে আবুল হাসানকে বন্দী করে রাখে।  লংকায় সবাই ভাবে আবুল হাসান পানিতে ডুবে ইন্তেকাল করেছেন। 

পরে সেখবর খলীফা পেয়ে যুবায়ের নামক এক দূতকে সেখানকার এতিম শিশু ও নারীদেরকে আরবে নিতে পাঠান এবং তার সাথে লংকার রাজার কাছে কিছু উপহার পাঠান। যুবায়র লংকার রাজাকে একথা বললে রাজার ছেলে-মেয়েরা কান্নায় ভেঙ্গে পরে। কারন আবুল হাসানের ছেলে খালিদ ও মেয়ে নাহিদের সাথে রাজার ছেলে ও মেয়ের ঘনিসট বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। কিন্তু খালিদ বলে সে যেহেতু একজন  মুসলিম মুজাহিদের সন্তান তাই সে আরবে যেয়ে স্বজাতির সাথে কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে চায়। তাই পরে আর রাজা তাদের বারন না করে যুবায়রের সাথে পাঠিয়ে দেয়। রাজা তাদের সাথে খলীফার নিকট নিজের সেনাপতিকে দিয়ে
  কিছু উপহার  আরেক জাহাজে করে  পাঠায়। জাহাজ দুটি আরবের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। 
পথে জাহাজ দুটো ডাকাতদের পাল্লায় পরে। সেখান থেকে মুসলিমরা দাকাতের সরদার গন্সুকে আটক করে এবং  জয়রাম ও মায়াদেবী নামে দুই ভাই-বোনকে ডাকাত থেকে মুক্ত করে।  পরে একদিন যুবায়র গন্সু ডাকাতের কাছে তার ডাকাতি পেশায় ঢুকার করুন কাহিনী শুনে আর কখনো ডাকাতি করবেনা এই প্রতিশ্রুতিতে  তাকে ক্ষমা করে দেয়। জয়রাম জাহাজ দেবলের উপকূলে থামিয়ে দেবলের গভর্নর প্রতাপ রায়ের কাছে মেহমান হিসেবে আসা জাহাজ দুটোর খবর দিলে প্রতাপ রায় জাহাজ দুটোর সকল উপহার ছিনিয়ে নিয়ে মুসলিম নারী-পুরুষদের সিন্দুর অত্যাচারী রাজা দাহির-এর কাছে নিয়ে যায়। রাজা উপহার  সহ সকলকে বন্দী করে।

জাহাজ আটক করার আগেই গন্সু খালিদ, নাহিদ ও মায়াকে জোর করে এক নৌকায় তুলে তাদের উদ্ধার করে পালিয়ে  গভির জঙ্গলে নিজের কেল্লায় নিয়ে যায়। পরে গন্সু ও তার দল জুবায়র ও জয়রামকে রাজার কাছ থেকে পালিয়ে উদ্ধার করে। জুবায়র কেল্লায় ফিরে এলে নাহিদ তার রাক্তে লিখা এক চিঠি দিয়ে তাকে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের কাছে পাঠায়।  





জুবায়র হাজ্জাজ বিন ইউসুফের নিকট সব ঘটনা খুলে বলে, হাজ্জাজ খুবই রাগান্বিত হয়ে বলেন, “ছাগও তাহলে সিংহকে শিং দেখাতে শুরু করেছে।"  পরে  জুবায়র হাজ্জাজকে সেই চিঠিটি দেয়, হাজ্জাজ পড়তে থাকে ..............


“দূতের মুখে মুসলমান শিশু ও নারীদের বিপদের কথা শুনে আমার দৃঢ় বিশ্বাস বসরার শাসনকর্তা স্বীয় সৈন্য বাহিনীর আত্মমর্যাদা সম্পন্ন সৈনিককে অশ্ব প্রস্তুত করার আদেশ দিয়েছন।  সংবাদ বাহককে আমার এ পত্র দেখাবার প্রয়োজন হবে না। হাজ্জাজ বিন ইউসুফের রক্ত যদি শীতল হয়ে জমে গিয়ে থাকে তবে হয়ত আমার এ পত্রও বিফল হবে। আমি আবুল হাসানের কন্যা। আমি ও আমার ভাই এখনো শত্রুর নাগালের বাইরে। কিন্তু আমার অন্য সকল সঙ্গী শত্রু হাতে বন্দী - যার বিন্দু মাত্র দয়া নাই। বন্দীশালার সেই অন্ধকার কুঠুরির কথা কল্পনা করুন - যেখানে বন্দীরা মুসলিম মুজাহিদদের অশ্বের ক্ষুরের শব্দ শুনার জন্য উৎকর্ণ ও অস্থির হয়ে আছে।  আমাদের জন্য অহরহ সন্ধান চলছে। সম্ভবতঃ অচিরেই আমাদেরকেও কোন অন্ধকার কুঠুরিতে  বন্দী করা হবে। এও সম্ভব যে, তার পূর্বেই আবার যখন আমাকে মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে দেয়া হবে এবং আমি সেই দুরদৃষ্ট হতে বেঁচে যাব।  কিন্তু মরবার সময় আমার দুঃখ থেকে যাবে যে, যেসব ঝাঞ্চাগতি অশ্ব তুর্কিস্তান ও আফ্রিকার দরজা ঘা মেরেছে, স্বজাতির এতীম ও অসহায় শিশুদের সাহায্যের জন্য তারা পৌছাতে পারল না। এও কি সম্ভব যে তলোয়ার রোম ও পারস্যের গর্বিত নরপতিদের মস্তকে  বজ্ররূপে আপতিত হয়েছিল, সিন্দুর উদ্ধত রাজার সামনে তা ভোঁতা প্রমাণিত হল। আমি মৃত্যুকে ভয় করি না। কিন্তু হাজ্জাজ,   তুমি যদি বেঁচে থাক, তবে আমার আত্মমর্যাদাশীল জাতির এতীম ও বিধবাদের সাহায্যে ছুটে এস।

                                                                                                                      নাহীদ
                                                                                      আত্মমর্যাদাশীল জাতির এক অসহায় কন্যা”।

 
 
হাজ্জাজ বিন ইউসুফ চিঠির অর্ধেকটা পড়েই  আরও ক্রোধান্নিত হয়ে জুবায়র ও মুহম্মদ বিন কাশিমকে দামেস্কে খলীফার কাছে পাঠান, এই বলে যে তারা যেন যেভাবেই হোক খলীফাকে জিহাদের জন্য উৎবুদ্ধ করে। পথে বিভিন্ন ক্যাম্পে সবচেয়ে তাজা ঘোড়াগুলো নিয়ে যেতে বলেন তাদের।

পথে মুহম্মদ বিন কাশিম ও জুবায়র এক ক্যাম্পে ৫ টি ঘোড়া দেখে ২ টি নিতে চাইলে খাদেম বলে, এগুলো সুলায়মান ইবনে আব্দিল মালিকের ঘোড়া, যিনি খলীফার ভাই এবং পরবর্তী খলীফা হয়ার দাবি করেন। উনি কাল দামিস্কে যুদ্ধবিদ্যার প্রদর্শনীতে আনন্দ ভ্রমণে যাবেন। মুলতঃ সুলায়মান ছিলেন খুবই আরাম প্রিয় লোক। পরে সুলায়মানের কাছে মুহম্মদ বিন কাশিম ঘোড়া চাইলে সে ও তার বন্ধুরা এতে অস্বীকৃতি জানায় ও তার বন্ধু সালেহ মুহম্মদ বিন কাশিমের সাথে মারামারি করতে চায়। বিন কাশিম তার কথায় পাত্তা না দিয়ে জোর করে ২টি ঘোড়া নিয়ে যায়, তারা তার বীরত্ব দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে



মুহম্মদ বিন কাশিম দামিস্কে পৌছলে খলীফাও চিঠি পড়ে রেগে জান ও মজলিশের  সবাই ঘটনা শুনে জিহাদ জিহাদ ধ্বনি তুলে। খলীফা মুহাম্মদ বিন কাশিমকে বলেন, যেহেতু আমাদের সকল সৈন্য এখন তুরস্কে ও আফ্রিকায় ব্যাস্ত তাই তোমাকে এই যুদ্ধের জন্য নতুন করে সাধারন জনগন থেকে সৈন্য নিতে হবে। আর এ ব্যাপারে কোন মুসলিমই জিহাদে না যেতে রাজি হবে না। তাই খলীফা পরের দিন যুদ্ধাস্ত্র প্রদর্শনীতে মুহাম্মদ বিন কাশিমকে তার আপন ভাই সুলায়মানের সাথে লাগতে বলেন যাতে মুহম্মদ বিন কাশিম জিতলে তিনি সাধারন জনতাকে বক্তব্য দিয়ে তখনি জিহাদের জন্য উৎবুদ্ধ করতে পারেন।


