Monday, October 7, 2013

ফুটবলাধিকার

- No comments

"ফুটবলাধিকার"

by Nazmus Sakib
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

আমরা সবাই জানি ফুটবল খেলায় ১১ জন খেলোয়াড় থাকেন। এই ১১ জনের দায়িত্ব হল ১১ রকম। কোন একজনের দায়িত্ব অপরের চাইতে কম নয়। একজন গোলকীপারের জন্যে কোচের প্ল্যানিং থাকে একরকম। ডিফেন্ডারের জন্যে একরকম
, মিডফিল্ডারের জন্যে একরকম, স্ট্রাইকারের জন্যে একরকম। বেশিরভাগ সময়েই স্ট্রাইকাররা হয় স্কোরার। মিডফিল্ডাররা হয় গোল মেকার আর ডিফেন্ডার-গোলকীপারের কাজ হল গোল খাওয়া থেকে দলকে বাঁচানো। তাছাড়া ২ জন মিডফিল্ডার এর দায়িত্বও বেশিরভাগ সময় একই হয় না। কেউ রাইট উইং দেখে রাখে, কেউ লেফট উইং। স্ট্রাইকারের ক্ষেত্রেও একই। একজন স্ট্রাইকার রাইট উইং এ প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করেন,আরেকজন করেন লেফট উইং থেকে।


অন্যদিকে ৩-৪ জন ডিফেন্ডারের কাজও কিন্তু সবসময় এক হয়না। দেখা যায় রাইট সাইডের ডিফেন্ডারের কাজই হল প্রতিপক্ষের কোন বিশেষ ফরোয়ার্ডকে আটকে রাখা। আবার অনেক সময় সব ডিফেন্ডারই একসাথে এই দায়িত্ব পালন করে। আর গোলকীপারের কাজ হল ডি-বক্সেই ঘোরাফেরা করা আর গোলপোস্ট পাহারা দিয়ে দলকে গোল খাওয়া থেকে বাঁচানো।


কিন্তু যদি কোনদিন এমন হয়, যে গোলকীপার দাবি করে বসেন অন্যদের তুলনায় তাকে অধিকার বঞ্চিত করা হচ্ছে, তখন কেমন হবে? তিনি যদি বলেন, সবাই কী সুন্দর দৌড়াচ্ছে আর আমি হাবার মত এখানে দাঁড়িয়ে আছি? এটা তো চরম অন্যায়! আবার কোন ডিফেন্ডার যদি বলেন, এটা কিছু হল? মিড আর ফরোয়ার্ডরা কী চরম ভাব নিয়ে গোল দিতে যায়, আর আমরা আছি আরেকজনকে আটকানোর মত “নিচু” কাজে ব্যাস্ত। এটা তো আমাদের অধিকার লঙ্ঘন!


আবার ধরুণ ফরোয়ার্ড বলছেন, “ধুশশালা! এই কোচ তো বেজায় শয়তান! আমাকে সারাদিন দৌড়ের উপর রাখছে আর ঐ ব্যাটা গোলকীপার কি আরামসে গোলপোস্টে হেলান দিয়ে আমাদের দৌড়াদৌড়ি দেখছে। এটা তো চরম অন্যায়!”

এখন সত্যিই যদি বিভিন্ন পজিশনের খেলোয়াড়রা এই ধরণের দাবি তুলে বসেন, যে আমাদের ‘ফুটবলাধিকার’ লঙ্ঘিত হচ্ছে, আমরা সমান অধিকার পাচ্ছিনা, আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে, তাই আমরা খেলবোনা – তাহলে কেমন হবে?

যদি মিডফিল্ডার আর স্ট্রাইকাররা গোলের পর গোল করে যায়, আর গোলকীপার-ডিফেন্ডাররা এই বলে বসে থাকে যে তারা ফরোয়ার্ডদের মত সমঅধিকার পায়নি, তাহলে কিন্তু দলটি এক-দুইশ গোলের ব্যবধানে হারার কথা। আবার ফরোয়ার্ডরা যদি বলে তারা গোলকীপারের মত আরাম আয়েশে থাকতে পারেনা, তাই তারা খেলবেনা, তাহলে কোন ভাবেই দলের জেতার সম্ভাবনা নেই।

ইসলামে নারী-পুরুষের কর্তব্য ও দায়িত্ব অনেকটাই এই ফুটবলের ফর্মেশানের মত। নারীর দায়িত্ব এক, পুরুষের দায়িত্ব এক। কিন্তু কারো দায়িত্ব একইরকম নয়। দুজনের দায়িত্ব একই ধরনের নয়। কিন্তু ওজন করতে গেলে কারো দায়িত্ব কারো চাইতে কম নয়। একজন পুরুষ বা নারী যদি বলে তাদেরকে সমান দায়িত্ব বা অধিকার দেয়া হয়নি তাই তারা কাজ করবেনা, তাহলে পারিবারিক ও সামাজিক জটিলতা সৃষ্টি হতে বাধ্য। ফুটবলের একেকজন খেলোয়াড় একেকজনের পরিপূরক। কোন দলই চায়না একজনও লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ুক। গোলকীপারের কাজ স্ট্রাইকারের মত না। স্ট্রাইকারের কাজ গোলকীপারের মত না। কিন্তু একজনের কাজ আরেকজনকে দিয়ে হবেনা। কল্পনা করুন তো, গোলকীপার সাহেব ফাউল করে লাল কার্ড খেয়ে মাঠ ছাড়ছেন। তাহলে বেচারা ফরোয়ার্ডের কি অবস্থা হবে?

আবার ভেবে দেখুন, দুইজন স্ট্রাইকার কিংবা ৪ জন ডিফেন্ডার লাল কার্ড খেয়ে বেরিয়ে গেছেন, অবস্থাটা কি হবে খেলার? গোলকীপার সাহেব, যিনি নিজেকে দায়িত্বহীন আর বঞ্চিত ভাবতেন, এখন তার অবস্থা ও দায়িত্ব কি হবে?


ইসলামেও তেমনি নারীর কাজ আর পুরুষের কাজ পরস্পর পরিপূরক। নারী যদি তার নির্ধারিত কাজে “সমঅধিকার” লঙ্ঘিত হচ্ছে, এই অজুহাতে কাজ কর্মে ইস্তফা দিয়ে বসেন, কিংবা পুরুষ যদি “বেশি দায়িত্ব চলে এসেছে” বলে ঘরে বসে থেকে বউকে বাইরে পাঠিয়ে দেন, তবে অবস্থা হবে এই ফুটবল টীমের মত। হ য ব র ল।

‘সমফুটবলাধিকার’ এর নাম করে ইকার ক্যাসিয়াসকে যদি ফরোয়ার্ডে পাঠিয়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে গোললাইনে দাঁড় করিয়ে গোল বাঁচাতে দেয়া হয়, তবে রিয়াল মাদ্রিদের ম্যাচের ফলাফল কি হবে, তা সহজে অনুমেয়। তেমনি সমঅধিকারের নাম করে নারীর কাজ পুরুষকে করানো আর পুরুষের কাজ নারীকে করানোটাও হবে দায়িত্ব-সংকটের কারণ। এই ধরনের অদূরদর্শী দায়িত্ব বণ্টনের ফলে ফুটবল টীমের যেমন দফারফা অবস্থা হয়ে যাবার কথা, তেমনি আল্লাহ্‌ কর্তৃক নারী-পুরুষের ওপর অর্পিত দায়িত্বকে অদূরদর্শিতার সাথে EXCHANGE করা হলে, পারিবারিক, সামাজিক তথা গোটা পার্থিব জীবনেই বিপর্যয় নেমে আসতে বাধ্য।


ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে নারী-পুরুষের দায়িত্ব বন্টন আসলে ফুটবল টীমের মতই। এখানে একজনের দায়িত্বের সাথে অন্যের দায়িত্বের তুলনা চলেনা। বোকার মত দেখতে চাইলে একজনের দায়িত্ব ও অধিকার আরেকজনের চাইতে কম বলে মনে হতে পারে, কিন্তু কারো দায়িত্ব কমিয়ে দিয়ে আরেকজনের দায়িত্ব বাড়িয়ে দিলে কিংবা একজনের দায়িত্ব আরেকজনকে দিয়ে EXCHANGE করে দেখতে গেলেই বোঝা যায় প্রত্যেকের দায়িত্ব আসলে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামে একজন নারীর দায়িত্ব,একজন পুরুষের দায়িত্বকে পূর্ণতা দান করে। যেটা নারীর কাজ নয়, সেটা নারীকে করতে দিলে, কিংবা যেটা পুরুষের কাজ নয়, সেটা পুরুষকে করতে দিলে হিজিবিজি লেগে যেত বাধ্য। হ্যাঁ, অনেকেই বলতে পারেন যে এমন অনেক গোলকীপার আছেন যারা গোল করেছেন। হুম। কথা সত্য। কিন্তু ফুটবল ইতিহাস নিজেই বলে এইসব উদাহরণ হল বিচ্ছিন্ন উদাহরণ। মানুষ শুধুমাত্র “সাধারণ জ্ঞান” এর অংশ হিসেবেই এইসব গোলকীপারকে মনে রাখে। কিন্তু এত এত গোলকীপার গোল স্কোর করা স্বত্বেও আজ পর্যন্ত গোলকীপারের দায়িত্ব গোল বাঁচানোই রয়ে গেছে। স্ট্রাইকিং এ দেয়া হয়নি। তাই অনেক সময় আমরা নারীদের পুরুষদের সাথে মেলামেশা করে পুরুষদের দায়িত্ব সফলভাবে পালন করতে দেখলেও সেটা কখনই নারী-পুরুষের অধিকার EXCHANGE এর কারণ হতে পারেনা। গোলকীপারের মতই নারীর দায়িত্ব নারীর কাছেই থাকবে। এটাই আল্লাহ্‌ প্রদত্ত ফিতরা।


তাই যতদিন নারী-পুরুষ তাদের একে অপরের পরিপূরক হিসেবে না দেখে প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখবে, ইসলাম বিদ্বেষীরা তার সুযোগ নিয়ে তাদের কানে ‘সমঅধিকার’ নামক বিষ ঢালতে থাকবে, যা ধীরে ধীরে জন্ম দেবে এক লাগামহীন সমাজের, যা নারীর জন্যে কিংবা পুরুষের জন্যে, কারো জন্যেই কল্যান বয়ে আনবেনা।


ডাঙার প্রাণীকে পানিতে ফেলে, জলের প্রাণীকে ডাঙায় তুলে আনলে সাময়িক উথালপাথালের পরে উভয় প্রাণীই ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যায়।

