সেই চিরন্তন শত্রুতা ...
মুসলিমদের মনের মধ্যে খুব সিস্টেমেটিক্যালি গেথেঁ দেয়া হয়েছে ইসলাম পালনে কোন ধরণের কষ্ট বা শত্রুতা বা বাধাঁ-বিপত্তি নেই। ইসলাম নিয়ে তাই আজকাল সত্য কথা বললে যখন সমাজ সেটা সহ্য করতে পারে না তখন একটা chaos হয় আর লোকে তখন বলে,"ভাই ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার দরকার নাই"। আমরা যেটা মানতে পারছি না সেটাকে "বাড়াবাড়ি" হিসেবে চালিয়ে চুপ থাকাকে ইসলাম লাইসেন্স দেয় নি। বরং কুর'আন বলছে, ইসলাম পালনে এই 'বাড়াবাড়ি'র অভিযোগ নতুন কিছু নয়, বরং এটা একটা চিরন্তন স্বাভাবিক ঘটনা। যুগে যুগে যারা ইসলামের পথে ছিল তাদের সাথে যারা ইসলামের পথে ছিল না তাদের কোন প্রকার ঝামেলা হয় নাই-এরকম হয় নাই। এখানে সহাবস্থান বলে কিছু আশা করা বৃথা, হয় সত্য টিকে থাকবে না হয় মিথ্যা, দুটো একসাথে নয়।বরং এটাই inevitable যে ইসলাম প্রতিষ্ঠা পাবে মু'মিন এবং কাফিরদের শত্রুতা, বাইয়্যিনাহ (সত্য আগমনের পর মু''মিন এবং কাফিরদের মধ্যে সুস্পষ্ট বিভক্তি) এবং কাফিরদের উপর মু'মিনদের বিজয়ের মাধ্যমে।
নিচের লেখাটিতে মু'মিন এবং কাফিরদের মধ্যকার এই শত্রুতার স্বরুপ তুলে ধরা হয়েছে।
*** *** *** *** ***
আল্লাহ্, মহিমান্বিত তাঁর সত্তা, তাক্বদিরের মাধ্যমে মু’মিনদের ওপর কাফিরদেরকে শক্তিশালী করেন মু’মিনদের সাথে শত্রুতা পোষণ ও যুদ্ধ করার ব্যাপারে কাফিরদেরকে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা শারীয়াহr মাধ্যমে বা কোন নাবীর যবান এর মাধ্যমে আদেশ পাঠাননি; এটি 'তাক্বদির দ্বারা নির্ধারিত'। তিনি বরং তাদেরকে আদেশ দিয়েছেন ইবাদত এবং আনুগত্যের। সুতরাং মু'মিনদের উপর কাফিরদের শক্তি অর্জন হলো 'তাক্বদির' আর কাফিরদের উপর মু'মিনদের শক্তি অর্জন হলো 'শারয়ী হুকুম' এবং 'তাক্বদির'।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ
"আমি এভাবেই প্রত্যেক নাবীর শত্রু করেছিলাম অপরাধীদের মধ্য থেকে।" [সূরা ফুরকান ২৫:৩১]
তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ
"এইরূপে আমি মানুষ ও জ্বীনদের মধ্যে শয়তানদেরকে নাবীদের শত্রু করেছি।" [সূরা আন'আম ৬:১১২]
তিনি সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ
"এইরূপে আমি প্রত্যেক জনপদে সেখানকার অপরাধী প্রধানদেরকে চক্রান্ত করার অবকাশ দিয়েছি।" [সূরা আন'আম ৬: ১২৩]
উপরোক্ত তিনটি আয়াতেই আল্লাহ্, সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেছেনঃ
'আমি ... করেছি' বা 'আমি ... দিয়েছি' ....অর্থাৎ এগুলো তাক্বদির দ্বারা নির্ধারিত।
যুগ, জাতি, নাবী রাসূল অনেক কিছু পাল্টালেও তাদের এই শত্রুতার ধরণ কখনোই পাল্টায়নি। আর একারণেই আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ
"তোমার সম্বন্ধে তো তাই বলা হয় যা বলা হত তোমার পূর্ববর্তী রাসূলগণ সম্পর্কে।" (সূরা ফুসসিলাত ৪১:৪৩)
এবং তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ
"এভাবেই তাদের পূর্ববর্তীদের নিকট যখনই কোন রাসূল এসেছে তারা তাকে বলেছে, 'তুমি তো এক যাদুকর না হয় উন্মাদ'। তারা কি একে অপরকে এই মন্ত্রণাই দিয়েছে (বংশানু্ক্রমে শিখিয়েছে)? বস্তুত তারা সীমালঙঘনকারী সম্প্রদায়।" (সূরা যারিয়াত ৫১:৫২,৫৩)
তাদের এই শত্রুতার রয়েছে নানান রূপঃ
- অন্তরের কুফরী (তাকযিব); আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
"নিশ্চয় তোমার পূর্বে অনেক রাসূলকে মিথ্যাবাদী বলা হয়েছিল; কিন্তু তারা ধৈর্যধারণ করেন..." [সূরা আন'আম ৬:৩৪]