পরের দিন খেলার মাঠে জুবায়র সোলায়মানের বন্ধু সালিহ ও মুহাম্মদ বিন কাশিম সোলায়মানকে পরাজিত করলে সবাই তাদের ২ জনের প্রতি অবিভুত হয়ে যায়। কারন সোলায়মান আর সালিহ ছিল সে সময়ের চাম্পিয়ন। সকলে মুহম্মদ বিন কাশিমকে ঘিরে ধরলে তিনি জনসাধারণকে সিন্দুর ঘটনা বলেন। জনসাধারণ ঘটনা শুনে  জিহাদ জিহাদ ধ্বনি দিয়ে চারিদিক মুখরিত করে তোলে। খলীফা ওলীদ তখনি সিন্দুর বীরুধে  জিহাদ ঘোষণা করে ফেলেন।  বিন কাশিম জনগন থেকে সৈন্য রিক্রুট করেন। এসময় উমর ইবনে আব্দিল আযীয  তাকে যুদ্ধের পরে সেখানকার রাজার অত্যাচারিত সাধারণ  জনতার সাথে ভাল  আচরনের উপদেশ দেন, তাদের আহত ব্যাক্তিদের সেবা-চিকিৎসা করার পরামর্শ দেন


ফজরের নামাজ পরে মুহম্মদ বিন কাশিম ৫ হাজার সৈন্য নিয়ে বসরার উদ্দেশ্যে রওনা হন। দামেস্কে তার সৈন্য সংখ্যা ৫ হাজার হলেও বসরায় এসে বসরার আরও সৈন্য মিলে মোট ১২ হাজার সৈন্য হয়। তার স্বীয় স্ত্রী জুবায়দা ও তার মা  বসরার প্রতিটি ঘরে নারীদের মাঝে নাহিদের করুন কাহিনী প্রচার করে এবং সকল নারীই নিজেকে এক একজন নাহিদ ভাবতে শুরু করেন। আর এই জন্যই নারীরা পুরুষদের উৎসাহ দেয়ায় বসরাতে আরও সৈন্য যোগ হয়। ১২ হাজার সৈন্যের মধ্যে ৬ হাজার অশ্বারোহী, ৩ হাজার পদাতিক ও ৩ হাজার রসদ বাহী উটের সাথে ছিল।

তখন ইসলামী খিলাফত রাষ্ট্র মকরণ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। মকরনের পরেই ছিল সিন্দু। উক্ত ঘটনার পর মকরনের শাসক সিন্দুতে বন্দীদের ছাড়িয়ে আনার জন্য ২০ জন দূত সহ প্রেরণ করে।  কিন্তু মকরনে ২০ জনের  মধ্যে মাত্র ২ জনকে সিন্দুর রাজা ফেরত পাঠায়। এই খবরও মুসলিমদের মাঝে অগুনে আরও তেল যোগ করে।


মুহম্মদ বিন কাশিমের সৈন্য যখন মকরন সিমান্ত অতিক্রম করে সিন্দুর পাহাড়ি অঞ্চল  লাসবেলায় প্রবেশ করে  তখনি সিন্দু রাজার তরুন সেনাপতি ভীম সিংহ ২০ হাজার সৈন্য সহ তাদের প্রতিরোধ করে। তারা পাহাড় থেকে বড় বড় পাথর নিক্ষেপ করে মুসলিমদের ক্ষতি করতে থাকে। এভাবে তারা তাদের যাত্রা কয়েক দিন শ্লথ করে দেয়। একদিন মুহম্মদ বিন কাশিম গোয়েন্দা যোগে খবর পেলেন যে ২০ মাইল দুরের এক কেল্লা থেকে এই হামলা চালানো হচ্ছে। তাই তিনি রাতে এশার নামাজ পরে ৫০০ সৈন্য নিয়ে সেই কিল্লা আক্রমণ করতে যান।  তিনি বাকি সৈন্য মুহম্মদ ইবনে হারুনের নেতৃত্বে রেখে কিল্লার দিকে যান। কিল্লায় খবর পৌঁছে যে,  মুহম্মদ ইবনে কাশিম তাদের কিল্লা দখল করতে আসছে। তাই ভীম সিংহ ৩০০ সৈন্য নিয়ে কিল্লার বাইরে তাদের ঠেকাতে যান। তারা বিন হারুনের সৈন্যকে আক্রমণাত্মক সৈন্য ভেবে তাদের পিছু নেয়। অপর দিকে মুহম্মদ ইবনে কাশিম ৫০০ সৈন্য নিয়ে পাহাড়ের আড়াল থেকে খালি কিল্লায় ঢুকে পরেন। কিল্লা দখল করে তিনি সব সৈন্যকে চলে যেতে অনুমতি দেন।সৈন্যরা এটাকে প্রতারণা ভেবে জিজ্ঞেস করে, আপনি আমাদের সাথে এমন কেন করছেন? বিন কাশিম উত্তর দেন, “শত্রুকে ধ্বংস করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, বরং তাদের শান্তির পথ দেখানোই আমাদের উদ্দেশ্য”।


এদিকে ৫০ জনের অশ্বারোহী  বাহিনী  নিয়ে খালিদ, নাহিদ, মায়া ও জয়রাম কেল্লা বিজয়ের খবর পেয়ে কেল্লায় প্রবেশ করে। তারা সকলে সকলকে পরিচয় করিয়ে দেন। ইতি মধ্যে মায়াদেবী ও তার ভাই জয়রাম ইসলাম গ্রহণ করে তাদের নাম যূহরা ও নাসিরুদ্দীন রেখেছে। গন্সুও ইসলাম গ্রহণ করে তার নাম সা’আদ রেখেছে। 



এদিকে ভীম সিংহ তার সৈন্য বাহিনী নিয়ে হারুনের সৈন্যের উপর আক্রমণ করলে মুহম্মদ বিন কাশিম কেল্লা থেকে বের হয়ে উল্টো দিক দিয়ে  ভীম সিংহের উপর আক্রমণ করে তার সৈন্য নিয়ে হারুনের সৈন্যের সাথে মিশে  যায়। ভীম সিংহের সৈন্যরা সবাই ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে কেল্লার দিকে সরে গেলে কেল্লার প্রাকারের উপর থেকে তাদের উপর তীর নিক্ষেপ করে মুসলিম বাহিনী। এতে অনেক সৈন্য মারা যায় ভীম সিংহের। পরে তারা আত্মসমর্পণ করে মুহম্মদ বিন কাশিমের কাছে। মুহম্মদ বিন কাশিম শহীদদের জানাজার পরে আহত সিন্দু সৈন্যদের সেবা-চিকিৎসা করা শুরু করে।  তিনি শল্য চিকিৎসকের পাশাপাশি নিজেও আহতদের শল্য চিকিৎসা করতে থাকে। তিনি নিজেও শল্যচিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তিনি নিজ হাতে সিন্দু সেনাপতি ভীম সিংহের চিকিৎসা করে তার মন জয় করে ফেলেন। ভীম সিংহ সুস্থ হলে তাকে মুক্তি দিলে সে সিন্দু রাজ্যে ফিরে যায়।

লাসবেলা  জয়ের পর মুহম্মদ বিন কাশিম  নিজে জুবায়রের সাথে নাহিদের এবং খালিদের সাথে জুহরার (মায়াদেবী) বিয়ে দেন। এদিকে সেবা চিকিৎসার কারনে সিন্দু সৈন্যরা দলে দলে মুহম্মদ বিন কাশিমের প্রতি অবিভুত হয়ে তার দলে যোগ দিতে লাগল। তারা এযাবতকাল সিন্দু রাজার যে অত্যাচার সহ্য করছিল তার পরিত্রাণ পেল। তারা মুহম্মদ বিন কাশিমকে তাদের নতুন দেবতা ভাবতে লাগল।