আল্লাহ্‌ আমাদের হিদায়া দান করুন।


আল্লাহ্‌ সর্বজ্ঞানী

নাস্তিকতার অন্ধ বিশ্বাস

- No comments

নাস্তিকতার অন্ধ বিশ্বাস

 by মুক্তির পথিক

ইসলামের বুদ্ধিবৃত্তিক অবনমনের পর এবং ধর্মনিরপেক্ষতার উপর ভিত্তি করে পুঁজিবাদ এবং সমাজতন্ত্রের উত্থানের পর একটা বিশাল সময় ধরে তথাকথিত আঁতেল বুদ্ধিজীবীদের মুখে স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাসকে অন্ধ বিশ্বাস বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। এখনও সমাজতন্ত্রীরা স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাসকে আফিমতুল্য মনে করে, বিজ্ঞান কর্তিক স্রষ্টাকে আবিষ্কার করার ব্যর্থতা এবং বিবর্তনবাদ তাদের আত্মতৃপ্তির পালে হাওয়া দিয়েছিল। নিম্নে আমরা আলোচনা করার চেষ্টা করব যে, স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস অন্ধ বিশ্বাস, নাকি নাস্তিকতা অন্ধ বিশ্বাস। এইখানে clear হয়ে নেয়া ভাল যে, স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণিত হলে, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র, ফ্রীডম, গণতন্ত্র প্রভৃতি ধারণাগুলো বুদ্ধিবৃত্তিক বৈধতা হারাবে। অর্থাৎ স্রষ্টা প্রদত্ত জীবনব্যবস্থার বাইরে অন্য সকল জীবনব্যবস্থা বুদ্ধিদীপ্ত মনের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।
প্রথমে, আমরা দেখব যে, science or scientific way দিয়ে স্রষ্টাকে প্রমান করা কতটা যৌক্তিক। বস্তুত, science শুধুমাত্র ঐসব বিষয় নিয়ে মতামত দিতে পারে, যেইসব বিষয় মাপার বা পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা তার আছে। উদাহরণস্বরূপ, ১ টা ৫ ফুট লম্বা টেবিল যে ৫ ফুট, এইটা science তখনি বলতে পারবে, যখন তার কাছে ফুট এর সংজ্ঞা জানা থাকবে। কিন্তু টেবিলকে মাপতে পারলেও কোন ব্যক্তি এটা বানিয়েছে, বা আদৌ এটা কেউ বানিয়েছে কিনা, কিংবা সে দেখতে কেমন, কি খায়, কি পরে এইসব প্রশ্নের উত্তর science দিতে পারেনা। science শুধু বস্তুকে পর্যবেক্ষণ করে তার বৈশিষ্ট্য আমাদেরকে জানাতে পারে। কিন্তু বৈশিষ্ট্যের কারণ জানাতে পারেনা। যেমন ২ টা H ১ টা o এর সাথে মিলে পানি তৈরি করে, কিন্তু কেন পানিই তৈরি করল, আগুন কেন তৈরি করলনা, এই ব্যপারে science নীরব। সে শুধু বস্তুর গুনাগুন বা বৈশিষ্ট্য বলতে পারে, ততটুকুই যতটুকু মাপার ক্ষমতা তাকে দেয়া আছে। তাই এই সীমিত science কে দিয়ে স্রষ্টাকে খুঁজে না পেলেই যে তাকে অস্বীকার করতে হবে, এটা হাস্যকর।
দ্বিতীয়ত, অনেকেই logical method ব্যবহার করে স্রষ্টার অস্তিত্ব বুঝার জন্য (যেমন Zakir Nayek)… কিন্তু এর দুর্বলতা হল যে, logic সবসময় ১ টা premise এর উপর ভর করে চলে। premise যদি ভুল হয় তাহলে, logic এর answer ভুল হবে। যেমন ধরুন, কেউ বলল, “ কাঠ আগুনে পুড়ে, রফিকের নৌকাটি কাঠের তৈরি, তাই ওটাও আগুনে পুড়বে”......... এই কথাটি মিথ্যা হবে যদি, নৌকাটি পানিতে ডুবানো থাকে। এখন logic সবসময় যে premise নিয়ে কাজ করে তা যে comprehensive হবে তার কোন মানে নেই। অন্য একটা উদাহরণ দেই, “বাঙ্গালীরা দুর্নীতিবাজ, ফারযানা একজন বাঙ্গালী, সুতরাং সেও দুর্নীতিবাজ”...... এই কথাটা সত্যও হতে পারে আবার মিথ্যাও হতে পারে। কোন guarantee নাই। তাই logic দিয়ে স্রষ্টাকে প্রমান করার প্রমান যেমন আছে, অপ্রমান করার প্রমাণ ও আছে। logical method চূড়ান্ত ও সুনিদৃস্ট কোন সিদ্ধান্ত দেয়না।
এইবার আসি চিন্তার ঐ পদ্ধতিতে যা মানবজাতি সার্বজনীনভাবে তার জীবনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যবহার করে থাকে। আর তা হল, rational method. এই পদ্ধতিতে মানুষ তার চারপাশের বস্তুসমুহকে তার ইন্দ্রিয় দ্বারা উপলব্ধি করে। সেই বস্তু সম্পর্কে তার কাছে কিছু previous information থাকে। সেই previous information কে use করে সে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। সব মানুষই এই পদ্ধতিতে চিন্তা করে থাকে। scientific method আর logical method কে rational method এর শাখা বলা যেতে পারে। মানুষ কিভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহন করে, তার একটা উদাহরণ দেই। যখন আপনার দরজায় কেউ knock করে, তখন আপনি কিন্তু মাপতে বসেন না যে, কত frequency তে sound wave টা আসল, তারপর হিসাব করেন যে একজন মানুষ কত জোরে বা কত frequency তে আঘাত করতে পারে, তারপর দরজা খুলেন। না, আমরা কেউই এইভাবে সিদ্ধান্ত নিইনা। বরং দরজায় knock করলে তা আমরা ইন্দ্রিয় (শ্রবণ) দ্বারা উপলব্ধি করি, আমাদের মস্তিষ্কে এর ব্যপারে previous information আছে যে, knock করা মানে কেউ এসেছে, এবং তখন আমরা দরজা খুলার সিদ্ধান্ত নিই। তার মানে দাঁড়াল যে, rational method এ সিদ্ধান্ত নিতে যে কয়টা জিনিষ লাগে, তা হল
১. বাস্তবতা
২.ইন্দ্রিয় দ্বারা বাস্তবতাকে উপলব্ধি করা
৩.বাস্তবতা সম্পর্কে previous information
4.previous information এর সাথে link করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অর্থাৎ sound mind
হুমমমমমমমম, মনের মধ্যে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জেগেছে, স্রষ্টার কোন বাস্তবতা আমাদের সামনে নেই যে আমরা তাকে ইন্দ্রিয় দ্বারা উপলব্ধি করব, তাহলে স্রষ্টার অস্তিত্ব এই পদ্ধতিতে বুঝব কিভাবে??............... ১০০% correct. আপনার দরজায় নক করলে আপনি দরজার বাইরে কারো অস্তিত্ব বুঝতে পারেন, কিন্তু যিনি নক করছে, তিনি কি পুরুষ না মহিলা, ফর্সা নাকি কালো তা কিন্তু বুঝার উপায় নেই। কিন্তু তার অস্তিত্ব বুঝা যায়। আমাদের সামনে স্রষ্টার বাস্তবতা না থাকলেও সমস্যা নেই। আমাদের চারপাশে যে বস্তুসমুহ আছে, যাদেরকে আমরা ইন্দ্রিয় দ্বারা উপলব্ধি করতে পারি, চলুন সেগুলোকে rational study করে দেখি। আমরা আমাদের আশপাশের প্রকৃতিকে পর্যবেক্ষণ করব, এবং দেখব আদৌ কোন স্রষ্টার প্রয়োজন আছে কিনা। এখানে মনে রাখতে হবে এই পদ্ধতিতে আমরা দেখব মহাবিশ্বের স্রষ্টা আছে কিনা, কিন্তু তিনি দেখতে কেমন, কিভাবে কাজ করেন তা rationally জানা সম্ভব নয়, কারণ উনি আমাদের ইন্দ্রিয়ের বাইরে, তাকে জানতে হলে একটা পদ্ধতিই আছে, আর তা হল উনি যদি নিজে থেকে আমাদেরকে জানান (পরে আলোচনা করা হবে)।
আমাদের চারপাশের প্রত্যেকটি বস্তুর মধ্যেই ২ টি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এরা প্রত্যেকেই সীমাবদ্ধ এবং নির্ভরশীল। যেমন, গাছ আকার আকৃতি, দ্বারা সীমাবদ্ধ এবং নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য সূর্য, পানি এগুলর উপর নির্ভরশীল। মানুষ নানা দিক দিয়ে সীমাবদ্ধ এবং নির্ভরশীল। আলো তরঙ্গদৈর্ঘ্য, গতি দ্বারা সীমাবদ্ধ, নির্ভরশীল উৎস কিংবা রুপান্তর প্রক্রিয়ার উপর। প্রত্যেকটি বস্তু নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য অন্য কিছুর উপর নির্ভরশীল। এবং এরা কেউই নিজেরা নিজেদের অস্তিত্তের জন্য দায়ী নয়। যদি নিজেরা নিজেদেরকে অস্তিত্তে আনত তাহলে সীমাবদ্ধতা আর দুর্বলতার উর্ধে থাকত।
যদি ধরে নেই যে, নির্ভরশীলতায় একে অপরের উপর নির্ভরশীল এবং কোন স্রষ্টার দরকার নেই, তাহলে আদিকাল থেকে চলে আসা ঘটনা বা বস্তুসমুহের সরুপ দাঁড়ায়,
…..y
এইটা অসম্ভব, কারণ কোন শুরু না থাকলে, v, w, x, y এদের কারো অস্তিত্তে আসা সম্ভব নয়। একটা উদাহরণ দেই। আপনি একটা ক্রিকেট দলের ১০ নাম্বার ব্যাটসম্যান। আপনি কয়জনের পর নামবেন? ৯ জনের পর। আপনি কোন দলের ১০০ তম ব্যাটসম্যান হলে নামবেন ৯৯ জনের পর। আপনার দলে যদি অসীম সংখ্যক ব্যাটসম্যান থাকে, তাহলে আপনি কবে নামবেন? কখনই নামবেন না, কারন আপনার পূর্বে অসীম সংখ্যক ব্যাটসম্যান আছে (অর্থাৎ শুরুও নাই, শেষ ও নাই)... আপনার আগেরজনের পূর্বেও অসীম সংখ্যক, তার আগের জনের পূর্বেও অসীম সংখ্যক............ সুতরাং কোন ব্যাটসম্যানই নামতে পারবেনা, কারণ প্রত্যেকের পূর্বেই আছে অসীম সংখ্যক...... অর্থাৎ কোন শুরু যদি না থাকে তাহলে কেউই exist করেনা। অসীম এই শব্দটা শুধু mathematical ব্যপারে use করা হয়, বাস্তবতায় কোন কিছুই অসীম নয় (আমাদের চেনা বাস্তবতায়)। সুতরাং একটা শুরু আছে...আরেকটা উদাহরণ দেই, আপনাকে যদি বলি ১০ থেকে শুরু করে ৯৯ পর্যন্ত আসেন, আপনি গুণতে পারবেন, কিন্তু যদি বলা হয়, অসীম থেকে শুরু করে ৯৯ পর্যন্ত গুনেন, it’s impossible ….. আপনি শুরুই করতে পারবেন না এবং ৯৯ তেও আসতে পারবেন না। ৯৯ তে আসতে হলে শুরু আপনাকে করতেই হবে। সুতরাং মহাবিশ্বের শুরু আছে, এবং সে নিজে নিজে তা শুরু করেনি।
wait…. Wait….. wait…. The atheists still didn lose hope….. তারা বলছে zyxwvz অর্থাৎ এটা একটা বৃত্তাকার চক্র........(NICE!!!) অর্থাৎ Z থেকে শুরু হয়ে আবার Z এ এসে মিশেছে। এবং Z হল INITIATOR. অর্থাৎ চক্রটাকে ছোট করলে হয় যে Z Y….(প্রথম আর শেষ বস্তু)... সুতরাং z, y এর উপর নির্ভরশীল, আর y, z এর উপর নির্ভরশীল। কিন্তু z না থাকলে তো y existence এ আসতে পারেনা, আবার y না থাকলে zআসতে পারেনা। তাহলে হয় দুইজন একইসাথে exist করে অথবা দুইজনই তাদের অস্তিত্বে আসার জন্য এই বৃত্তের বাইরে তাদের কোন স্রষ্টার উপর নির্ভরশীল।
দুইজন একসাথে exist করলে সমস্যা আছে। তাহলে পৃথিবীর তথা মহাবিশ্বের সব ঘটনাকে একসাথে exist করতে হবে... অর্থাৎ আমি , আমার দাদা, আমার দাদার দাদার দাদার দাদা, আমার নাতি, আমার নাতির নাতির নাতি সবাইকে একসাথে exist করতে হবে। কিন্তু আমরা বাস্তবতায় এটা দেখিনা। উপরন্তু z যেহেতু y এর উপর নির্ভরশীল, সেহেতু Y এর এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা INITIATOR z এর নাই। তার মানে y, তার অস্তিত্তের জন্য z এর উপর নির্ভরশীল নয় (বিবর্তনবাদ খাইল বাঁশ)... একইভাবে z এর কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যার কারণ y নয়। তাই z ও y এর উপর নির্ভরশীল নয়। এরা প্রত্যেকেই এদের অস্তিত্তের জন্য এদের চক্রের বাইরের কারো উপর নির্ভরশীল।
সুতরাং মহাবিশ্ব নিজেকে নিজে অস্তিত্তে আনেনি, এবং এর পুর অস্তিত্ব অন্য কারো উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ মহাবিশ্বের একজন স্রষ্টা আছে। এবং সেই স্রষ্টা মহাবিশ্বের উপর dependentনন, কারণ তাহলে তিনিও চক্রের মধ্যে ঢুকে পড়েন এবং তিনিও অস্তিত্তের জন্য অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। সুতরাং আমরা সিদ্ধান্তে আসলাম এই মহাবিশ্বের অস্তিত্তের জন্য একজন স্রষ্টা থাকা অপরিহার্য। স্রষ্টা ছাড়া আমাদের অস্তিত্ব অসম্ভব। সুতরাং পরের আলোচনা হতে পারে,
Who is the Creator of the Creator…..

