Thursday, March 14, 2013

মোল্লা vs নাস্তিক (২য় পর্ব) (সিরিজ ২)


মোল্লা vs নাস্তিক......... (২য় পর্ব) (সিরিজ ২)

by মুক্তির পথিক



(চায়ে ধীরেসুস্থে  চুমুক দিল মোল্লা। সবাই উৎসুক চোখে চেয়ে আছে।)
 পাশ থেকে একজন খোঁচা মেরে বললঃ এটা তো শয়তানের প্রশ্ন। তুই তো শয়তান হয়ে গেলিরে।
(হাসির রোল উঠল...)

মোল্লাঃ স্রষ্টাকে যদি অন্য কেউ বানায়, তাহলে প্রশ্ন আসে, তাকে কে বানাল? সেই স্রষ্টার স্রষ্টা কে? এইভাবে দ্বিতীয়, তৃতীয় স্রষ্টার স্রষ্টা কে? এবং এভাবে ব্যপারটা আবার অসীম পর্যন্ত চলতে থাকবে। একটু আগেই কিন্তু আমরা প্রমাণ করেছি, কোন অসীম সংখ্যক ঘটনা সম্ভব নয়। তারমানে হোল, এই মহাবিশ্বের যিনি স্রষ্টা, তার কোন স্রষ্টা নেই।
রুম্মানঃ তাহলে তিনি অস্তিত্বে আসলেন কিভাবে? তিনি কি নিজেকে নিজেই বানিয়েছেন?

মোল্লাঃ তাও সম্ভব নয়। একটা জিনিষ নাই, সে আবার নিজেকে নিজে কিভাবে বানাবে? আর নিজে যদি নিজেকে বানায়, তারমানে, নিজেকে বানানোর আগে তিনি ছিলেন না। নিজেকে যখন বানালেন তখন থেকে তার শুরু, তো কি দিয়ে বানালেন? আর শুরু মানেই তিনি সীমিত। আর তাকে যদি কেউ বানায়, তা নিজেই নিজেকে বানাক আর অন্য কেউ তাকে বানাক, এখানে physical properties চলে আসে। physical properties মানে তিনি নিয়ন্ত্রিত, তার উপর বৈশিষ্ট্য আরোপ করা হয়েছে, তাকে অন্য কারো ইশারায় চলতে হয়, তিনি স্বাধীন না। অথচ স্রষ্টা হতে হলে তাকে হতে হবে নিয়ন্ত্রণমুক্ত, স্বাধীন এবং অনির্ভরশীল। আর মূল কথা হল, একটা জিনিষ নাই, সে আবার নিজেরে কিভাবে, কি দিয়ে বানাবে? শূন্য থেকে আপনা আপনি কিছু হয়না, এটা তো আমরা একটু আগেই আলোচনা করলাম।
 রুম্মানঃ তাহলে স্রষ্টা আসল কোথা থেকে?

মোল্লাঃ তিনি অসৃষ্ট। তিনি কোথাও হতে আসেন নাই। তিনি আগে থেকেই ছিলেন, চিরকাল থাকবেন।

(গুঞ্জন উঠল ভিড়ের মধ্যে, “এটা কি হল, বুঝলাম না”...... “অসৃষ্ট মানে?”...... “তাহলে মহাবিশ্বের অসৃষ্ট হতে সমস্যা কোথায়......?”)
(কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল মোল্লার।)

মোল্লাঃ আমার বক্তব্যটা একটু গুছিয়ে বলি। মহাবিশ্বকে study করে আমরা বুঝলাম যে তার একজন স্রষ্টা আছে, তাইনা?