মুহম্মদ বিন কাশিম এবার দেবল অবরোধ করলেন। তিনি দববাবা (সেকালের অত্যাধুনিক যুদ্ধ কামান, যা দিয়ে বড় বড় পাথর মারা যেত) ও মিনজানিকের সাহায্যে দেবলের প্রাচীর ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করলে রাজা পালিয়ে যায়, আর বাকি সৈন্যরা আল্লাহু আকবর বলে মুসলিমদের কাছে  আত্মসমর্পণ করে। দেবল বাঁচাতে সিন্দুরাজা দাহির নিজেই সিন্দু থেকে চলে আসে। সে যতদিন সেখানে থাকে তত দিন সে সেখানকার  অনেক নারীর সম্মান হরণ করে, এতে সেই নারীরা মুহম্মদ বিন কাশিম  এর কাছে রাজার ব্যাপারে নালিশ করে ও মুহম্মদ বিন কাশিমকে তাদের দেবতা ভাবতে থাকে, যিনি অত্যাচার থেকে তাদের রেহাই দিয়েছেন। 
রাজা পালিয়ে নীরুন দুর্গে আশ্রয় নেয়। 

মুহম্মদ বিন কাশিম নিরুন দুর্গ ও পরে সয়ুন ও পরে সবিস্তান দুর্গ জয় করেন। জয় করার পর এ স্থানের মানুষদের মনও  তিনি  পূর্বের মত জয় করেন। তারা সবাই মুসলিমদের সাথে যুক্ত হয়ে মুসলিমদের পাল্লা ভারী করতে থাকে
।  

রাজা মনে করেছিলেন মুহম্মদ বিন কাশিম প্রচণ্ড খরস্রোতী সিন্দু নদী পার হয়ে ওপারে যেয়ে ব্রাক্ষণাবাদ আক্রমণ করতে পারবেন না। তাই তিনি সেখানে যেয়ে অন্য রাজাদের সাথে মিলে শেষ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। কিন্তু নদীর জেলে ও মাঝিরাই মুহম্মদ বিন কাশিমকে ওপারে যেতে সাহায্য করে। ৭১৩ সালের জুন মাসে মুহম্মদ বিন কাশিম বিনা বাধায় নদী পার হয়ে ব্রাক্ষণাবাদ এর নিকটে রাজা দাহিরের সৈন্যের উপর আক্রমণ করেন। এ যুদ্ধে রাজা নিহত হয়।
 
পরে মুহম্মদ বিন কাশিম ব্রাক্ষণাবাদ আক্রমণ করলে রাজপুত্র জয় সিংহ সেখান থেকে পলায়ন করে । পরে মুহম্মদ বিন কাশিম মুলতান ও আরোর জয় করেন। একদিন আরোরের এক পুরহিত মুহম্মদ বিন কাশিমের মূর্তি বানিয়ে শহরে ঘুরান। মুহম্মদ বিন কাশিম এই অবস্থা দেখে ইসলামে মূর্তি পূজা হারাম তা সকলকে বুঝিয়ে দেন ও মূর্তিটি ধ্বংস করেন। তাদের বুঝিয়ে বলেন মানুষ কখনো মানুষকে ইবাদত করতে পারে না। ইবাদত পাওয়ার মালিক কেবল আল্লাহ।  মুলতান অবরোধের সময় মুহম্মদ বিন কাশিম হাজ্জাজ বিন ইউসুফের ইনেকালের খবর  পেয়েছিলেন। 


একদিন ইয়াজিদ নামক এক সেনাপতির নেতৃত্বে ৫০ জন অশ্বারোহীর এক দল এসে মুহম্মদ বিন কাশিমকে এক পত্র দিয়ে বলেন এটি খলীফা সুলায়মান এর পত্র। মুহম্মদ বিন কাশিম অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন খলীফা সুলায়মান??  তিনি উত্তর দেন, খলীফা ওলীদ ইন্তেকালের পর সুলায়মান খিলাফতের মসনদে বসে। চিঠি পড়ে মুহম্মদ বিন কাশিম বলেন, “আমি সুলায়মানের কাছে এমনটাই আশা করেছিলাম”।  সুলায়মান ছিল হাজ্জাজ বিন ইউসুফের চরম শত্রু। মুহম্মদ বিন কাশিম হাজ্জাজের জামাতা হয়ায় সে শত্রুতা বসত  তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। তাই সে মুহম্মদ বিন কাশিমকে বন্দী করতে ৫০ জনের ঐ দলকে পাঠায়। খালিদ, ভীম সিংহ ও জুবায়র সহ সমগ্র সিন্দুবাসী এর বিরধিতা করে। তখন সমগ্র মুসলিম বাহিনীর সৈন্য ১২ হাজার থেকে ১ লক্ষ্যে পৌছায়, যদিও সবাই তখনো মুসলিম ছিল না, কিন্তু তারা সমগ্র ভারত থেকে অত্যাচার  দূর করার জন্য তাদের সেনাপতি মুহম্মদ বিন কাশিমের সাথে আগুনেও ঝাপ দিতেও প্রস্তুত ছিল।  


মুহম্মদ বিন কাশিম মুসলিমদের বাধাকে উপেক্ষা করে বললেন, এটি আমিরুল মুমিনিন খলীফার আদেশ,  যা আমাকে পালন করতেই হবে। মুলতঃ উনি জানতেন যে সুলায়মান কখনোই তাকে ছেড়ে দিবে না
। তবুও তিনি স্বেচ্ছায় এরূপ করেছেন যেন, সমগ্র ইসলামী খিলাফত  দুভাগে ভেঙ্গে না যায় এবং নতুন জয়ী  সিন্দুর মুসলিমরা যেন তার জন্য খলীফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করে বসে। তিনি বলতেন, আমি মরে গেলে শুধু একজন মুহম্মদ বিন কাশিম মারা যাবে, আর আমি খলীফার কথা না শুনলে সমগ্র খিলাফত দুভাগে ভেঙ্গে যাবে। ইয়াজিদও তাকে বলেছিলেন আপনি দয়া করে যাবেন না, উনি যা করার আমাকে করবেন। পরে ইয়াজিদ সকলকে আশ্বাস দেন এই বলে যে, তিনি মুহম্মদ বিন কাশিমকে খলীফার সাথে দেখা করিয়ে নিজ দায়িত্বে সিন্দুতে এনে দিবেন।

অবশেষে মুহম্মদ বিন কাশিম তাদের সাথে যাত্রা করলেন। শহরের প্রত্যেকটা নারী-পুরুষ  তার জন্য কান্নার রোল ছেড়ে দেয়, তারা যেন তাদের সেনাপতি, তাদের অত্যাচার হতে রাক্ষাকারীকে শেষ বারের মত বিদায় দিচ্ছে।   সুলায়মানের ইচ্ছা ছিল তাকে শিকল পড়িয়ে বন্দী বেশে নিয়ে আসা। কিন্তু মুসলিমদের মন ভেঙ্গে যাবে বিধায় ইয়াজিদ এমনটা করেন নি। এদিকে ইয়াজিদ যুবায়েরকে উমর ইবনে আব্দিল আযীযের নিকট পাঠায় এই বলে যে, তিনি যেন  সুলায়ামানের নিকট যেয়ে এই ব্যাপারে কথা বলে সিন্দু বিজয়ী মুহম্মদ বিন কাশিমকে রক্ষা করে। যুবায়ের সাথে সাথে ঘোড়া নিয়ে রওনা হয় মদিনার দিকে। পরে সে উমার ইবনে আব্দিল আযীযকে বললে উনি দ্রুত দামেস্কে সোলাইমানের কাছে যেয়ে তাকে হুশিয়ার করে বলেন, এরূপ করলে তিনি সোলায়মানের বিরুদ্ধে সমগ্র খিলাফতকে এক করে তার পতন ঘটাবেন। 

এদিকে সুলায়মান মুহম্মদ বিন কাশিম ও হাজ্জাজকে চরম শত্রু ভাবাপন্ন ব্যাক্তি তার বন্ধু সালেহকে মুহম্মদ বিন কাশিমের গর্দান কাটতে ওয়াসিত পাঠায়। ওয়াসিত ছিল এমন এক যায়গা যেখানে খুব কম লোক একাজে বাধা দিবে। কারন সেখানকার বেশির ভাগ লোকই মুহম্মদ বিন কাশিমের বংশের শত্রু। সুলায়মান মুহম্মদ বিন কাশিমকে বসরায় নিতে বারন করেন কারন সেখানে বসরার প্রত্যেকটা নারী-পুরুষ সিন্দু বিজয়ীকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে পথ চেয়েছিল। কিন্তু এক রাতে মুহম্মদ বিন কাশিম ইয়াজিদের অনুমতি ক্রমে গোপনীয়তার সাথে তার স্ত্রী যুবায়দার সঙ্গে  শেষ সাক্ষাৎ করেন। 