মুসলিম উম্মাহ্‌র অধঃপতনের বিশ্লেষণ

- No comments
মুসলিম উম্মাহ্‌র অধঃপতনের বিশ্লেষণ
ভূমিকা

অধঃপতন উন্নতির বিপরীত। উন্নতি = বুদ্ধিবৃত্তিক উত্থান। তারাই একটি উন্নত জাতি যারা সমাজে সকল সমস্যার সমাধানের জন্য একটি দর্শন বা আদর্শকে চিন্তার ভিত্তি হিসেবে বেছে নেয় এবং তাতে ঐক্যবদ্ধ থাকে। অর্থাৎ একটি উন্নত সমাজের মানুষেরা তাদের সকল প্রবৃত্তিগত ও জৈবিক চাহিদা মেটানোর জন্য জীবন সম্পর্কে একটি আদর্শের উপর ভিত্তি করে চলে, এই আদর্শটি আবার একটি বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থকে। এটাই উন্নত সমাজ, কেননা এটি একটি যুক্তিসঙ্গত (Rational) ও যাচাই বাছাইকৃত (Justified) মৌলিক বিশ্বাসের উপর সংগঠিত এবং সমাজের প্রতিটি ধ্যান-ধারণাই এই মৌলিক বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। অতএব, সেই সমাজই অধঃপতিত, যা কোন মৌলিক বিশ্বাসকে তার সকল চিন্তার উৎস হিসেবে বেছে নেয় না, অথবা তাতে ঐক্যবদ্ধ থাকেনা।

বুদ্ধিবৃত্তিক উত্থান

কোনও জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক উত্থান ঘটতে পারে দু'টি বিষয়ে ঐক্যমতের ভিত্তিতে। বিষয়ে দু'টি হলো:-

১. কোন একটি আদর্শের মূল বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা।
২. রাষ্ট্রের সকল মতবিরোধ ঐ মূল বিশ্বাসের ভিত্তিতে সমাধান করা যাতে জনগণের মাঝে ঐক্য টিকে থাকে।

মূল বিশ্বাসের উপর জাতিকে ঐক্য:

উন্নত সমাজের একটি সুন্দর উদাহরণ হচ্ছে মদীনা। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে মদীনার সমাজ আওস, খাযরাজ ও ইহুদীদের মাঝে তিন ভাগে বিভক্ত ছিল। তাদের পারস্পরিক স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণে সেখানে যুদ্ধ-কলহ লেগে থাকত এবং তারা ছিল একটি দুর্বল জাতি। ইসলাম গ্রহণের পর তারা সমাজের সকল ধ্যান-ধারণা ও সমস্যা সমাধানের মূলভিত্তি হিসেবে ইসলামী জীবনাদর্শকে বেছে নেয়। যদিও ইহুদীরা অনিচ্ছাসত্ত্বে তা মেনে নেয় কিন্তু সামগ্রিকভাবে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের বিষয়ে সকলেই ঐক্যবদ্ধ থাকে। সমাজের পারস্পরিক স্বার্থগুলোকে তারা ইসলাম অনুযায়ী হালাল হিসেবে গ্রহণ করে অথবা হারাম হিসেবে প্রত্যাখ্যান করে।

যদিও সে সমাজে মুনাফিকেরা ছিল, তবুও কেউ কখনও ইসলামের মূল বিশ্বাস ও তার উপযোগিতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেনি। ফলে মুনাফিকেরা যখন 'মসজিদে দিরার' প্রতিষ্ঠা করে ইসলামের মূল বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করে, তখন রাষ্ট্র এর সমুচিত জবাব দেয় এবং 'মসজিদে দিরারকে' ধ্বংস করে। রাসূল (সাঃ) জীবদ্দশায় মুসলিম উম্মাহ্‌র অভ্যন্তরে ইসলামের মূল বিশ্বাস নিয়ে নূন্যতম সন্দেহের নিদর্শন পাওয়া যায়নি। অতএব সেসময় মুসলিমদের অধঃপতনের প্রশ্নই আসে না। উপরন্তু ইসলামের মূল বিশ্বাসে ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় মুসলিম উম্মাহ্‌ আরবের বর্বর জাতি থেকে অত্যন্ত দ্রুত শক্তিশালী একটি জাতিতে পরিণত হয়েছিল।

সমাজের মতবিরোধ নিরসনে মৌলিক আদর্শের ভূমিকা

রাষ্ট্র যখন সমাজের পারস্পরিক স্বার্থ নির্ধারণকারী মৌলিক বিশ্বাসকে সংরক্ষণ, প্রতিষ্ঠা ও প্রচার করে তখন কোনও কোনও ক্ষেত্রে কিছু লোক অসন্তুষ্ট হলেও রাষ্ট্রীয় বিধি-নিষেধকে সকলেই মেনে নেয়। ফলে সমাজে কখনও কোনও বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে জনগণ তার মৌলিক বিশ্বাস, জীবনাদর্শ এবং মূল্যবোধের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ থাকে। জনগণ সরকারকে এই মৌলিক বিশ্বাসের সংরক্ষক হিসেবে নিয়োগ করে।

মৌলিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে মতবিরোধ নিরসন করে এমন সমাজের উদাহরণ:

১৮৬১ সালে আমেরিকার অভ্যন্তরীণ বিভক্তির কারণে গৃহযুদ্ধ (Civil War) শুরু হয় যা কিনা তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ ছিল। প্রায় ৬,২০,০০০ সৈন্য এতে নিহত হয় এবং অসংখ্য সাধারণ মানুষ আহত হয়। আব্রাহাম লিংকন এসে সকল জাতিগুলোকে গণতন্ত্রের মূল বিশ্বাসের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করে। এই ঐক্যের ঠিক পরপরই আমেরিকা বিশ্বের রাজনীতেতে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্ররূপে আবির্ভূত হয়। আজ পর্যন্ত তারা গণতন্ত্রকে তাদের সকল মতবিরোধ সমাধানের উৎস হিসেবে মেনে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আছে।

৯/১১ এর পর মার্কিন সরকার যখন আফগানিস্তান আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন আমেরিকান জাতির মাঝে বড় কোনও বিভক্তি দেখা দেয়নি, বরং তারা রাষ্ট্রের দেয়া সিদ্ধান্তের প্রতি ঐক্যবদ্ধ ছিল। এমনকি সাম্প্রতিক নির্বাচনী প্রচারণাতেও বারাক ওবামা ও ম্যাককেইন দুজনই ইসরাইলকে অবৈধ সমর্থনের ব্যাপারে একমত রয়েছেন। দুজনই ইরাক যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একমত, একজন ভাবছেন এই দখলদারীত্ব দীর্ঘসময় থাকবে, অপরজন ভাবছেন তুলনামূলকভাবে কিছুটা দ্রুততর হবে। দুজনই আফগানিস্তানে দখলদারীত্ব টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে একমত।

মতবিরোধ নিরসনে মৌলিক কোন বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে না এমন সমাজের উদাহরণ:

- ১৯৪৫ সলে জোসেফ টিটো যুগোস্লভিয়ায় ঐ অঞ্চলের সার্বিয়ান, ক্রোয়েশিয়ান, বসনিয়ান ও অন্য জাতিগুলোকে একত্রে শাসন করেন। তিনি তাদেরকে সামাজতন্ত্রের কথা বললেও, প্রত্যেক জাতির জাতীয়তাবাদ বহাল রাখেন এবং তাদেরকে পারস্পরিক স্বার্থের সমঝোতার ভিত্তিতে শাসন করেন। কিন্তু ঐ অঞ্চলের জাতিগুলো কখনই সমাজতন্ত্রের মোলিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয়নি। ফলে সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পরপরই এই জাতিগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত শুরু হয়ে যায় যা আজোবধি চলছে।

- বাংলাদেশে ১/১১ এর আগে ও পরে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলাও ঐ একই কারণে ঘটেছে। এদেশের পুরো জাতি বিএনপি ও আওয়ামীলীগে বিভক্ত হয়ে আছে। পুরো দেশবাসী কোন একটি মৌলিক জীবনাদর্শকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরেনি। ফলে এদেশে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা (Anarchy) এখনও চলছে।