- ঠাট্টা (সুখরিয়াহ) এবং বিদ্রুপ (ইসতিহজা) করা; আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
"যারা অপরাধী তারা তো মু'মিনদেরকে উপহাস করত।" [সূরা মুতাফ্ফিফীন ৮৩:২৯]
পরিতাপ বান্দাদের জন্য; তাদের নিকট যখনই কোন রাসূল এসেছে তখনই তারা তাকে বিদ্রুপ করেছে।" [সূরা ইয়াসীন ৩৬:৩০]
- মু'মিনদেরকে পাগল (জুনুন) বলে অপবাদ দেয়া; আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ
- মু'মিনদের কর্তৃত্ব (হ্বুকুম) ও ক্ষমতালোভী (রিয়াসাহ) বলে অপবাদ দেয়া; আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ
- মু'মিনদের ধর্মত্যাগ ও বিশৃঙ্খলা (ফাসাদ) সৃষ্টির দায়ে অভিযুক্ত করা; আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
- মু'মিনদের দারিদ্র ও অসহায়ত্বের সুযোগে গালমন্দ করা; আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ
- তারা এটি করত যাতে অন্য মানুষেরা মু'মিনদের নিকটে না আসে; আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ
- মু'মিনরা অভিশপ্ত এবং মু'মিনদের কারণে তাদের উপর গযব আসবে এমন অভিযোগঃ
- সত্য প্রত্যাখ্যান এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা যুক্তি প্রদর্শন; আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ
এগুলোর মাঝে লুকিয়ে ছিল তাদের বিভ্রান্তিসমূহ যা দ্বারা তারা আল্লাহ্র পথে বাঁধা সৃষ্টি করত।
- সাধারণ মানুষকে মু'মিনদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ
তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ
"ফিরাউন বলল, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি মূসাকে হত্যা করি এবং সে তার প্রতিপালকের শরণাপন্ন হোক। আমি আশংকা করি যে, সে তোমাদের দ্বীনের পরিবর্তন ঘটাবে অথবা সে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।" [সূরা মু'মিন ৪০:২৬]
- মু'মিনরা মুষ্টিমেয় হওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ জনগণের উপর তাদের মতবাদ চাঁপিয়ে দিচ্ছে এমন অভিযোগ উত্থাপন। এর উদাহরণস্বরূপ আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেছেনঃ
- তারা দাবী করে যে, সত্য দ্বীনের ব্যাপারে তাদের অবস্থান মু'মিনদের চেয়ে উত্তম। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা), বলেনঃ
"তারা বললঃ নিশ্চয় এরা দুইজন যাদুকর, তারা চায় তাদের যাদু দিয়ে তোমাদেরকে দেশ থেকে বের করতে এবং তোমাদের উৎকৃষ্ট জীবন ব্যবস্থা ধ্বংস করতে।" [সূরা ত্বাহা ২০:৬৩]
তিনি, (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা), বলেনঃ
"তাদের কাছে যখন স্পষ্ট নিদর্শনসহ তাদের রাসূল আসত তখন তারা নিজেদের জ্ঞানের দম্ভ করত।" [সূরা মু'মিন ৪০:৮৩]
- নানাবিধ চক্রান্ত ও পরিকল্পনা করে সাধারণ মানুষকে মু'মিনদের অনুসরণ থেকে বিরত রাখা। আলাহ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ
- মু'মিনদেরকে সুবিধাবঞ্চিত করে দ্বীন থেকে দূরে রাখার প্রচেষ্টা। আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ
- মু'মিনদেরকে নানাবিধ সমস্যায় ফেলে দ্বীন থেকে দূরে রাখার প্রচেষ্টা। আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ
তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ
প্রতি কখনো সন্তুষ্ট হবে না,যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর।" [সূরা বাকারা ২: ১২০]
- মু'মিনরা যদি তাদের দ্বীন থেকে না সরে অথবা কাফিরদের সাহায্য সহযোগীতা না করে তবে তাদেরকে জেল ও মৃত্যুদন্ডের ভয় দেখানো। আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ
আলাহ তা'আলা বলেনঃ