অবশেষে সুলায়মান উমার ইবনে আব্দিল আযীযের কথায় লজ্জিত হয়ে যুবায়রকে দিয়ে সালেহ এর কাছে পত্র পাঠায়। যুবায়র আবারো দ্রুত ঘোড়া নিয়ে ওয়াসিতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ওয়াসিত এসে তিনি এক ভিড় দেখতে পেয়ে জনগণকে জিজ্ঞাস করেন এটি কিসের ভিড় ? তারা জবাবদেয় এটি সিন্দু বিজয়ী মুহম্মদ বিন কাশিমের জানাজার ভিড়!! ... জুবায়র তখনই বেহুশ হয়ে ঘোড়া থেকে পরে যায়। লোক-জন তার হাতে একটি চিঠি দেখে তা পড়া শুরু করে,  সেখানে সালেহকে উদ্দেশ্য করে লিখা ছিল, সে যেন সসম্মানে মুহম্মদ বিন কাশিমকে দামিস্কে পাঠিয়ে দেয়। তখনই  শহরের ৫০ জন ক্ষুদ্ধ যুবক নগ্ন তরবারি নিয়ে সালিহের ঘর অভিমুখে রওনা হয়ে তার উপর ঝাপিয়ে পরে।  



৬২২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৭১৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মাত্র ৯১ বছরে ইসলামি খিলাফত ব্যাবস্থা  মদিনা থেকে পশ্চিমে আফ্রিকা ও পূর্বে ভারত পর্যন্ত ছড়িয়ে পরে। মুহম্মদ বিন কাশিমকে এভাবে শত্রুতা বশত হত্যা করা না হলে হয়ত তখনই সেটা চীন-রাশিয়া- অস্ট্রেলিয়া  ছাড়িয়ে ইউরোপ-আমেরিকাতেও  ছড়িয়ে পরত। মূলত ঘটনা তো এই যে বিশ্বজগতের প্রতিপালক যা লিখে রেখেছেন তার বিন্দু মাত্রও পরিবর্তন যোগ্য নয়  আর তাইতো এক সময় সেই  খিলাফত ব্যাবস্থাও রাষ্ট্রীয় ভাবে ধ্বংস হয়ে গেল। তবে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) আমাদের নিশ্চিত করে গেছেন সেই খিলাফত আবার আসবে, নবুওতের আদলে। এবার আসলে এটি  আর কখনোই   ধ্বংস হবে না, পৃথিবীর প্রত্যেকটা ঘরে ঘরে পৌছিয়ে দিবে ইসলাম এবং চলবে কিয়ামত পর্যন্ত।




[রেফারেন্সঃ মুহম্মদ ইবন কাশিম ........... নসীম হিজাযী]

- No comments

সালাহুদ্দীন আইউবি ও বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয়

by Rashedul Islam (Notes) on Wednesday, May 22, 2013 at 9:08pm


[সেদিন একটা বই পড়ছিলাম পাশে বসে থাকা বন্ধু জিজ্ঞেস করল বইটি কি নিয়ে লেখা? আমি উত্তর দিলাম সালাহুদ্দীন আইউবিকে নিয়ে লেখা। ও আমাকে জিজ্ঞেস করল, সে আবার কে?! ... বন্ধু আমার একজন  মুসলিম। কিন্তু সে সালাহুদ্দীন আইউবিকে চিনে না (!)।
জাতি আসলে সেই মহাপুরুষ দের ভুলে যেতে চলেছে যারা ইসলামের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়েছে।
জাতি আসলে তাদের ভুলে কাদেরকে মনে রাখছে? তারা কাদের জীবনী পড়ছে?? কাদের সম্পর্কে জানছে ?? তাই ভাবলাম জাতিকে কিছু জানানো  যায় কিনা। তাই এই লেখাটা লেখা। যতটুকু পেরেছি সংক্ষিপ্ত করে লিখেছি। এর চেয়ে সংক্ষিপ্ত করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ] [ দয়া করে নিজে জেনে শেয়ার করে অন্যকে জানার সুযোগ করে দিন ]


মহান আল্লাহ এই মহাজগতের সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা। আল্লাহ মানুষ সহ বহু প্রকারের প্রাণী, জীবজন্তুসৃষ্টি করেছেন। তাদের মধ্যে মানুষকে করেছেন সৃষ্টির সেরা জীব। আর তাদের হাতেই ন্যাস্ত করেছেন পৃথিবীর পরিচালনার ভার। আর সঠিক উপায়ে পরিচালনার জন্য পৃথিবীর ঊষালগ্ন থেকেই সেখানে প্রেরণ করেছেন নবী-রাসুল যারা  মানুষের মাঝে আল্লাহর আইন-কানুন ও জীবন চলার পদ্ধতি শিক্ষা দিয়ে সে অনুযায়ী চলতে মানুষকে সাহায্য করেছেন। আর নবী-রাসুলদের এই কাজের সাহায্যার্থে আল্লাহ তাদের অনেকের উপর প্রেরণ করেছেন আসমানি কিতাব এবং তাদের দিয়েছেন সর্বযুগের চিরন্তন আদর্শ ইসলাম। রাসুল (সাঃ) ছিলেন সেই নবী – রাসুলদের মধ্যে শেষ রাসুল যার পর আর কোন নবী বা রাসুল আসবেন না। কিন্তু মানুষের মাঝে আল্লাহর আইন-কানুন ও জীবন চলারপদ্ধতি পৌছিয়ে দিতে এবং সেগুলো সূক্ষ্মরূপে - সুশৃঙ্খল উপায়ে পালনের উদ্দেশ্যে সমগ্র পৃথিবীতে একক রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষের মধ্য থেকে নির্বাচিত খলীফাদের  দায়িত্ব দিয়েছেন। আর সেই ক্রমধারায় নবী-রাসুলের পর খলিফাগণ দাওয়া ও জিহাদের মাধ্যমে একের পর এক অঞ্চলে ইসলামকে পৌছিয়ে দিয়েছেন। সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবি ছিলেন তেমনি একজন সুলতান যিনি ইসলামিক রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোর একটি বায়তুল মুকাদ্দাস ( ইহুদী-খৃষ্টানদের কথ্য মতে জেরুজালেম) ক্রুসেডারদের দ্বারা দখলের  প্রায় ৯০ বছর পর পুনরায় (হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) এর খিলাফতের সময়  সেটি ইসলামিক রাষ্ট্রের ছায়াতলে আসে) তাদের হাত থেকে মুক্ত করেন, এবং সেখানকার মুসলিম নাগরিকদের তাদের অত্যাচারের  হাত  থেকে  রক্ষাকরেন।


১১৬৯ সালের ২৩ মার্চ। সালাহুদ্দিন আইউবি গভর্নর ও সেনাপ্রধান হয়ে মিসর আগমন করেন।ফাতেমি খিলাফতের কেন্দ্রীয় খলীফা তাকে এ-পদে নিয়োগ দিয়ে বাগদাদ থেকে প্রেরণ করেন।তার (দ্বাদশ শতাব্দীর) আগে থেকেই ইউরোপ, ফ্রান্স ও জার্মানি ইসলামিক রাষ্ট্র ভাঙ্গার  জন্য  ক্রুশ ছুঁয়ে শপথ করে, ইসলামের নাম নিশানা মুছে দিয়ে বিশ্ব জুড়ে ক্রুশের রাজত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শুরু করে নানা চক্রান্ত। সেই সঙ্গে তারা চালায় সশস্র অভিযান। মুসলিমদের থেকে ছিনিয়ে নিয়ে দখল করে রাখে  ইসলামের মহান স্মৃতি চিহ্ন  প্রথম কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস।  


 সালাহুদ্দীন আইয়ুবি ছোটবেলায় গভর্নর নিজামুল মূলক এর মাদরাসায় জাগতিক ও আদর্শিক  পড়াশুনা ও যুদ্ধ বিদ্যায় জ্ঞান লাভ করেন।  রাজনীতি, কূটনীতি, ভূগোল, ইতিহাস ও প্রত্যক্ষ যুদ্ধ কৌশলের উপর গভীর জ্ঞান ও আগ্রহের কারণে চাচা  শেরেকাহ ও 
 নুরুদ্দীন জঙ্গী  তাকে স্পেশাল প্রশিক্ষণ প্রদান করেন।  প্রশিক্ষণটি মূলত তৈরি হয় এক যুদ্ধের ময়দানে , যেখানে সালাহুদ্দিন আইউবি দীর্ঘকাল আবরোধের মধ্যে যুদ্ধ করেও হতাশ না হয়ে সম্পূর্ণ ঠাণ্ডা মাথায় সৈন্যদের নিয়ে যুদ্ধ করে ফিরে আসেন। এর পরই  নুরুদ্দীন  জঙ্গী  তাকে মিশরের গভর্নরের পদের জন্য মনোনীত করেন। 