কখন একটি জাতির অধঃপতন ঘটে

অতএব রাষ্ট্রের ভিত্তি হচ্ছে একটি মৌলিক বিশ্বাস যা থেকে একটি জীবনাদর্শ আসে এবং যা সমাজের সব ধরণের পারস্পরিক স্বার্থকে সংজ্ঞায়িত করে এবং তাকে প্রতিষ্ঠিত করে। যে রাষ্ট্র তার মৌলিক বিশ্বাসের প্রতি যতবেশী দৃঢ় ও ঐক্যবদ্ধ সে রাষ্ট্র তত বেশী শক্তিশালী।

যদি শক্তিশালী জাতি বলতে আমরা এমন একটি জাতিকে বুঝি যে প্রতিটি সমস্যার সমাধান করে তার মূল বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে, তবে অধঃপতিত জাতি বলতে আমরা সে জাতিকেই বুঝবো যে সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে তার মৌলিক বিশ্বাসের উপযোগিতার উপর সন্দেহ পোষণ শুরু করে।

সমাজের এই অধঃপতন দুইভাবে ঘটতে পারে।

প্রথমত : কোন আন্দোলন বা অন্য কোন আদর্শিক রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ আসলে অধঃপতন ঘটতে পারে।
দ্বিতীয়ত : সমাজের যে কেউ মূল বিশ্বাসকে প্রশ্ন করা শুরু করলেই অধঃপতন ঘটে না। যেমন আবদুল্লাহ্‌ ইবনে উবাই ইবনে সালুল ইসলামকে মেনে না নিলেও সমাজে এর প্রভাব পড়েনি। আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে কোনও কমিউনিষ্টপন্থীর মতামত মার্কিন রাষ্ট্র পরিচালনায় কোনও ভূমিকা রাখে না।

সমাজে যারা বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবে কাজ করেন যেমন - বুদ্ধিজীবি, রাজনৈতিক দল বা কোনও রাজনীতিবিদ, তারা যদি সমাজের মূল বিশ্বাসের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়ে প্রশ্ন করা শুরু করেন তখন তার প্রভাব সমাজে পড়ে। অর্থাৎ সমাজের প্রভাবশালী লোকেরা যখন রাষ্ট্রের মূল ভিত্তিকে নিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করে তখনই ঐ জাতি অধঃপতনের মুখে পড়ে।

মুসলিম উম্মাহ্‌র অধঃপতন

আলী (রা.) ও মু'আবিয়া (রা.) এর বিরোধকাল:

মু'আবিয়া (রা.) ও আলী (রা.)-এর বিরোধকালে ইসলামের মূল বিশ্বাস, আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার একত্ববাদ বা ইসলাম কি যুগোযোগী কিনা - এ ধরণের কোনও মৌলিক বিষয়ে তাদের মাঝে মতানৈক্য হয়নি। তারা খলীফার বিশেষ একটি বিষয়ে নির্দিষ্ট একটি আহকাম নিয়ে বিরোধের মুখোমুখি হন। উসমান (রা.) এর হত্যার বিচার ও খলীফা নির্বাচনের মাঝে কোনটি আগে হবে তা নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। মু'আবিয়া (রা.) এর মতামত ছিল আগে উসমান (রা.) এর হত্যাকারীর বিচার করতে হবে, তিনি আলী (রা.) কে খলীফা হিসেবে বাই'আত দিতে অস্বীকৃতি জানান। আলী (রা.), পক্ষান্তরে, খলীফা নির্বাচন ও হত্যাকারীর বিচারের বিষয় দুটিকে আলাদা দুইটি বিষয় হিসেবে বিবেচনা করেন যা কিনা সঠিক ছিল। ফলে মু'আবিয়া (রা.) এর বাই'আতের অস্বীকৃতিকে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে দেখেন। এখানে লক্ষণীয় যে, খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা বা ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস নিয়ে তাদের মাঝে কোনও প্রশ্ন উঠেনি। ফলে রোমনরা যখন মু'আবিয়া (রা.) কে সাহায্যের আহ্বান করে, তখন তিনি কেবল তা প্রত্যাখ্যানই করেননি বরং এই বিরোধ শেষে রোমানদের সাম্রাজ্য ধ্বংস করে তা ইসলামের পতাকাতলে নিয়ে আসার বার্তা পাঠিয়েছিলেন। যদিও এটা বড় ধরণের একটি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ছিল, তথাপি ইসলামের মূল বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্র পরিচালনা নিয়ে উম্মাহ্‌র মাঝে কোনও প্রশ্ন উঠেনি। অতএব, এসময়ে মুসলিম উম্মাহ্‌র অধঃপতন ঘটেনি।

ইয়াজীদ এর খলীফা মনোনয়ন:

ইয়াজীদকে খলীফা হিসেবে বাই'আত দেয়ার বিষয়টি একটি ভুল ইজতিহাদ ছিল। এই ইজতিহাদ বায়াত প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে ফেলে, যার প্রভাব পরবর্তিতে ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই। যাই হোক, এটা ছিল একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে ভুল। কিন্তু ইসলামের মূল বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্র পরিচালনা নিয়ে তখন উম্মাহ্‌র মাঝে কোন সন্দেহ দেখা দেয়নি। অর্থাৎ সে সময়ও উম্মাহ্‌র কোনও অধঃপতন ঘটেনি।

ইজতিহাদের দরজা বন্ধ করা:

হিজরী চারশত সালের দিকে 'আল কাফফাল' ইজতিহাদ প্রক্রিয়া বন্ধ করার ফতোয়া ঘোষণা করেন। এতে যে কোন নতুন বিষয়ের উদ্ভব হলে অথবা অন্য কোন আদর্শ থেকে আঘাত আসলে করণীয় বিষয় নির্ধারণে ইসলামের মূল উৎসে ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।

এই প্রক্রিয়া বন্ধ হওয়ার পর সর্বত্র পূর্ববর্তী মুজতাহিদগণ কর্তৃক ইজতিহাদকৃত ফতোয়াগুলো লিপিবদ্ধ করে পুস্তকাকারে সংরক্ষণের প্রবনতা দেখা যায়। যেমন উসমানী খিলাফতকালে হানাফি মাযহাবের ফতোয়াগুলো লিপিবদ্ধ করা হয় এবং উম্মাহ্‌ এর বাইরে ইজতিহাদ করা থেকে দূরে সরে আসে। উল্লেখ্য এ অঞ্চলে মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব ইসলাম প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট থাকলেও তার শাসনামলেই হানাফি মাযহাবের সব হুকুমগুলোকে 'ফতোয়া-ই-আলমগীরি' গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা হয়।

ইজতিহাদ বন্ধ করার উদ্দেশ্য ছিল মূলত দু'টি।

প্রথমত : উম্মাহ্‌ ইজতিহাদের বিষয়ে নিয়মনীতি মানার কঠোরতার বিষয়ে অসতর্ক হয়ে পড়েছিল, ফলে খুবই দুর্বল ধরণের ইজতিহাদ করা হচ্ছিল।

দ্বিতীয়ত : পূর্ববর্তী ফকীহ্‌গণ এত ব্যাপক ও সুনির্দিষ্ট বিষয়ে ইজতিহাদের বিশাল জ্ঞানভান্ডার রেখে গিয়েছিলেন যে অনেকের ধারণা ছিল ভবিষ্যতে সকল পরিস্থিতির জন্যই হয়তো ইজতিহাদ করা হয়ে গেছে।

এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে উম্মাহ্‌ তখনও অধঃপতিত হয়ে পড়েনি। কেননা উম্মাহ্‌ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন জীবনদর্শকে বেছে নেয়ার জন্য ইজতিহাদ করা বন্ধ করেনি। উম্মাহ্‌র জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইসলামকে সমস্যার সমাধানের উৎস হিসেবে ব্যবহার করেছে, ইসলামের মূল বিশ্বাসকে নিয়ে সন্দেহ করার প্রশ্নই আসেনি।

উসমানি খিলাফতকাল:

উসমানী খিলাফতের শুরুর দিকে মুসলিম সেনাবাহিনী দূর্দমনীয় একটি শক্তি ছিল। ইউরোপিয়ানরা সে সময় সুলায়মান আল কানুনীকে 'সুলায়মান দি ম্যাগনিফিসেন্ট' নামে আখ্যায়িত করত। কিন্তু আমরা যদি একটু গভীরভাবে লক্ষ্য করি তবে দেখতে পাব যে, মুসলিম উম্মাহ্‌র মাঝে তখন অনেকগুলো উলাইয়া (প্রদেশ) ছিল। এসব উলাইয়াগুলো অনেকটা স্বাধীন ও বিচ্ছিন্ন ছিল। উসমানী খিলাফত কর্তৃক ইউরোপ বিজয়কে প্রথম দিকে সাহাবা (রা.) কর্তৃক আরব বিজয়ের সাথে তুলনা করা যায় না। সাহাবারা (রা.) বিভিন্ন অঞ্চল বিজয়ের সাথে সাথে সে অঞ্চলের জনগণের মাঝে ইসলামের মূল বিশ্বাস প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলেন। ফলে খিলাফত ধ্বংসের পর আজও আরব জাতিতে ইসলামের মূল বিশ্বাস অটুট আছে। রাজনৈতিকভাবে ইসলামী শাসন না থাকলে আরবের জনগণ আজও জীবনাদর্শ হিসেবে ইসলামকে প্রত্যাখ্যান করেনি।

পক্ষান্তরে উসমানী খিলাফত ইউরোপ বিজয়ের পর কেবলমাত্র সামরিক শক্তিতে নিজেদেরকে শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগী ছিল। ইসলামের মূল বিশ্বাস ইউরোপে প্রচার ও প্রতিষ্ঠার বিষয়ে এবং সে অঞ্চলের জনগণকে এর ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে তাদের উল্লেখযোগ্য কোন প্রচেষ্টা ছিল না। ফলে খিলাফত ধ্বংসের পর এসব অঞ্চলের বেশিরভাগ রাষ্ট্রই ইসলামী জীবনাদর্শ পরিত্যাগ করে।

এ অঞ্চলেও একই ঘটনা ঘটেছিল। ভারত উপমহাদেশে মুসলিম শাসকেরা রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায় থাকলেও এ অঞ্চলের সাধারণ জনগণকে ইসলামের মূল বিশ্বাসে ঐক্যবদ্ধ করে আদর্শিক জাতিতে পরিণত করার উল্লেখযোগ্য কোনও চেষ্টা তারা করেননি। ফলে হিন্দু ও মুসলমানদের মাঝে বিভেদ সমাজে সুপ্ত অবস্থায় ছিল। একমাত্র আওরঙ্গজেব তার শাসনামলে এব্যাপারে কিছুটা সচেষ্ট হন। কিন্তু বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহ্‌র অধঃপতনের কারণে তিনি ইসলামের ভিত্তিতে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় ততটা সফল হতে পারেননি। পরবর্তীতে ব্রিটিশরা এ অঞ্চল জয় করার জন্য হিন্দু-মুসলিম বিভেদকে ব্যবহার করে, যা কিনা 'ডিভাইড এন্ড রুল' নামে পরিচিত। বিট্রিশ শাসনামলে এ অঞ্চলে মুসলিমরা সাধারণভাবে শোষিত ছিল, কিন্তু হিন্দুরা অনেক বেশী পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিল। সেই জাতিগত বিভেদ থেকে এখনকার ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সৃষ্টি। অর্থাৎ এ অঞ্চলে কোন ধরণের ঐক্য কখনই প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