"তারা যদি তোমাদের ব্যাপারে জানতে পারে তাহলে তোমাদেরকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করবে অথবা তোমাদেরকে তাদের ধর্মে ফিরিয়ে নিবে এবং সেক্ষেত্রে তোমরা কখনোই সফলকাম হবে না।" [সূরা কাহ্ফ ১৮: ২০]
- মু'মিনদের উপর অত্যাচার, হত্যা এবং সংঘাত চাঁপিয়ে দেয়া। আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ
তিনি, (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা), বলেনঃ
"আর স্মরণ কর যখন কাফিররা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যে, তোমাকে বন্দী করবে অথবা হত্যা করবে অথবা নির্বাসিত করবে..." [সূরা আনফাল ৮:৩০]
তিনি,(সুবহানাহু ওয়া তা'আলা), বলেনঃ
"তারা সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে যে পর্যন্ত না তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দেয়।" [সূরা
বাকারা ২:২১৭]
তাই মু'মিন ভাইদের উদ্দেশ্যে বলছি, কাফিরদের শত্রুতা ও বিরোধিতার কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে যা কখনো বদলাবে না। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ
"তারা কি একে অপরকে এই মন্ত্রণাই দিয়েছে (বংশানু্ক্রমে শিখিয়েছে)?" [সূরা যারিয়াত ৫১:৫৩]
আর সবচেয়ে বড় কথা হলো মু'মিনদের ঈমানের কারণেই কাফিররা মু'মিনদের সাথে যুদ্ধ করে এবং শত্রুতা পোষণ করে। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ
“তারা তাদেরকে শাস্তি দিয়েছিল শুধু এ কারণে যে, তারা প্রশংসিত, পরাক্রান্ত আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের ক্ষমতার মালিক, আল্লাহর সামনে রয়েছে সবকিছু” [সূরা আল বুরুজ ৮৫:৭,৮]
এবং তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ
তারা এটাই কামনা করে যে, তারা যেমন কুফরী করেছে তোমরা সেরকম কুফরী কর; যাতে তোমরা তাদের সমান হয়ে যাও।" [সূরা নিসা ৪:৮৯]
সুতরাং কাফিরগণ মু'মিনগণকে শত্রু হিসেবে নেয় তাদের ঈমানের জন্য। একজন মুমিনের ঈমান যত বৃদ্ধি পায় তাঁর প্রতি কাফিরদের শত্রুতা ততই বৃদ্ধি পায়। এ ব্যাপারে রাসূলুলাহ (সালালাহু আলাইহি ওয়া সালাম) বলেনঃ "সবচাইতে বেশী পরীক্ষা করা হয় নাবীদেরকে, এরপর তাদের নিকটবর্তীদেরকে (ঈমানের স্তর ভেদে), তারপর তাদের নিকটবর্তীদেরকে (ঈমানের স্তর ভেদে)। মানুষ তার ঈমানের স্তর অনুযায়ী পরীক্ষিত হবে... .."। [আত তিরমিযী; সহীহ্]
আর এটি বান্দা নিজেও বুঝতে পারে যে, তার ঈমান বৃদ্ধির সাথে সাথে তার প্রতি কাফির ও ফাসিকদের শত্রুতাও বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং সে তাদেরকে ভালো কাজের আদেশ দেয় এবং মন্দ কাজে নিষেধ করে, এতে শত্রুতা আরো বৃদ্ধি পায়। আর তার ঈমান যত হ্রাস পায় তাদের শত্রুতাও ততই হ্রাস পায়।
তবে মু'মিনরা যতদিন ঈমানের উপর থাকবে তাদের প্রতি কাফিরদের শত্রুতা ততদিন পর্যন্ত শেষ হবে না; যদিও এতে কিছু থাকে তবুও। আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ
"ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানরা তোমার প্রতি কখনো সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর।" [সূরা বাকারা ২:১২০]
তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ
"তারা সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে যে পর্যন্ত না তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দেয়।" [সূরা বাকারা ২:২১৭]
*** *** *** *** ***
লেখাটি শাইখ আব্দুল ক্বাদির বিন আব্দুল আজীজ রচিত "জিহাদ বিষয়ক মৌলিক আলো
0 on: "সেই চিরন্তন শত্রুতা ..."