 সুলতান নুরুদ্দীন জঙ্গীও চিন্তা চেতনায় ছিলেন সালাহুদ্দীন আইউবির মতই।  সেসময় যেখানে ইসলামিক খিলাফতের সব আমির, গভর্নর ও  উজিররা খৃষ্টানদের চক্রান্তে পা দিয়ে তাদের থেকে সুন্দরি মেয়ে ও প্রচুর ধন-সম্পদ নিত এবং মূলত ক্ষমতার লোভে ইসলামিক রাষ্ট্র থেকে স্বাধীন হয়ার স্বপ্ন দেখত, ঠিক তখনই সালাহুদ্দীন আইয়ুবি ও নুরুদ্দীন জঙ্গী ইসলামিক খিলাফত রাষ্ট্রকে ইহুদী–খৃষ্টানদের চক্রান্ত থেকে মুক্ত করে বাইতুল মুকাদ্দাস কে সেই ক্রুসেডারদের থেকে মুক্ত করার জন্য একের পর এক জিহাদ করে গেছেন।


সালাহুদ্দীন আইয়ুবি মিশরের গভর্নর হয়ার পরই সর্ব প্রথম  সেখান থেকে খৃষ্টানদের চক্রান্তে পা দেয়া আমির-উজিরদের সুকৌশলে সরকারী দায়িত্ব থেকে দূরে সরিয়ে দেন। এজন্য তাকে মারার জন্য ক্রুসেডারদের দালালরা অনেক ফন্দি আটার পরও তারা ব্যর্থ হয়। দালালরা অনেক সুন্দরী মেয়ে ব্যবহার করেও পাথরের মত সালাহুদ্দীনকে গলাতে পারেনি। যেখানে অন্যান্য আমিররা সানন্দেই তাদের গ্রহণ করত।

দালালরা সালাহুদ্দীনকে গলাতে না পেরে তাকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে নিজেরা ক্ষমতায় বসার জন্য মিশরের সেনাবাহিনির মধ্যে থাকা সুদানি সেনাদের মধ্যে বিদ্রোহ করার চেষ্টা করে এই বলে যে তোমরা সুদানি তারা মিসরি। সুদানের বর্ডার মিশরের কাছে থাকাতে  বিদ্রোহের পর সেখান থেকে আক্রমণ করাও সহজ ছিল। কিন্তু সালাহুদ্দীন আইয়ুবি তার চৌকস গোয়েন্দা প্রধান আলি বিন সুফিয়ান কে দিয়ে সব তথ্য আগেই পেয়ে যান । আর খুবই কৌশলে তাদের বিদ্রোহ দমন করেন। এদিকে সেনা বিদ্রোহ করিয়ে দালালরা সম্রাট ফ্রাঙ্ককে আক্রমণ করার আগমনও জানায়। কিন্তু সালাহুদ্দীন আইউবি আগেই বিদ্রোহ দমন করেন, আর যখন পরে ফ্রাঙ্ক-এর সেনাবাহিনী আসে তারা পুরোপুরিভাবে সালাহুদ্দীনের কাছে পরাজিত হয়। এই দিকে ফ্রাঙ্ক মিসরে আক্রমণ করলে সিরিয়া থেকে নুরুদ্দীন জঙ্গিও ফ্রাঙ্ক-এর দেশে আক্রমণ করে বসেন। তাতে আক্রমনের খবর পেয়েই ফ্রাঙ্ক তার দেশে ফিরে যেয়ে দেখেন সেখানের চিত্রই বদলে গেছে। সব দিক দিয়েই ফ্রাঙ্কের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। 

ফাতেমি খিলাফতের খলীফা আজেদ ও যখন ক্রুসেডারদের চক্রান্তে পা দেন তখন সালাহুদ্দীন আইউবি তাকে সুকৌশলে খিলাফতের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে মিশরকে বাগদাদের কেন্দ্রীয় খিলাফতের অধীনে  দিয়ে দেন , এতে করে খিলাফত রাষ্ট্র আবারো একটি রাষ্ট্রে পরিনত হয়। মূলত ক্রুসেডাররা  ফাতেমি খলীফাকে মদ আর নারীতে ব্যাস্ত রেখে তাকে অধমে পরিণত করে, এমনকি সে সালাহুদ্দীন আইয়ুবিকে হত্যারও  পরিকল্পনা করে। আর খলীফা হওয়া সত্ত্বেও তিনি সালাহুদ্দিন আইউবির উপর কথা বলতে ভয় পেতেন। চরিত্রের অধপতনের কারণেই মূলত এমনটি অনুভব করতেন তিনি। তাই তাকে সরিয়ে খিলাফতের দায়িত্ব একজনকে দেয়া ও একমুখী করা সালাহুদ্দীন আইয়ুবির পক্ষে সহজ হয়।  

সেকালে মাসজিদে জুময়ার খুৎবাতে আল্লাহর ও রাসুলের নামের পর  খলীফার নাম উচ্চারন করতে হতো। সালাহুদ্দীন আইয়ুবি জুময়ার খুৎবা থেকে খলীফার নাম উচ্চারন করা বাদ দিয়ে দেন।


 সুলতান আইয়ুবি যেখানে ক্রুসেডারদে আক্রমণ করে করে তাদের ইসলামিক রাষ্ট্রের দখলকৃত অঞ্চল থেকে বিতারিত করবেন, সেখানকার মুসলিমদের তাদের অত্যাচার থেকে মুক্তি দিবেন, সেখানে ক্রুসেডাররা সারাক্ষণই তাদের গয়েন্দাদের ব্যবহার করে  মিসরে কোন না কোন সমস্যা তৈরি করে রাখত
।  যাতে করে সালাহুদ্দীন আইয়ুবি নতুন করে তাদের আক্রমনের সময় না পান, তিনি যেন মিসর ঠিক করতেই তার সকল সময় পার করে দেন। তারা প্রায়ই চেষ্টা করত সুদানি বাহিনী দিয়ে সুদান থেকে মিসরে আক্রমণ করাতে, যাতে সালাহুদ্দীন শুধু তাদের নিয়েই ব্যাস্ত থাকেন। তারা মিসরের বিভিন্ন মাসজিদে তাদের প্রশিক্ষিত গোয়েন্দা ইমাম পাঠাত যারা সেখানে জিহাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে মানুষের ভিতর থেকে জিহাদের চেতনাকে ধ্বংস করতে চাইত। ক্রুসেডাররা মুসলিমদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করত মেয়েদের দিয়ে। তারা প্রায় সব আমিরদের কাছেই তাদের সুন্দরী মেয়েদের প্রেরণ করত, তাদের দিয়ে সেই আমির দের চরিত্র ধ্বংস করার পায়তারা করত। তারা জানত মুসলিমদের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে তাদের ঈমানী শক্তি  যেটা দিয়ে তারা ক্রুসেডারদের  সাথে লড়ে । আর সে শক্তির কাছেই তারা বার বার হারে, আর সে শক্তির বলেই তাদের চেয়েও অনেক কম পরিমাণ সৈন্য নিয়ে মুসলিমরা বার বার জয় লাভ করে।

ক্রুসেডাররা তাদের নিজেদের মেয়েদের কে মুসলিমদের চরিত্র হরণের প্রশিক্ষণ দিত। তারা এ কাজে সেসকল মেয়েদেরও ব্যবহার করত যাদেরকে তারা মুসলিমদের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অপহরণ করে এনেছিল তাদের বাল্যকালে। তারা ক্রুশের স্বার্থে  এরূপ করাকে পুণ্য মনে করত।
 

 সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবি মিশরের স্থায়িত্ব আনার পরই আবার তার সেই বায়তুল মুকাদ্দাসকে মুক্ত করার সপথ পুরন করার জন্য বের হয়ে যান।  তিনি সর্ব প্রথম খৃষ্টানদের ফিলিস্তিনের শোবক দুর্গ অবরোধ করে সেটা জয় করে ফেলেন। পরে নুরুদ্দীন জঙ্গীর সহায়তায় কার্ক দুর্গও জয়করেন
। কার্ক দুর্গ অবরোধ করার সময় সুদানিরা আবারো মিসরে সমস্যা তৈরি করতে চায় ক্রুসেডারদের সাহায্যে। পরে সুলতান আইয়ুবি কার্কের অবরোধ নুরুদ্দীন জঙ্গীকে  দিয়ে মিসরে চলে আসেন। পরে নুরুদ্দীন জঙ্গী কার্ক দুর্গ সহ ফিলিস্তিনের আরও কিছু জায়গা দখল সম্পন্ন করেন।  


 ফিলিস্তিনের শোবক ও কার্ক দুর্গ পরাজয়ের প্রতিশোধ স্বরূপ ক্রুসেডাররা পাল্টা আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নেয়। স্পেনের পূর্ণ নৌ বহর  এতে যুক্ত হয়। ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়ামও যুক্ত হয়। গ্রিস ও সিসিলির জঙ্গি কিশতিগুলোও যুক্ত হয়। ব্রিটিশরা ভাবতো তারা চাইলে একাই মুসলিমদের পরাজয় করতে পারে তাই তারা যুক্ত হতে চায় নি। কিন্তু তাদের পোপের অনুরধে তাদের কিছু যুদ্ধ জাহাজগুলোও যুক্ত করে। ...... এদিকে  সুলতান আইয়ুবি গোয়েন্দা মারফত তাদের আগমনের খবর পেয়ে যান, তিনি এও জেনে যান যে তারা আগে এসে মিসরের উপকুলের আলেকজান্দ্রিয়া অঞ্চল দখল করবে। তাই সুলতান আলেকজান্দ্রিয়া থেকে সকল জনগণকে  সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যান এবং সেখানে ঘরগুলোতে মুসলিম সৈন্য দিয়ে ভরে রাখেন। ক্রুসেডাররা যখন উপকুলে এসে ভিরে তারা সেখানে আক্রমণের জন্য কোন সৈন্য না দেখে খুশি হয়, এবং পরে হেসে খেলে উপকূলের আলেকজান্দ্রিয়া দখল করতে যায়। রাতে যখন তারা নগরীতে প্রবেশ করে তখনই আইউবির সৈন্যরা ঘর থেকে বেরিয়ে তাদের উপর আক্রমণ করে নিষ্পেষিত করে দেয়। ওই দিকে তাদের জাহাজগুলোতে যেই সৈন্যদেরকে রেখে এসেছিল তাদের উপর হঠাৎ পেছন থেকে সুলতান আইয়ুবির যুদ্ধ জাহাজ আক্রমণ করা শুরু করে। তারা মিনজানিকের  সাহায্যে বড় বড় আগুনের গোলা ও পাথর মারতে শুরু করে ক্রুসেডারদের জাহাজের উপর। ক্রুসেডাররা পালাতে থাকে জাহাজ নিয়ে এবং ধ্বংস হতে থাকে। ক্রুসেডারদের আরেকটা অংশ ফিলিস্তিন থেকে আক্রমনের জন্য আসলে সুলতান নুরুদ্দীন  জঙ্গী তাদের উপর আক্রমণ করে তাদের পরাজয় করে দেন। এই যুদ্ধ শেষে নুরুদ্দীন জঙ্গী সুলতান আইয়ুবিকে তার অধিকৃত অঞ্চল দিয়ে সিরিয়ায় নিজ এলাকায় চলে যান।

সালাহুদ্দীন আইয়ুবির যুদ্ধ কৌশলের সবচেয়ে ভয়ানক কৌশল ছিল তার গেরিলা হামলা। তার সৈন্যরা গেরিলা বাহিনী দিয়ে শত্রুদের সেনা বহরের পেছনের অংশে আঘাত হরে নিমিষেই হারিয়ে যেত। তার এই কৌশল আজো সামরিক বিশ্লেষকরা প্রশংসা করে।


 ১১৭৪ সালের মে মাসে নুরুদ্দীন জঙ্গী মৃত্যু বরন করেন। তার মৃত্যুতে নেমে আসে শোকের ছায়া। সালাহুদ্দীন আইয়ুবি হারান তার প্রান প্রিয় চাচাকে জিনি বরাবরই তাকে সাহায্য দিয়ে আসতেন বিভিন্ন সময়ে। ক্রুসেডাররা এতে  খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। কারন তারা এখন সালাহুদ্দীন আইয়ুবির সাথে আগের চেয়ে কম কষ্টে লড়তে পারবে।  জঙ্গীর মৃত্যুর পর তার মাত্র ১১ বছরের  নাবালেক  ছেলেকে ক্রুসেডারদের গাদ্দাররা ক্ষমতার লোভে খিলাফতের মসনদে বসায়। যদিও মাত্র ১১ বছরের নাবালেগ ছেলেকে খলীফা হিসেবে মসনদে বসানো সকলের জন্য হারাম, তবুও তারা ক্ষমতার জন্য এটা করে। এতে নুরুদ্দীন জঙ্গীর স্ত্রী রোজি খাতুন অনেক বাধা দিলেও তারা তা অমান্য করে। রোজি খাতুনও ছিলেন মুলত তার স্বামীর মতোই একজন খাটি ইমানদার। যিনি এই অন্যায় মেনে নিতে না পেরে সালাহুদ্দীন আইয়ুবিকে চিঠি লিখেন এই বলে যে, উনি যেন এসে সিরিয়া দখল করেন।


এদিকে সালাহুদ্দীন আইয়ুবি আসবেন জেনে রোজি খাতুন সেখানকার জনগণকে  বুঝাতে থাকেন যে একজন নাবালেগকে  খলীফা হিসেবে মানা হারাম। আর এ কাজ গাদ্দাররা  একারনে করেছে যাতে করে তারা তার নাবালক  ছেলেকে  ভুল বুদ্ধি দিয়ে সব করিয়ে নিতে পারে।

একদিন সালাহুদ্দীন  আইয়ুবি মাত্র ৭০০ সৈন্য নিয়েই সিরিয়ার মুল দুর্গ অবরোধ করেন। এতে সিরিয়ার জনগন খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় এবং তারা সালাহুদ্দীন আইয়ুবিকে ভিতরে আসতে দেয়ার জন্য নগরীর মুল ফটক খুলে দিতে বলে। তারা বাধ্য হয়ে ফটক খুলে দিলে সালাহুদ্দীন আইয়ুবি ভিতরে প্রবেশ করে। সকলে তাকে স্বাগত জানায়।

এদিকে  সুলতান আইয়ুবির  আগমনের খবর পেয়ে সকল আমলা- উজিররা  দামেস্ক ছেড়ে পালিয়ে যায়। নুরুদ্দীন জঙ্গীর ছেলেও পালিয়ে যায়। সাথে করে তারা প্রচুর মূল্যবান সম্মত্তি ও প্রচুর দিরহাম নিয়ে যায় আর সাথে করে খৃষ্টানদের দেয়া মেয়েগুলোও নিয়ে যায়।  তারা সিরিয়ার অদূরে হালব, হাররান ও মাশুল দুর্গে যেয়ে আশ্রয় নেয়। সেখানে খৃষ্টানদের প্রভাব থাকায় তারা নিরাপদেই থাকতে শুরু করে।


হালব ও মাসুলে আশ্রয় নেয়া আমিররা ক্রুসেডারদের সাথে আতত করে সুলতান আইয়ুবিকে পরাজিত করে পুনরায় সিরিয়া দখল করার ফন্দি আটে।  এতে ক্রুসেডাররাও তাদের সাহায্য করতে থাকে। সুলতান আইয়ুবি যেন নিজেদের মুসলিম ভাইদের সাথেই যুদ্ধ করতে করতে শেষ হয়ে যান সেই লক্ষ্যে ক্রুসেডাররা হালব, মাসুল ও আশে-পাসের  আমিরদের সালাহুদ্দীন এর বিরুদ্ধে উদবু‍‌দ্ধ করতে থাকে
। তাদের সাহায্য করতে থাকে। তারা সেখানকার মুসলিম জনগণদের গোয়েন্দা মারফত বিভ্রান্ত করতে থাকে। তাদের বুঝাতে থাকে সুলতান সালাহুদ্দীন অত্যাচারী, নির্দয় শাসক।