এখানে উল্লেখ্য যে, যদিও সামরিক দিক থেকে ইউরোপের তুলনায় উসমানী খিলাফত শক্তিশালী ছিল, তথাপি মুসলিম উম্মাহ্‌ ভুল মাপকাঠি দিয়ে ইউরোপের সাথে নিজেকে তুলনা করত। তারা কেবল সামরিক শক্তিতে ইউরোপের চেয়ে এগিয়ে থাকার দিকে মনোযোগী ছিল, কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তিতে নিজেদের উৎকর্ষ সাধনে সচেষ্ট ছিল না। যাই হোক, উসমানী খিলাফতের শুরুকে আমরা অধঃপতন বলতে পারি না। কেননা রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসেবে ইসলামের মূল বিশ্বাসকে নিয়ে তাদের মাঝে তখনও কোনও প্রশ্ন ছিল না।

শিল্প বিপ্লব:

শিল্প বিপ্লবের পর পুঁজিবাদী আদর্শে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইউরোপের জাতিগুলো সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেক উন্নতি লাভ করে। তাদের সমাজের এই অগ্রগতি মুসলিম উম্মাহ্‌র প্রভাবশালীদের মাঝে আদর্শিক আঘাত হানে। তারা রাষ্ট্রের ভিত্তি ইসলাম হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করে। এ সময় মুসলিম উম্মাহ্‌র রাজনৈতিক পরিমন্ডলে পশ্চিমাদের সংবিধান নিয়ে আলোচনা শুরু হয় এবং ইসলামের যুগোপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। ইসলাম সংস্কারের দাবীতে অনেক আন্দোলনই তখন দানা বেঁধে উঠে। অনেকে পশ্চিমা সংবিধানের বিভিন্ন অংশ মুসলিম সমাজেও বাস্তবায়নের চেষ্টা চালায়। এটাতেই মুসলিম উম্মাহ্‌র অধঃপতনের লক্ষণ প্রকাশ পায়। পুঁজিবাদী আদর্শের পক্ষ থেকে যখন এই চ্যালেঞ্জ আসে তখন মুসলিম উম্মাহ্‌র অধঃপতন ঘটে।

অতএব, খ্রীস্টিয় আঠার শতকের দিকেই মুসলিম উম্মাহ্‌র অধঃপতন ঘটে। কেননা এ সময়ে মুসলিম উম্মাহ্‌ ইসলামের মূল বিশ্বাসকে রাষ্ট্রের ভিত্তি করা নিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করে। আলী (রা.) ও মু'আবিয়া (রা.) যেমন খলীফা কোন কাজটি প্রথমে করবেন সেটা নিয়ে বিতর্ক করেছিলেন, এসময়ে উম্মাহ্‌ সে ধরণের বিতর্ক না করে খলীফা পদটি থাকবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করে। গণতন্ত্র ও ইসলামের মাঝে তফাৎ নিয়ে আলোচনা না করে, সেটাকে ইসলামী সমাজে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দুর্বল ব্যাখ্যা দেয়া শুরু হয়। খিলাফত রাষ্ট্রের ওয়ালী এবং রাষ্ট্রের সম্পর্ক আলোচনা না করে, কি করে confederacy of states করা যায় তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার এই যে, যদিও ইসলামের উদার ব্যাখ্যা রোধের জন্য ইজতিহাদের প্রক্রিয়া বন্ধ করা হয়েছিল, অথচ এসময়ে মুসলিম উম্মাহ্‌র অনেক বুদ্ধিজীবী প্রচুর উদার ব্যাখ্যা দেওয়া শুরু করেন। তারা পশ্চিমা ধ্যান-ধারণাকে ইসলামের ভেতর প্রতিষ্ঠার চেষ্টা শুরু করেন, যদিও সেগুলো ইসলামের মূল বিশ্বাসের বিরোধী ছিল।

ফলে, ইসলামের মূল বিশ্বাস রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে কিনা - উম্মাহ্‌র এই প্রশ্ন করার এই প্রবণতার মাধ্যমেই তার অধঃপতনের শুরু প্রমাণিত হয়। কেননা যার ভিত্তিতে সমাজে উদ্ভুত সমস্যার সমাধান করা হবে, তাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। ইসলামের সমাধান বা রাজনৈতিক পরিমন্ডলে যারা এই সমাধান দেন (অর্থাৎ খলীফা, ওয়ালী) তাদের উপর উম্মাহ্‌ আস্থাহীন হয়ে পড়ে।

সারাংশ

মুসলিম উম্মাহ্‌র মাঝে এই ব্যাপক অধঃপতনের মূল কারণ এটাই ছিল যে নতুন নতুন পরিস্থিতিতে ইজতিহাদ করার প্রক্রিয়া তখন সমাজে প্রচলিত ছিল না। ফলে সমস্যার সমাধান ও ইসলামের মূল বিশ্বাসের মাঝে কোনও যোগসূত্র ছিল না। এক পর্যায়ে মুসলিম উম্মাহ্‌ ইসলামকে কেন জীবনাদর্শ হিসেবে বেছে নিয়েছে তার যৌক্তিক ব্যাখ্যা থেকে দূরে সরে যায়। শিল্প বিপ্লব, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার বিষয়গুলো গ্রহণযোগ্য কিনা তার সিদ্ধান্ত উম্মাহ্‌ নিতে পারছিল না। প্রিন্টিং মেশিনের ব্যবহার বর্জন করা অথবা গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টাই প্রমাণ করে যে উম্মাহ্‌র কাছে কোনও মাপকাঠি ছিল না।

অতএব কোনও সমাজে উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে যদি সেখানকার মূল বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন উঠে, তবে সেটাই হবে অধঃপতনের প্রথম লক্ষণ। আর সে সমাজে যদি অন্য কোনও আদর্শ থেকে আঘাত আসে, তবে সে সমাজ অধঃপতিত হয়।

মুস্তফা মিনহাজ

Sunday, October 6, 2013

সেই চিরন্তন শত্রুতা ...

- No comments

সেই চিরন্তন শত্রুতা ...

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

মুসলিমদের মনের মধ্যে খুব সিস্টেমেটিক্যালি গেথেঁ দেয়া হয়েছে ইসলাম পালনে কোন ধরণের কষ্ট বা শত্রুতা বা বাধাঁ-বিপত্তি নেই। ইসলাম নিয়ে তাই আজকাল সত্য কথা বললে যখন সমাজ সেটা সহ্য করতে পারে না তখন একটা chaos হয় আর লোকে তখন বলে,"ভাই ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার দরকার নাই"। আমরা যেটা মানতে পারছি না সেটাকে "বাড়াবাড়ি" হিসেবে চালিয়ে চুপ থাকাকে ইসলাম লাইসেন্স দেয় নি। বরং কুর'আন বলছে, ইসলাম পালনে এই 'বাড়াবাড়ি'র অভিযোগ নতুন কিছু নয়, বরং এটা একটা চিরন্তন স্বাভাবিক ঘটনা। যুগে যুগে যারা ইসলামের পথে ছিল তাদের সাথে যারা ইসলামের পথে ছিল না তাদের কোন প্রকার ঝামেলা হয় নাই-এরকম হয় নাই। এখানে সহাবস্থান বলে কিছু আশা করা বৃথা, হয় সত্য টিকে থাকবে না হয় মিথ্যা, দুটো একসাথে নয়।বরং এটাই inevitable যে ইসলাম প্রতিষ্ঠা পাবে মু'মিন এবং কাফিরদের শত্রুতা, বাইয়্যিনাহ (সত্য আগমনের পর মু''মিন এবং কাফিরদের মধ্যে সুস্পষ্ট বিভক্তি) এবং কাফিরদের উপর মু'মিনদের বিজয়ের মাধ্যমে।

নিচের লেখাটিতে মু'মিন এবং কাফিরদের মধ্যকার এই শত্রুতার স্বরুপ তুলে ধরা হয়েছে।

*** *** *** *** ***

আল্লাহ্‌, মহিমান্বিত তাঁর সত্তা, তাক্বদিরের মাধ্যমে মু’মিনদের ওপর  কাফিরদেরকে শক্তিশালী করেন  মু’মিনদের সাথে শত্রুতা পোষণ ও যুদ্ধ করার ব্যাপারে কাফিরদেরকে আল্লাহ্‌  সুবহানাহু ওয়া তা'আলা শারীয়াহr মাধ্যমে বা কোন নাবীর যবান এর মাধ্যমে আদেশ পাঠাননি; এটি 'তাক্বদির দ্বারা নির্ধারিত'। তিনি বরং তাদেরকে আদেশ দিয়েছেন  ইবাদত এবং আনুগত্যের। সুতরাং মু'মিনদের উপর কাফিরদের শক্তি অর্জন হলো 'তাক্বদির' আর কাফিরদের উপর  মু'মিনদের শক্তি অর্জন হলো 'শারয়ী হুকুম' এবং 'তাক্বদির'।

আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ

"আমি এভাবেই প্রত্যেক নাবীর শত্রু করেছিলাম অপরাধীদের মধ্য থেকে।" [সূরা ফুরকান ২৫:৩১]

তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ

"এইরূপে আমি মানুষ ও জ্বীনদের মধ্যে শয়তানদেরকে নাবীদের শত্রু করেছি।" [সূরা আন'আম ৬:১১২]

তিনি সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ

"এইরূপে আমি প্রত্যেক জনপদে সেখানকার অপরাধী প্রধানদেরকে চক্রান্ত করার অবকাশ দিয়েছি।" [সূরা আন'আম ৬: ১২৩]

উপরোক্ত তিনটি আয়াতেই আল্লাহ্‌, সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেছেনঃ

'আমি ... করেছি' বা 'আমি ... দিয়েছি' ....অর্থাৎ এগুলো তাক্বদির দ্বারা নির্ধারিত।

যুগ, জাতি, নাবী রাসূল অনেক কিছু পাল্টালেও তাদের এই শত্রুতার ধরণ কখনোই পাল্টায়নি। আর একারণেই আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ

"তোমার সম্বন্ধে তো তাই বলা হয় যা বলা হত তোমার পূর্ববর্তী রাসূলগণ সম্পর্কে।" (সূরা ফুসসিলাত ৪১:৪৩)