(আশপাশে তাকিয়ে তেমন একটা support পেলনা মোল্লা। দুই একজন হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল)

মহাবিশ্ব, স্রষ্টা ছাড়া সম্ভব না। এখন এই স্রষ্টাকে, হয়, কেউ তৈরি করেছে, না হয় তিনি নিজেকে নিজে তৈরি করেছেন। এ দুইটা বাদ দিলে মাত্র একটাই option থাকে। আর তা হল স্রষ্টা অসৃষ্ট। এর বাইরে আর কোন option নাই। প্রথম দুইটা point যে ভুল, তা আমি আলোচনা করেছি। আর বাকি একটাই option থাকে যে, তিনি একজন অসৃষ্ট স্রষ্টা (uncreated Creator)। তিনি যদি অসৃষ্ট (uncreated) না হন, তাহলে তিনিও ‘সৃষ্টি’ (created) হয়ে যান। আমাদের বুঝতে হবে যে, ‘স্রষ্টা’ (creator) আর ‘সৃষ্টির’ (created) মধ্যে পার্থক্য আছে। সৃষ্টি মানেই সীমাবদ্ধতা(limitation), নির্ভরশীলতা(dependency), দুর্বলতা(weakness)। কিন্তু স্রষ্টা এসকল সীমাবদ্ধতার ঊর্ধে। এজন্যই স্রষ্টাকে সৃষ্টি করা যায়না। তাকে হতে হবে অসৃষ্ট (uncreated)।
 (এতক্ষণে কয়েকজন বুঝল, কিন্তু প্রশ্ন শেষ হয়নি)
রুম্মানঃ মহাবিশ্বের  অসৃষ্ট হতে সমস্যা কোথায়? আর স্রষ্টার যে বৈশিষ্ট্য আপনি বলেছেন, তা তো কল্পনায়ও আনতে পারছিনা। পুরোপুরি বোধগম্যও হচ্ছেনা!

মোল্লাঃ মহাবিশ্বের ব্যপারটা তো বললামই, সে সীমিত(finite), সে অস্তিত্বের জন্য নির্ভরশীল। আর যে অস্তিত্বের জন্য অন্য কারো উপর নির্ভরশীল, সে তো সৃষ্টি (created)। এজন্যই তো সে অসৃষ্ট (uncreated) নয়, তার একজন স্রষ্টাকে দরকার, কিন্তু স্রষ্টার অন্য কোন স্রষ্টাকে দরকার নেই। আর স্রষ্টার বৈশিষ্ট্য বোধগম্য হচ্ছেনা, স্বাভাবিক। স্রষ্টার reality আর আমার আপনার reality এক না। একটা unknown reality কে আপনি known realityর সাথে match করাতে পারবেন না।

২য় তরুনঃ বুঝলাম না।

মোল্লাঃ মনে করেন আপনি কোনদিন আমেরিকার সাদা চামড়ার মানুষ দেখেন নি। এখন কেউ যদি আপনাকে এসে বলে, আমেরিকার মানুষের চামড়া সাদা, তো, আপনি কি বুঝবেন? আপনি বলবেন, দুধের মত সাদা? সে বলবে, না লাল সাদা। আপনি হয়ত বলবেন, দুধের মধ্যে আলতা দিলে যেরকম হয়, সেরকম?

(চায়ে চুমুক দিয়ে মোল্লা দেখল চা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। পাশে রেখে দিল)

মোদ্দা কথা হচ্ছে, একটা অজানা reality সম্পর্কে যদি আপনাকে এসে বলা হয়, আর আপনি যদি তা sense করতে না পারেন, তবে কোনদিনই বুঝবেন না ঐ reality কেমন। ঐ reality বুঝতে হলে আপনাকে ঐ reality তে অবস্থান করতে হবে। স্রষ্টার reality আমাদের বাইরের reality, যা আমরা কখনই বুঝবনা। এজন্যই, হাদিসে, আল্লাহ কেমন, কিভাবে কাজ করেন, কেমনে থাকেন এ বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ একটা অজানা reality সম্পর্কে চিন্তা করতে গিয়ে আমরা শুধু fantasy নিয়ে পড়ে থাকব......এ কারনে আমরা মহাবিশ্বকে study করে স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারি, কিন্তু তিনি কেমন, কিভাবে থাকেন, কিভাবে কাজ করেন, তা প্রমাণ করতে পারিনা, এটা আমাদের আয়ত্তের বাইরে।