পরে বহু দিন যাবত সুলতান আইয়ুবি বায়তুল মুকাদ্দাসের বাঁধা স্বরূপ সেই কথিত মুসলিম আমিরদের  সাথেই যুদ্ধ করতে থাকেন। ক্রুসেডাররা সেই আমিরদের প্রচুর ধন-সম্পত্তি ও সুন্দরী মেয়ে দিয়ে রেখেছিল। আর ক্ষমতার নেশা সে সকল আমিরদের জেকে বসেছিল।

একদিন মরহুম সুলতান নুরুদ্দীন জঙ্গীর ছেলে প্রচুর মদ্য পানের ফলে ভুগে ভুগে মৃত্যুবরন করে। তাকে দেখার জন্য তার মা রোজি খাতুন আর কখনো যান নি।


 অতঃপর অনেক দিন পর অনেক যুদ্ধ ও অনেক কষ্টের পর সুলতান আইয়ুবি হালব, মাসুল ও হাররান দখল করে নেন।  তখন সেখানকার মুসলিমরাই তাদের আমিরদের বিরুদ্ধে সালাহুদ্দীন এর জন্য দরজা খুলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে বলে, পরে তারা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এতে সুলতানের নিজেদের সাথে যুদ্ধ করেই প্রচুর মুসলিম সৈন্য শেষ হয়ে যায়। ক্রুসেডারদের গাদ্দার আমিরগুলোও তাদের সৈন্যদের এই বলে যুদ্ধে নিত যে, সালাহুদ্দীন ক্রুসেডারদের সাথে আতত করেছে , আর আমরাই প্রকৃত ইসলামের পথে আছি।

হালব, হাররান আর মাসুল দুর্গ জয়  করার পর সালাহুদ্দীন আইয়ুবির সামনে বাইতুল মুকাদ্দাসের পথে আর কোন বাধা রইলনা।


সুলতান আইয়ুবির এইবার বাইতুল মুকাদ্দাস এরদিকে আগমনের পালা। ক্রুসেডাররা এইবার আর মুসলিমদের থেকে সাহায্য পাবে না। কারন সব আমিরই এখন সালাহুদ্দীন আইয়ুবির আনুগত্য শিকার করেছে।  সুলতান আইয়ুবি এইবার সর্ব প্রথম কার্ক আক্রমণ করেন। সালাহুদ্দীন আইয়ুবি এর আগেও একবার কার্ক দখল করেন, কিন্তু ১ মাস পর সেটা আবারো ক্রুসেডারদের হাতে চলে যায়। কার্কের শাসনভার ছিল  অরনাত এর উপর। অরনাত একজন নাস্তিক ছিল যে রাসুল (সাঃ) কে নিয়ে বিদ্রুপ করত, তাই সুলতান তাকে ঘৃণা করতেন আর তাকে কাছে  পেলেই হত্যা করবেন   বলে শপথ নিয়েছিলেন। অরনাত মিসর আর সিরিয়ার হজ্ব কাফেলাগুলোর উপর হামলা করে তাদের সম্পত্তি ডাকাতি করত, আর মেয়েদের তুলে নিত।

সুলতান আইয়ুবি কার্ক আক্রমণ করলেন। কিন্তু তিনি সেটা অবরোধ না করে শত্রু যেন তার ইচ্ছা মত এলাকায় এসে যুদ্ধ করতে বাধ্য হয় সেই পরিবেশ তৈরি করলেন। তিনি শত্রুর সকল রসদ বন্ধ করে তাদের পানির উৎস গুলো দখল করলেন আর তাদের পানির তৃষ্ণায় যুদ্ধ ক্ষেত্রে পাগল করে ফেললেন। ক্রুসেডাররা বর্ম পরে যুদ্ধে আসতো, আর তিনি যুদ্ধের জন্য সময় ঠিক করলেন জুন-জুলাই মাস, এতে তারা বর্মের ভিতর উত্তাপে জ্বলে-পুড়ে মরতে লাগলো। তাদের পরাজয় হল। সুলতান কার্ক ও আশে পাসের দুর্গ জয় করে নিলেন। সেই যুদ্ধে অরনাত সহ মোট ছয় জন সম্রাট ধরা পরে। সুলতান পরে তার শপথ মত অরনাত কে হত্যা করে বাকিদের ক্ষমা করে দেন।

এই যুদ্ধে ক্রুসেডাররা তাদের সবচেয়ে বড় ক্রুশটা (তারা ভাবে এইটাতেই ইসা (আঃ) কে শূলে চড়ানো হয়েছিল) যুদ্ধের ময়দানে এনেছিল। তাদের সবচেয়ে বড় পাদ্রি (পোপ)  এটা আনে। পরে পোপ মৃত্যু বরণ করে আর বড় ক্রুশটি মুসলিমদের হাতে চলে আসে
। পরে সুলতান বায়তুল মুকাদ্দাস জয় করার পর  ক্রুসেডারদেরকে তাদের ক্রুশটি দিয়ে দেন।  

এরপর পালা আক্রার দুর্গের । ক্রুসেডাররা ভেবেছিল সুলতান আগে বায়তুল মুকাদ্দাস আক্রমণ করবেন। তাই তারা বুঝে উঠার আগেই সুলতান আগে আক্রা আক্রমণ করলেন। ২-৩ দিন অবরোধের পর সেটা জয় করে ফেলেন।

তারপর সুলতান আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ আসকালান অবরোধ করেন। প্রায় ৩৪ টি বছর পর এই অঞ্চলটি আবার স্বাধীন হল। ১১৫৩ সালের ১৯  সেপ্টেম্বর সম্রাট ফ্রাংক এটি দখলকরে নেয়। আসকালান থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার পূর্বে বায়তুল মুকাদ্দাস অবস্থিত।


 এইবার পালা বায়তুল মুকাদ্দাসের ..........  
ক্রুসেডারদের দ্বারা বায়তুল মুকাদ্দাসের দখল হয় ১০৯৯ সালের ১৫ জুলাই মোতাবেক ৪৯২ হিজরীর ২৩ শাবান মাসে ।  ক্রুসেডাররা বায়তুল মুকাদ্দাস দখল করে মুসলিম শাসকদের সহায়তায়। সেসময় মুসলিম শাসকরা নিজেদের রাজ্য চলে যাবে বিধায় সকলেই একে একে ক্রুসেডারদের পথ ছেড়ে দেয়, কেউই তাদের বাধা দেয় না। বরং অনেকেই তাদের সাহায্য করে, রসদ দেয়।

শুধু আরাকার আমির ছিলেন একজন  ইমানদার পুরুষ, যার সামরিক শক্তি খৃষ্টানদের তুলনায় কিছুই ছিল না। তবু তিনি খৃষ্টানদের দাবি পুরন করতে অস্বীকৃতি জানান
। খৃষ্টান বাহিনি আরাকা ১০৯৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ মে পর্যন্ত অবরোধ করে রাখে। মুসলিমরা এমন প্রান-পন লড়াই করে যে বিপুল ক্ষতির পর ক্রুসেডাররা পথ পরিবর্তনকরে চলে যায়।

মুসলিম আমিরগনই সে সময়য় ক্রুসেডারদের নিরাপদে বায়তুল মুকাদ্দাস পৌঁছে দিয়েছিল। পরে ১০৯৯ সালের ৭ জুন মাসে তারা বায়তুল মুকাদ্দাস আবরোধ করে এবং ১৫ জুলাই বায়তুল মুকাদ্দাসের ভিতরে প্রবেশ করে। সে সময় বায়তুল মুকাদ্দাসের গভর্নর ছিলেন ইফতেখারুদ্দৌলাহ, তিনি প্রানপন লড়াই করেছিলেন ক্রুসেডারদের সাথে। কিন্তু তাদের রসদ ও সৈন্য অগণিত হয়ায় তিনি ব্যার্থ হয়েছিলেন। পরে ক্রুসেডাররা নগরীতে ঢুকে সব মুসলিমদের হত্যা করে, তাদের নারীদের অত্যাচার করে, শিশুদের মাথা কেটে সেটা দিয়ে ফুটবল খেলে। মুসলিমরা আস্রয়ের জন্য মাসজিদুল আকসা ও অন্যান্য মাসজিদে যায় তারা ভাবে মাসজিদুল আকসা উভয়ের নিকট সম্মানিত হয়ায় তারা তাদের ছেড়ে দিবে। কিন্তু না ক্রুসেডাররা সেখানে ঢুকে মুসলিমদের  হত্যা করে,  তাদের রক্ত  মাসজিদ গড়িয়ে গড়িয়ে বাইরে পরছিল, রক্তে খৃষ্টানদের ঘোরার পা ডুবে গিয়েছিল। খৃষ্টান ঐতিহাসিকদের মতে উদ্বাস্তু মুসলিমের সংখ্যা ছিল ৭০ হাজার।  