এবং তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ

"এভাবেই তাদের পূর্ববর্তীদের নিকট যখনই কোন রাসূল এসেছে তারা তাকে বলেছে, 'তুমি তো এক যাদুকর না হয় উন্মাদ'। তারা কি একে অপরকে এই মন্ত্রণাই দিয়েছে (বংশানু্ক্রমে শিখিয়েছে)? বস্তুত তারা সীমালঙঘনকারী সম্প্রদায়।" (সূরা যারিয়াত ৫১:৫২,৫৩)

তাদের এই শত্রুতার রয়েছে নানান রূপঃ

  • অন্তরের কুফরী (তাকযিব); আল্লাহ্‌  তা'আলা বলেনঃ 

"নিশ্চয় তোমার পূর্বে অনেক রাসূলকে মিথ্যাবাদী বলা হয়েছিল; কিন্তু তারা ধৈর্যধারণ করেন..." [সূরা আন'আম ৬:৩৪]

  • ঠাট্টা (সুখরিয়াহ) এবং বিদ্রুপ (ইসতিহজা) করা; আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

"যারা অপরাধী তারা তো মু'মিনদেরকে উপহাস করত।" [সূরা মুতাফ্ফিফীন ৮৩:২৯]

পরিতাপ বান্দাদের জন্য; তাদের নিকট যখনই কোন রাসূল এসেছে তখনই তারা তাকে বিদ্রুপ করেছে।" [সূরা ইয়াসীন  ৩৬:৩০]

  • মু'মিনদেরকে পাগল (জুনুন) বলে অপবাদ দেয়া; আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ
"তারা বলে, 'ওহে যার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে! তুমি তো নিশ্চয় উন্মাদ।" [সূরা হিজর ১৫:৬]

  • মু'মিনদের কর্তৃত্ব (হ্বুকুম) ও ক্ষমতালোভী (রিয়াসাহ) বলে অপবাদ দেয়া; আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ
"তারা বলতে লাগলোঃ তুমি কি আমাদের নিকট এইজন্য এসেছ যে, আমাদেরকে সরিয়ে দাও সেই তরিকা থেকে, যাতে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের পেয়েছি, আর পৃথিবীতে তোমাদের দুইজনের আধিপত্য স্থাপিত হয়ে যায়? আমরা তোমাদেরকে কিছুতেই মানব না। " (সূরা ইউনুস ১০:৭৮)

  • মু'মিনদের ধর্মত্যাগ ও বিশৃঙ্খলা (ফাসাদ) সৃষ্টির দায়ে অভিযুক্ত করা; আল্লাহ্‌  তা'আলা বলেনঃ
"ফিরাউন বলল, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি মূসাকে হত্যা করি এবং সে তার প্রতিপালকের স্মরণাপনড়ব হোক।  আমি আশংকা করি যে, সে তোমাদের দ্বীনের পরিবর্তন ঘটাবে অথবা সে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।" [সূরা মু'মিন ৪০:২৬]

  • মু'মিনদের দারিদ্র ও অসহায়ত্বের সুযোগে গালমন্দ করা; আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ
"তারা বললঃ আমরা কি তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব অথচ নিচু শ্রেণীর লোকেরা তোমার অনুসরণ করছে।" [সূরা শূরা ২৬:১১১]

  • তারা এটি করত যাতে অন্য মানুষেরা মু'মিনদের নিকটে না আসে; আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ
"... কাফিররা মু'মিনদের বলেঃ দু'দলের মধ্যে কোনটি মর্যাদায় শ্রেষ্ঠতর ও মজলিস হিসেবে কোনটি উত্তম।" [সূরা মারইয়াম ১৯:৭৩]

  • মু'মিনরা অভিশপ্ত এবং মু'মিনদের কারণে তাদের উপর গযব আসবে এমন অভিযোগঃ
"তারা বললঃ আমরা তোমাদেরকে অমঙ্গলের কারণ মনে করি এবং যদি তোমরা বিরত না হও তবে অবশ্যই তোমাদেরকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করব; ..." (সূরা ইয়াসীন ৩৬:১৮)

  • সত্য প্রত্যাখ্যান এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা যুক্তি প্রদর্শন; আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ
“...কিন্তু কাফিররা মিথ্যা অবলম্বনে বিতন্ডা করে, এর দ্বারা সত্যকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য এবং আমার নিদর্শনাবলী ও যা দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে সেই সমস্তকে তারা বিদ্রুপের বিষয়বসত্দুরূপে গ্রহণ করে থাকে।" [সূরা কাহ্ফ ১৮:৫৬]

এগুলোর মাঝে লুকিয়ে ছিল তাদের বিভ্রান্তিসমূহ যা দ্বারা তারা আল্লাহ্‌র পথে বাঁধা সৃষ্টি করত।

  • সাধারণ মানুষকে মু'মিনদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা, আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ
"তার সমপ্রদায়ের কাফির প্রধানরা বললঃ 'তোমরা যদি শুআ'ইবকে অনুসরণ কর তবে তোমরা তো ক্ষতিগ্রস্থ হবে'।" [সূরা আ'রাফ ৭:৯০]

তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ

"ফিরাউন বলল, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি মূসাকে হত্যা করি এবং সে তার প্রতিপালকের শরণাপন্ন হোক। আমি আশংকা করি যে, সে তোমাদের দ্বীনের পরিবর্তন ঘটাবে অথবা সে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।" [সূরা মু'মিন ৪০:২৬]

  • মু'মিনরা মুষ্টিমেয় হওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ জনগণের উপর তাদের মতবাদ চাঁপিয়ে দিচ্ছে এমন অভিযোগ উত্থাপন। এর উদাহরণস্বরূপ আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেছেনঃ
"এরপর ফিরাউন শহরে শহরে লোক সংগ্রহকারী পাঠালো এই বলেঃ 'ইহারা তো ক্ষুদ্র একটি দল। ইহারা তো আমাদের ক্রোধের উদ্রেক করেছে এবং আমরা তো সকলেই সদা শৃঙ্খলাবদ্ধ ও সদা সতর্ক'।" [সূরা শু'আরা ২৬:৫৩-৫৬]

  • তারা দাবী করে যে, সত্য দ্বীনের ব্যাপারে তাদের অবস্থান মু'মিনদের চেয়ে উত্তম। আল্লাহ্‌ তা'আলা বলেনঃ
ফিরাউন বললঃ আমি যা বুঝি, আমি তোমাদেরকে তাই বলছি। আমি তোমাদেরকে কেবল সৎপথই  দেখিয়ে থাকি।" [সূরা মু'মিন ৪০:২৯]

তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা), বলেনঃ

"তারা বললঃ নিশ্চয় এরা দুইজন যাদুকর, তারা চায় তাদের যাদু দিয়ে তোমাদেরকে দেশ থেকে বের করতে এবং তোমাদের উৎকৃষ্ট জীবন ব্যবস্থা ধ্বংস করতে।" [সূরা ত্বাহা ২০:৬৩]

তিনি, (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা), বলেনঃ

"তাদের কাছে যখন স্পষ্ট নিদর্শনসহ তাদের রাসূল আসত তখন তারা নিজেদের জ্ঞানের দম্ভ করত।" [সূরা মু'মিন ৪০:৮৩]

  • নানাবিধ চক্রান্ত ও পরিকল্পনা করে সাধারণ মানুষকে মু'মিনদের অনুসরণ থেকে বিরত রাখা। আলাহ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ
"যাদেরকে দুর্বল বলা হত তারা ক্ষমতাদর্পীদেরকে বলবেঃ 'প্রকৃতপক্ষে তোমরাই তো দিবারাত্র চক্রান্তে লিপ্ত ছিলে, আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলে যেন আমরা আলাহকে অমান্য করি এবং তাঁর শরীক স্থাপন করি। যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে তখন তারা অনুতাপ গোপন রাখবে এবং আমি কাফিরদের গলায় শৃঙ্খল পরাব। তাদেরকে তারা যা করত তারই প্রতিফল দেয়া হবে।" [সূরা সাবা ৩৪:৩৩]

  • মু'মিনদেরকে সুবিধাবঞ্চিত করে দ্বীন থেকে দূরে রাখার প্রচেষ্টা। আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ
"তারা বলেঃ আল্লাহ্‌ র রাসূলের সহচরদের জন্য ব্যয় কর না যতক্ষণ না তারা তার থেকে সরে পড়ে। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর ধনভান্ডার তো আল্লাহ্‌রই কিন্তু মুনাফিকরা তা বুঝে না।" [সূরা মুনাফিকূন ৬৩:৭]

  • মু'মিনদেরকে নানাবিধ সমস্যায় ফেলে দ্বীন থেকে দূরে রাখার প্রচেষ্টা। আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ
"তারা চায় তুমি নমনীয় হও; তাহলে তারাও নমনীয় হবে।" [সূরা কালাম ৬৮:৯]

তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ

প্রতি কখনো সন্তুষ্ট হবে না,যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর।" [সূরা বাকারা ২: ১২০]

  • মু'মিনরা যদি তাদের দ্বীন থেকে না সরে অথবা কাফিরদের সাহায্য সহযোগীতা না করে তবে তাদেরকে জেল ও মৃত্যুদন্ডের ভয় দেখানো। আল্লাহ্‌  (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ
"কাফিররা তাদের রাসূলগণকে বলেছিলঃ আমরা তোমাদেরকে অবশ্যই আমাদের দেশ থেকে বহিষ্কৃত  করব।" [সূরা ইব্রাহীম ১৪:১৩]

আলাহ তা'আলা বলেনঃ

"তারা যদি তোমাদের ব্যাপারে জানতে পারে তাহলে তোমাদেরকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করবে অথবা তোমাদেরকে  তাদের ধর্মে ফিরিয়ে নিবে এবং সেক্ষেত্রে তোমরা কখনোই সফলকাম হবে না।"  [সূরা কাহ্ফ ১৮: ২০]

  • মু'মিনদের উপর অত্যাচার, হত্যা এবং সংঘাত চাঁপিয়ে দেয়া। আল্লাহ্‌  (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ
"তারা বললঃ তাকে পুড়িয়ে দাও; সাহায্য কর তোমাদের দেবতাদেরকে...।" [সূরা আম্বিয়া ২১:৬৮]

তিনি, (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা), বলেনঃ

"আর স্মরণ কর যখন কাফিররা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যে, তোমাকে বন্দী করবে অথবা হত্যা করবে অথবা নির্বাসিত করবে..." [সূরা আনফাল ৮:৩০]

তিনি,(সুবহানাহু ওয়া তা'আলা), বলেনঃ

"তারা সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে যে পর্যন্ত না তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দেয়।" [সূরা
বাকারা ২:২১৭]

তাই মু'মিন ভাইদের উদ্দেশ্যে বলছি, কাফিরদের শত্রুতা ও বিরোধিতার কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে যা কখনো বদলাবে না।  তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ

"তারা কি একে অপরকে এই মন্ত্রণাই দিয়েছে (বংশানু্ক্রমে শিখিয়েছে)?" [সূরা যারিয়াত ৫১:৫৩]

আর সবচেয়ে বড় কথা হলো মু'মিনদের ঈমানের কারণেই কাফিররা মু'মিনদের সাথে যুদ্ধ করে এবং শত্রুতা পোষণ করে। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ

“তারা তাদেরকে শাস্তি দিয়েছিল শুধু এ কারণে যে, তারা প্রশংসিত, পরাক্রান্ত আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের ক্ষমতার মালিক, আল্লাহর সামনে রয়েছে সবকিছু” [সূরা আল বুরুজ ৮৫:৭,৮]

এবং তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ

তারা এটাই কামনা করে যে, তারা যেমন কুফরী করেছে তোমরা সেরকম কুফরী কর; যাতে তোমরা তাদের সমান হয়ে যাও।" [সূরা নিসা ৪:৮৯]

সুতরাং কাফিরগণ মু'মিনগণকে শত্রু হিসেবে নেয় তাদের ঈমানের জন্য। একজন মুমিনের ঈমান যত বৃদ্ধি পায় তাঁর প্রতি কাফিরদের শত্রুতা ততই বৃদ্ধি পায়। এ ব্যাপারে রাসূলুলাহ  (সালালাহু আলাইহি ওয়া সালাম) বলেনঃ "সবচাইতে বেশী  পরীক্ষা করা হয় নাবীদেরকে, এরপর তাদের নিকটবর্তীদেরকে (ঈমানের স্তর ভেদে), তারপর তাদের নিকটবর্তীদেরকে  (ঈমানের স্তর ভেদে)। মানুষ তার ঈমানের স্তর অনুযায়ী পরীক্ষিত হবে... .."। [আত তিরমিযী; সহীহ্]

আর এটি বান্দা নিজেও বুঝতে পারে যে, তার ঈমান বৃদ্ধির সাথে সাথে তার প্রতি কাফির ও ফাসিকদের শত্রুতাও বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং সে তাদেরকে ভালো কাজের আদেশ দেয় এবং মন্দ কাজে নিষেধ করে, এতে শত্রুতা আরো বৃদ্ধি পায়। আর তার ঈমান যত হ্রাস পায় তাদের শত্রুতাও ততই হ্রাস পায়।

তবে মু'মিনরা যতদিন ঈমানের উপর থাকবে তাদের প্রতি কাফিরদের শত্রুতা ততদিন পর্যন্ত শেষ হবে না; যদিও এতে কিছু থাকে তবুও। আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ

"ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানরা তোমার প্রতি কখনো সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর।" [সূরা বাকারা ২:১২০]

তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেনঃ

"তারা সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে যে পর্যন্ত না তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দেয়।" [সূরা বাকারা ২:২১৭]

*** *** *** *** ***

লেখাটি শাইখ আব্দুল ক্বাদির বিন আব্দুল আজীজ রচিত "জিহাদ বিষয়ক মৌলিক আলো

মোল্লা VS নাস্তিক......১ম পর্ব (সিরিজ ২)

- No comments
মোল্লা VS নাস্তিক......১ম পর্ব (সিরিজ ২)
by মুক্তির পথিক

(মোহাম্মদপুরের কোন এক চায়ের দোকানে কিছু তরুণ বসে আলোচনা করছে)



১ম তরুণঃ তাহলে বুঝছ তো? আল্লাহ যদি থাকতই, তাহলে সমাজে কি গরীব থাকতো? ঐ লোকটার কি দোষ যে আল্লাহ তাকে গরীব করে বানাইছে?



(কথাটা কানে যেতেই দাঁড়িয়ে পড়ল মোল্লা। ভাল করে খেয়াল করল তরুণকে। মুখে ফ্রেঞ্চ কাট দাঁড়ি, DON 2 এর শাহরুখ খানের মত ঝুঁটি বাঁধা চুল, চে গুয়েভারার গেঞ্জি গায়ে.........যাকে বলা হচ্ছে, সে সাধারণ একজন তরুণ। তাদেরকে ঘিরে বসে আছে আরও কয়েকজন, সবাইকে ভার্সিটি পড়ুয়াই মনে হল...... বসল গিয়ে চায়ের দোকানে।)



উৎসুক শ্রোতা পেয়ে ১ম তরুণ আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল......



মোল্লাঃ ভাই, আপনার যুক্তিটা তো বুঝলাম না। সমাজে গরীব আছে বলে স্রষ্টা নেই, এটা কেমন কথা হল?



১ম তরুণঃ স্রষ্টা থাকলে তিনি কি আর গরীব লোকদের কষ্ট দেখে চোখ বুজে থাকতেন? অবশ্যই তিনি তার সৃষ্টিকে কষ্ট দিতেন না।



মোল্লাঃ এটা কোন কথাই হলনা। অনেক মানুষের অনেক টাকা পয়সা আছে, তারপরও তারা কষ্টে আছে। খালি গরীব হলেই কষ্ট, এটা ভুল। কষ্ট নাই, এমন কোন মানুষ পাইনি আমার জীবনে। কারো চেহারা নিয়ে কষ্ট, কারো টাক নিয়ে কষ্ট, কারো  GF কে না পাওয়া নিয়ে কষ্ট।



(......উৎসুক শ্রোতারা, আশেপাশের আরও কয়েকজন, যারা এতক্ষণ নাস্তিকতার কথা শুনছিল, কিন্তু পাল্টা যুক্তি দেখাতে না পেরে মনে মনে কষ্ট পাচ্ছিল, সবাই মনোযোগ দিল)



...আপনার লজিকটা ভুল। অনেকটা এইরকম,  NOKIA N8, N97 আর  6210 নিজেদের মধ্যে আলাপ করতেছে, “আমাদের মধ্যে যেহেতু বৈচিত্র্য আছে, সেহেতু NOKIA COMPANY বলে কিছু নাই”। এটা কোন কথা হল?



(বিন্দুমাত্র না দমে...)



১ম তরুণঃ কিন্তু আল্লাহ আছে, এই প্রমাণ কেউ করতে পারেনি, এর কোন প্রমাণই নেই, আপনার কাছেও প্রমাণ নেই, খালি অন্ধ বিশ্বাস।



মোল্লাঃ (দৃঢ়ভাবে) জী না, আমার কাছে প্রমাণ আছে। বরং স্রষ্টায় না বিশ্বাস করাটাই অন্ধ বিশ্বাস।



পাশ থেকে কেউ একজন : “ কিভাবে?? Zakir Nayek এর logic দিবেন তো? ওইটা তো Zakir Nayek না, Joker Nayek, ওর logic এর অনেক flaw আছে।’’



মোল্লাঃ আমি জাকির নায়েকের logic দিবনা।বরং আমি আপনাকে এমন প্রমাণ দিব যা আমদের বাস্তবতা (Reality)কে পর্যবেক্ষণ করে নেয়া, যা চূড়ান্তভাবে স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ করবে।



(এবার তারা কিছুটা উৎসাহিত হল)



দুইজন (সমস্বরে) : কিভাবে?



মোল্লাঃ দেখেন, আমাদের এই মহাবিশ্বটার যদি শুরু থাকে, তবে এই প্রশ্নটা সামনে চলে আসে যে, তা কিভাবে শুরু হল?



১ম তরুণঃ কিন্তু মহাবিশ্ব তো শুরু নাও হতে পারে, অনন্তকাল  ধরেও তো চলে আসতে পারে?



মোল্লাঃ না, মহাবিশ্ব অনন্তকাল ধরে চলে আসতে পারেনা, এর অবশ্যই অবশ্যই শুরু আছে।



১ম তরুণঃ আপনি এত Sure হলেন কিভাবে?



(বাকিরা উৎসাহী নয়নে চেয়ে আছে...)



মোল্লাঃ মনে করেন, আপনি বাসে উঠার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, আপনার সামনে আরও ৫ জন। আপনি কয়জনের পর বাসে উঠবেন?



কেউ একজনঃ ৫ জনের পর।



মোল্লাঃ যদি আপনার সামনে ১০ জন থাকে, তাহলে??



১ম তরুণঃ ১০ জনের পর।



মোল্লাঃ কিন্তু যদি আপনার সামনে অসীম সংখ্যক লোক দাঁড়িয়ে থাকে? তাহলে, কয়জনের পর বাসে উঠবেন?



(ব্যাপারটা হজম করতে সময় লাগল, কেউ কথা বলছেনা)



মোল্লাঃ তারমানে আপনি কোনদিন বাসে উঠতে পারবেন না। কারণ আপনার সামনের লাইন কোনদিনই শেষ হবেনা (যেহেতু অসীম)। সুতরাং আপনার serial কখনই আসবেনা। এখন এই মহাবিশ্ব যদি অনন্তকাল ধরে চলে থাকে, তবে একটা প্রশ্ন করি, পৃথিবীর জন্ম কবে হয়েছে? উত্তর হবে, পৃথিবীর  জন্ম এখনও হয়নাই, কখনই হবেনা, কারণ পৃথিবীর জন্ম হওয়ার আগে অসীম সংখ্যক ঘটনা ঘটতে হবে। আর অসীম মানে যার কোনও শেষ নাই, সেই ক্ষেত্রে পৃথিবীকে অনন্তকাল জন্ম হওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে, যেরকম আপনি লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন বাসে উঠার জন্য। আপনার সামনের লাইন কোনদিনও শেষ হবেনা, আপনিও বাসে উঠতে পারবেন না, পৃথিবীর সামনের লাইনও কোনদিন শেষ হবেনা। এখন মনে করি, পৃথিবীর সামনে সূর্য দাঁড়িয়ে আছে, জন্ম হওয়ার অপেক্ষায়, তারও কোনদিন জন্ম হবেনা, কারণ তার সামনের লাইনও তো অসীম! অসীমের সাথে ১ যোগ করলেও অসীম, ১ বিয়োগ করলেও অসীম, তাহলে আগের ঘটনাগুলোই যদি এখনও শেষ না হয়, তাহলে আমি, আপনি , পৃথিবী, সূর্য  কোন কিছুরই অস্তিত্ব সম্ভব হতনা। অবশ্যই একটা ঘটনার মাধ্যমে মহাবিশ্বের শুরু হয়েছে, তারপর ১,২,৩,৪, করে করে ঘটনাগুলো ঘটতে আরম্ভ করেছে......এখন আমি আপনি চায়ের দোকানে আলাপ করছি!



মাঝখান থেকে একজনঃ ভাই, আরেকটু বুঝিয়ে বলবেন কি?



মোল্লাঃ কঠিন হয়ে গেল? আচ্ছা, মনে করেন, আপনি শত্রু পক্ষের কাউকে স্নাইপার রাইফেল দিয়ে গুলি করবেন। আপনার উপর ৫ জন BOSS আছে, পর্যায়ক্রমে যাদের অনুমতি পেলে আপনি গুলি করবেন। এখন আপনাকে যদি অসীম সংখ্যক BOSS এর permission নিতে হয়, তাহলে আপনি কখন গুলি করবেন? আপনার permission নেয়াও শেষ হবেনা, গুলিও কোনদিন করতে পারবেন না। আপনার বাসায় যদি অসীম সংখ্যক মালামাল থাকে তাহলে কোনদিনই বাসা change করতে পারবেন না। কারণ মালামাল নামানো কোনদিনই শেষ হবেনা।



(চায়ের দোকানদারকে)...... ভাই, এক গ্লাস পানি দাও তো...