মাঝখান থেকে একজনঃ ও, সেজন্যই বুঝি স্রষ্টার কোন মূর্তি থাকতে পারেনা! ছবি থাকতে পারেনা? কারণ, তাকে যদি নাই দেখলাম, তার বাস্তবতা যদি নাই বুঝলাম, তাহলে তার মূর্তি বানালে তো তাঁর উপর মিথ্যা আরোপ করা হয়। তাকে তো দেখিইনাই কোনদিন, মূর্তি বানাব কেমনে? মূর্তি তো বানাব আমার কল্পনা দিয়ে, কিন্তু সেটা তো আর স্রষ্টা নয়!

(প্রশংসার দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল মোল্লা, ভাবল, “নাহ, সব নাস্তিক গাধা না।”)

মোল্লাঃ Exactly! আপনি সঠিক point টাই ধরেছেন। এ কারণেই ইসলাম বলেছে স্রষ্টার সাথে এ মহাবিশ্বের কোন কিছুর তুলনা করা যায়না। তিনি অতুলনীয়। তাই, মূর্তি বানালে স্রষ্টার উপর মিথ্যা আরোপ করা হয়।

(রঙ্গমঞ্চে এবার নতুন একজন আবির্ভূত হলেন।)

তিনি বললেনঃ তার মানে, আপনি বলতে চাচ্ছেন, স্রষ্টা unlimited এবং independent।

(মোল্লা ঘুরে তার দিকে তাকাল। মাঝবয়সী ভদ্রলোক, এক কোণায় বসে মনোযোগ দিয়ে কথা শুনছিলেন এতক্ষণ। এঁর কাঁচাপাকা চুলও ঝুঁটি বাঁধা, চওড়া কপাল, ফ্রেঞ্চকাট দাঁড়ি, ফুলরীমের চশমা সেইরকম একটা ভাব এনে দিয়েছে চেহারায়...... মোল্লা বুঝল, tough guy...... মজাটা শুরু হবে এখন......)

মোল্লাঃ জী, স্রষ্টা unlimited এবং independent।

(মৃদু হাসলেন ভদ্রলোক)

মাঝবয়সী বাবুঃ আপনি কি quark এর কথা শুনেছেন? quark কে কিন্তু আমরা প্রকৃতিতে আলাদাভাবে ......মানে স্বাধীনভাবে বিচরণশীল পাইনা। সুতরাং একে আপনি limited বলতে পারবেন না। আবার একে নিয়ন্ত্রণও করা যায়না,মানে অন্য কেউ ওর উপর খবরদারি করতে পারেনা, সুতরাং একে independent বলতে পারেন। তাহলে কি বলতে চাচ্ছেন, quarkই আপনার আল্লাহ?? (হা হা হা)

মোল্লাঃ আপনার এই কথাটাই Atheist Bangladesh Group এর Admin আমাকে বলেছিল। তখন আমি quark সম্পর্কে জানতাম না। তাই একটু ধোঁকায় পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু পরে দেখি, (হাত দিয়ে মাছি তাড়াবার ভঙ্গি করল মোল্লা)। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, quark কে laboratory তে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে, এর ভর আছে, এর ঘূর্ণন আছে। সুতরাং একে আপনি independent বলতে পারেন না। আর ধারণা করা হয়, big bang এর শুরুতে সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ে এরা প্রকৃতিতে বিরাজ করেছিল, সুতরাং ‘unlimited’ একটা জিনিষ  ‘limited’ মহাবিশ্বে বিরাজ করতে পারেনা। আপনি আমার আলোচনা এতক্ষন শুনে থাকলে বুঝবেন।

মাঝবয়সী বাবুঃ আল্লাহর ও তো বৈশিষ্ট্য আছে, তিনি কি জানি......(মনে করার ভান করলেন) আর রহমান, আর রহিম, বেগারা, বেগারা, তাহলে তাকে dependent আর limited বলছেন না কেন?