সুলতান আইয়ুবি বায়তুল মুকাদ্দাসের সেই অবমাননার কাহিনী তার পিতা নাজমুদ্দিন আইউব থেকে শুনতেন , নাজমুদ্দিন তার পিতার কাছ থেকে শুনতেন। পরে সুলতান এই কাহিনী তার নিজের ছেলেদের বলতেন।

১১৮৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রবিবার মোতাবেক  ৫৮৩ সনের ১৫ রজব  সুলতান আইয়ুবি দ্রুত বায়তুল মুকাদ্দাস পৌঁছে যান, অবরোধ করেন বায়তুল মুকাদ্দাস। এদিকে খৃষ্টানরাও তাদের পবিত্র ভুমি ছাড়তে নারাজ। তারাও আমরন লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। সেখানকার প্রায় সব মুসলিমই বন্দি। তারা জেলের ভিতর থেকেই আজান আর তাকবীর ধ্বনি দিচ্ছেন। অনুরূপ খৃষ্টানরাও গির্জায় গান গাইছে ও প্রার্থনা করছে। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। দুই পক্ষই দুই পক্ষকে আহত নিহত করে চলছে। শহিদদের সংখ্যা গোনে সুলতান আইয়ুবি টাস্কি খেয়ে যান। পরে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে ৫৮৩ হিজরীর ২৭ রজব মোতাবেক ১১৮৭ খ্রিস্টাব্দ ২ অক্টোবর শুক্র বার সালাহুদ্দীন আইয়ুবি বিজয়ী বেশে বায়তুল মুকাদ্দাস প্রবেশ করেন। এটিই ছিল সেই রাত যেদিন আমাদের প্রিয় নবী রাসুল (সাঃ) বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে মিরাজে গমন করেন। :) 


বায়তুল মুকাদ্দাস মুক্ত হয়ার পর সেখানকার মুসলিমরা প্রায়  ৯০ বছর পর ক্রুসেডারদের অত্যাচার থেকে রেহাই পেল।



ইংল্যান্ডের সম্রাট রিচার্ড যাকে ''ব্লাক প্রিন্স'' বলা হত সে এর প্রতিশোধ নিতে  ৫২০ যুদ্ধ জাহাজ ও অনেকগুলো মালবাহী বড় জাহাজ নিজে রোম সাগর আসে। তখনই  ঝড়ের কবলে পরে প্রায় অনেক জাহাজ তলিয়ে যায়। যা বাকি থাকে তা দিয়েই সে বায়তুল মুকাদ্দাস আবার দখল করতে আসে। তখন তার সৈন্য ছিল ২লাখ।

সুলতান চাচ্ছিলেন তারা যেন আগে উপকূলীয় অঞ্চল আক্রা অবরোধ করে, এতে করে তাদের সেখানেই ব্যস্ত রেখে শেষ করে দিতে পারলে বায়তুল মুকাদ্দাস রক্ষা করা যাবে।

রিচার্ড যখন আক্রা আগমন করে  তারও আগেই তার জোট ভুক্ত রাষ্ট্ররা আক্রা অবরোধ করে। রক্ত ক্ষয়ী ও দীর্ঘ যুদ্ধের পর সকলে মিলে প্রায় ৬ লাখেরও বেশি সৈন্য নিয়ে আক্রা দখল করে নেয়। এতে তারা দখলের পর আক্রার প্রায় ৩ হাজার নিরস্র মুসলিমের  হাত পা বেধে তাদের উপর পিচাশের মত ঝাপিয়ে পরে হত্যা করে।

রিচার্ড আক্রা দখলের পর উপকূলীয় বাকি অঞ্চল আসকালান ও হিফা দখল করতে যায়, যেন সেগুলোকে দখল করে ক্যাম্প বানিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাস দখল করা সম্ভব হয়। কিন্ত তারা যেন সেটা করতে না পারে তার জন্য সুলতান আইয়ুবি আগেই সেখান থেকে জনগনকে  সরিয়ে সেগুলোকে পোড়ে  ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেন। পড়ে ক্রুসেডাররা সেখানে যেয়ে আর কিছু পায় নি। শেষে একসময় রিচার্ড অসুস্থ হয়ে পরলে সে যুদ্ধ ত্যাগকরে নিজ দেশে চলে যায়, আর বলে যায় সে আবার আসবে বায়তুল মুকাদ্দাস দখল করতে। কিন্তু পরে আর কেউ পারেনি বায়তুল মুকাদ্দাস দখল করতে। ......



কিন্তু না, ইসলামিক খিলাফতের শেষের দিকে যখন মুসলিম আমিররা ক্রুসেডারদের সাথে বন্ধুত্বের কথা বলে মূলত তাদের দাসত্বকে গ্রহণ করল। তখনই ক্রুসেডাররা আবারো তুচ্ছ ও সংকীর্ণমনা  জাতীয়তাবাদের নীতিতে ইসলামিক রাষ্ট্রকে ভেঙ্গে টুকরা টুকরা করে দিল। আবারো ক্রুসেডাররা ফিলিস্তিনে ইহুদীদের প্রবেশের মাধ্যমে মূলত নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করল। সেখানে মুসলিমদের হত্যা করল, তাদের নিজ ভুমি থেকে ছাড়া করল, গঠন করল সেখানে ইসরাইল রাষ্ট্র, আর সেটা কতিপয় নাম ধারি মুসলিম শাসকদের কারনেই সম্ভব হয়েছিল।


সুলতান সালাহুদ্দীন আইউবি তার জীবনে দুটো ইচ্ছা করেছিলেন এক বায়তুল মুকাদ্দাস জয় করা আর  দুই হজ্ব করা। যদিও তিনি প্রথম ইচ্ছা  পুরন করতে পেরেছিলেন কিন্তু তার দ্বিতীয় ইচ্ছা অর্থের  অভাবে পুরন হয়নি। মিসরি কাহিনীকার মুহাম্মদ ফরিদ আবু হাদীদ লিখেছেন, মৃত্যুর সময় সালাহুদ্দীন  আইউবির মাত্র ৪৭ দিরহাম রূপা আর এক টুকরো সোনা ছিল। তার নিজস্ব কোন বাসগৃহ ছিল না। তিনি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে কোন অর্থ নিয়ে হজ্ব করতে চান নি।

১১৯৩ সালের ৪ মার্চে অবশেষে ইসলামের মহান নেতা সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবি ইন্তিকাল করেন। সেদিন সমগ্র ফিলিস্তিনের নারী-পুরুষ তাদের ঘর থেকে রাস্তায় বেরিয়ে তাদের সুলতানের জন্য মাতম করছিল। নগরীর অলিতে-গলিতে  কান্নার রোল বয়ে যাচ্ছিল। আজও সেই কান্নার রোল শোনা যায় সেই ফিলিস্তিনের অলিতে গলিতে আজও তারা তাদের সেই সালাহুদ্দীন আইউবিকেই খুজছে ক্রুসেডারদের অত্যাচার থেকে তাদের মুক্তির জন্য
।    

অবশেষে ১৯২৪ সালের ৩ মার্চ ক্রুসেডাররা ইসলামের সর্বশেষ খিলাফত থাকা অঞ্চল তুরস্ক থেকেও রাষ্ট্রীয় ভাবে থাকা খিলাফতকে ধ্বংস করল। লর্ড কার্জন বলল, আমরা মুসলিমদের মেরুদণ্ড খিলাফতকে ধ্বংস করে দিয়েছি, তারা আর দাড়াতে পারবে না । তারা সেই সুলতান সালাহুদ্দীন আইউবির কবরে  লাথি মেরে বলল, উঠো সালাহুদ্দীন, তোমার বায়তুল মুকাদ্দাসকে রক্ষা কর। ....... আর আমরা কি করলাম?  পেরেছি কি সেই খিলাফতকে পুনঃ প্রতিষ্ঠা করতে?  পেরেছি কি সেই বায়তুল মুকাদ্দাস কে রক্ষা করতে?
 


[রেফারেন্সঃ ইমানদীপ্ত দাস্তান ...... এনায়াতউল্লাহ আলতামাশ, প্রখ্যাত উর্দু উপন্যাসিক এর লিখা। বইটি ৮ খণ্ডে এবং ৮#২৪০= ১৯২০ পৃষ্ঠা সম্বলিত।]