তারমানে কোনও একটা ঘটনা যদি ঘটে, বুঝতে হবে যে তার আগে অসীম সংখ্যক ঘটনা ঘটেনি, ঘটেছে সীমিত সংখ্যক ঘটনা, আর সীমিত ঘটনা মানেই, একটা শুরু আছে, তারপর ঘটনা গুলো ঘটতে ঘটতে আজকের এই পর্যায়ে এসেছে। সুতরাং মহাবিশ্বের অবশ্যই শুরু আছে। যেরকম ৫ জনের বা ১০ জনের পর আপনি বাসে উঠতে পারছেন, সেইরকম ৫টা, ১০টা বা ১০০টা ঘটনা ঘটার পর পৃথিবীর জন্ম হয়েছে। এ থেকেই প্রমাণ হয়, মহাবিশ্বের শুরু আছে, এটা অনন্তকাল ধরে চলে আসা কোনও মহাবিশ্ব নয়।



(বিংশ শতাব্দীর শুরুতে গণ্ডমূর্খ নাস্তিক INTELLECTUAL দের, যে যুক্তি, উঠতি তরুণ সমাজের মাঝে নাস্তিকতার হাওয়া যুগিয়েছিল, তার এরকম পতন দেখে  হতবাক হয়ে গেল তরুণগুলো)



(একটু নমনীয় সুরে......)



১ম তরুণঃ আপনার কথা ঠিক আছে... (অজানা ভয়ে...... আমতা আমতা করে...) কিন্তু এতেও প্রমাণ হয়না যে স্রষ্টা আছে।



মোল্লাঃ এখন অবশ্যম্ভাবী প্রশ্নটা চলেই আসে, তাহলে মহাবিশ্ব কিভাবে শুরু হল, মানে সৃষ্টি হল। সে কি নিজেকে নিজে তৈরি করেছে, অর্থাৎ শুন্য থেকে নিজেই নিজেকে তৈরি করেছে নাকি অন্য কেউ তাকে তৈরি করেছে?



১ম তরুণঃ আপনার যুক্তিটা কি? Stephen Hawkings কিন্তু বলেছেন যে, কোন স্রষ্টা ছাড়াই এই মহাবিশ্ব নিজেকে নিজে তৈরি করেছে।



মোল্লাঃ (তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে...) Grand Design বইটার কথা বলছেন তো? ঐ বইয়ের সমালোচনার জবাবে হকিংস নিজের মুখেই স্বীকার করেছেন যে,

“ স্রষ্টা নেই, এ কথা কেউ প্রমাণ করতে পারবেনা। কিন্তু বিজ্ঞান স্রষ্টাকে অপ্রয়োজনীয় বলে রায় দিয়েছে।’’

সুতরাং, ঐ বই থেকেও প্রমাণ হয়না যে স্রষ্টা নেই। বরং লেখক নিজেই বলছেন যে, স্রষ্টাকে আমাদের দরকার নেই। দরকার নেই, আর স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই, দুইটা তো এক জিনিষ না। আর তাছাড়া  বইটাতে বোকামিপূর্ণ বক্তব্য দেয়া হয়েছে।



(ব্যাপারটা হজম করতে না পারলেও, এই মোল্লার দৌড় যে শুধু মসজিদ পর্যন্ত না, তা তারা ভালই বুঝতে পেরেছে।)



মোল্লাঃ তা ভাই, আপনার নামটা যেন কি?



১ম তরুণঃ রুম্মান।



মোল্লাঃ চা চলবে ভাই?...... এই মামা, চা দাও সবাইকে......



রুম্মানঃ যা বলছিলেন, হকিংস......



মোল্লাঃ ও, হ্যাঁ। উনি বলেছেন যে, Gravityর কারণে এ মহাবিশ্ব নিজেই নিজেকে শূন্য থেকে তৈরি করতে পারে।



রুম্মানঃ তো, এতে সমস্যা কোথায়? Virtual Gravitons এর কারণে এই Gravity তৈরি হয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে মহাবিশ্বের সৃষ্টি, শূন্য থেকে।



মোল্লাঃ সমস্যা আছে। Gravity একটা গাণিতিক সমীকরণ। দুইটা বস্তুর মাঝে ভর অনুপাতে আকর্ষণ বুঝাতে এটা ব্যবহৃত হয়। তো মহাবিশ্ব যদি শূন্য থেকেই আসে, তাহলে সেখানে কোন বস্তু ছিলনা, তো Gravity  কোত্থেকে আসল সেই সময়? এইখানে আপনি বলছেন যে Virtual Gravitons ছিল, তো সেই প্রশ্ন এসে যায়, এরা কি অনন্তকাল ছিল? অনন্তকাল ধরে থাকতে পারেনা। আর একটা জিনিষ নাই, ছিলনা, আবার সেটা হইল, আবার নাই আবার হইল, এইটাত পুরাই irrational কথাবার্তা। আপনার সামনে আমি দাঁড়াইয়া আছি, আবার গায়েব হয়ে গেলাম, আবার দাঁড়াইয়া আছি, আবার গায়েব হয়ে গেলাম... science দেখি সিন্দাবাদের দৈত্যের মত কথা বলছে, Infact তার চেয়েও আজগুবি কথা বলেছে হকিংস। এই কারনেই ব্রিটিশ বিজ্ঞানী বেরনেস গ্রিনফিল্ড হকিংস কে তালিবানদের সাথে তুলনা করে বলেছেন যে, “যা খুশি তারা বলতে পারে, তালিবানদের মত তারা যখন বলে আমাদের কাছে সব প্রশ্নের উত্তর আছে, তখন তা আসলেই অস্বস্তিকর।’’ মানে Comment করতে তো আর পয়সা লাগেনা। science বুঝেনা এরকম নাস্তিকরাই আসলে হকিংস রে নিয়ে কাউ কাউ করে। Richard Dawkins এইরকম একজন। আমাদের দেশের নাস্তিকগুলাও না বুইঝা ফালাফালি করে। অনেক বিজ্ঞানীই হকিংসের সাথে একমত না।



..... আর gravity না হয় gravitons থেকে হইল, যেটার কারণে মহাবিশ্ব হইল, তাহলে gravitons কোত্থেকে হইলো? দ্বিতীয় আরেকটা প্রশ্ন হল, হকিংস শূন্য বলতে যে Quantum vacuum বুঝিয়েছেন, তা কিন্তু আসলেই শূন্য (nothing) না। সেখানে energy বিরাজ করত। এখন, energy আর gravity এই মহাবিশ্বেরই অংশ। হকিংসের কথার সাদামাটা মানে হল, আপনি নিজেকে তৈরি করেছেন শূন্য থেকে, নিজেকে তৈরি করার আগে আপনার হাত আগে থেকেই ছিল(যেটা আপনারই অংশ), তারপর সেই হাত আপনাকে তৈরি করেছে। তো প্রশ্ন হল, হাত কিভাবে ছিল? এটা একটা অবাস্তব কথাবার্তা।



মহাবিশ্বের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত একটা জিনিষ, মহাবিশ্ব তৈরি হওয়ার আগে থেকেই ছিল, এরপর মহাবিশ্বকে তৈরি করে সে নিজেই মহাবিশ্বের পেটের ভেতর  ঢুকে পড়েছে, Hw Funny???? Seems like fairy tales!! অর্থাৎ আপনি আগে থেকেই ছিলেন,এরপর আপনার মাকে আপনি বানাইছেন, বানাইয়া তার পেটের ভেতর ঢুকে বসে আছেন, আর মায়ের কাছ থেকে পুষ্টি নিয়ে বেঁচে আছেন। লুল, লুল মজা পাইলাম।



(পুরা দোকান মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনে যাচ্ছে, কেউ বুঝতেছে, কেউ বুঝতেছেনা, তবে সাধারণ জনগণ চাচ্ছে মোল্লাই জিতুক। চায়ে চুমুক দিয়ে.........)



এর চেয়ে অবাস্তব কথা আর কি হতে পারে? এ থেকেই বুঝা যায়, মহাবিশ্ব শূন্য থেকে আপনা আপনি তৈরি হয়েছে, এরকম কোন সত্য প্রমাণ বিজ্ঞানের কাছে আদৌ নেই। এটা শুধু থিওরি হিসেবে হকিংসের কল্পনায় (Fantasy) আছে, যার বাস্তব ভিত্তি নেই। না হলে কি আর হকিংস সাহেব বলতেন, “স্রষ্টার অনস্তিত্ব প্রমাণ করা সম্ভব নয়”



এজন্যই আল্লাহ কুরআনে  সুরা আত তুরে বলেছেন, “ তারা কি এমনি এমনিই তৈরি হয়েছে, নাকি তারা নিজেরাই নিজেদের স্রষ্টা? না তারা নভোমডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেছে? বরং তারা বিশ্বাস করেনা।’’



রুম্মানঃ (ব্যঙ্গ করে), এ কথা আপনি মহাজ্ঞানী বুঝলেন, আর হকিংস বুঝলনা??



মোল্লাঃ (তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে) হকিংস অজ্ঞানান্ধ (বিজ্ঞানে অন্ধ= অজ্ঞানান্ধ)। একজন রিকশাওয়ালাও তার চেয়ে rational। এক রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞাস করা হয়েছিলো, “ চাচা, আল্লাহ আছে, এটা বুঝলেন ক্যামনে?” কিছুক্ষণ চুপ থেকে তিনি উত্তর দিলেন,

“ বাবারে, আমি প্যাডেল চাপি, চাক্কা ঘুরে, আর এতবড় দুনিয়া ঘুরতাছে, প্যাডেল তো কেউ একজন মারতাছে......”



হকিংস সাহেবের এই বোধ বুদ্ধিটাও নাই। হাহাহাহাহা, দেখেন না, এখন কমেডি শোতে  অভিনয় করা শুরু করেছেন! এদের ব্যাপারেই আল্লাহ কুরআনে সুরা আল আরাফে বলেছেন, “ আর আমি সৃষ্টি করেছি দোজখের জন্য বহু জিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করেনা, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখেনা, তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শুনেনা। তারা চতুষ্পদ জানোয়ারের মত, বরং তার চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, উদাসীন।’’



২য় তরুণঃ তাহলে কি দাঁড়ালো? মহাবিশ্ব অসীম নয়, এর শুরু আছে। শুরুটা সে নিজে নিজে করেনি। তারমানে অবশ্যই কেউ একজন এই মহাবিশ্বকে শুরুতে সৃষ্টি করেছেন। ......(কিছুক্ষণ ভেবে) কিন্তু একটা সমস্যা তো রয়েই যাচ্ছে। তাহলে ঐ স্রষ্টা আসল কোত্থেকে? উনাকে কে বানাইছে?





(মোল্লাকে আটকানো গেছে ভেবে কতগুলো চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। বাকিরা দম বন্ধ করে ফেলল)............To be continued.....


উড়াধুড়া মোল্লা

উড়াধুড়া মোল্লা
উড়াধুড়া মোল্লা