(ব্যাটার নির্বুদ্ধিতায় বিরক্ত হল মোল্লা, ভাবল, “গাধা কি আর গাছে ধরে?” চেহারায় ফুটে উঠল বিরক্তির ছাপ)

মোল্লাঃ উনি যে রহমান, রহিম এগুলা উনার personality, এগুলা কোন physical বৈশিষ্ট্য না। quark এর বৈশিষ্ট্যগুলা physical বৈশিষ্ট্য, personality না। আর ফিজিক্যাল বৈশিষ্ট্য মানেই এগুলো আপনার উপর আরোপ করা হয়েছে, তার মানে আপনি independent না, আপনি খাঁচার ভেতর অচিন পাখি। আপনার হাত দেড় ফুট লম্বা, এটা physical বৈশিষ্ট্য, কিন্তু আপনি মানুষের সাথে ভাল আচরণ করেন, এটা আপনার personality, physical property কাউকে limited করে তোলে কিন্তু personality কাউকে limited করেনা।

(একটু যেন দমে গেলেন ভদ্রলোক)

মাঝবয়সী বাবুঃ কিন্তু......সবপারে, অর্থাৎ Omnipotent একজন স্রষ্টার কিন্তু সমস্যা আছে। আত্মবিরোধের সমস্যা।

(মোল্লা বুঝতে পারল অবশ্যম্ভাবী প্রশ্নটা এবার ধেয়েই আসছে......)

মাঝবয়সী বাবুঃ বলেন, আল্লাহ কি এমন কোন পাথর তৈরি করতে পারেন, যেটা উনি ধ্বংস করতে পারেন না? আপনি যদি বলেন, পাথর তৈরি করতে পারে, তাইলে তিনি ধ্বংস করতে পারবেনা, আর যদি বলেন এমন পাথর তৈরি করতে পারেন না, তাইলে তো আর এই স্রষ্টা সবকিছু পারেনা। দুইদিকেই সমস্যা। আত্মবিরোধ, সুতরাং আল্লাহ সবকিছু পারেন না!

(সবগুলা চোখ এখন মোল্লার দিকে)

মোল্লাঃ এটা একটা logical প্রশ্ন, রাইট?
মাঝবয়সী বাবুঃ (মৃদু হেসে) হ্যাঁ।

মোল্লাঃ logic সবসময় একটা premise এর উপর ভর করে চলে। এই প্রশ্নটার premise হল, “আল্লাহ সবকিছু পারেন”। এই কথাটার উপর ভিত্তি করে প্রশ্নটা করা হয়েছে। আমি আপনার প্রশ্নের জবাব দিব, তার আগে বলেন, আল্লাহ সবকিছু পারে, এটা আপনাকে কে বলেছে?

মাঝবয়সী বাবুঃ তারমানে, আল্লাহ সবকিছু পারেনা?

মোল্লাঃ না, আল্লাহ সবকিছু পারেনা।

(বোম্ব ফাটল যেন। উল্লাসধ্বনি শোনা গেল নাস্তিক শিবির থেকে। এই স্বীকারোক্তিতে মাঝবয়সী বাবুও হতভম্ব হয়ে গেলেন। আস্তিকরা দুরুদুরু বুকে তাকিয়ে আছে মোল্লার দিকে। মোল্লা চুপচাপ, শান্ত।)

মাঝবয়সী বাবুঃ তাহলে আপনার আল্লাহ সবকিছু পারেনা? হাহা (ব্যঙ্গ করে), তাহলে তিনি স্রষ্টা হওয়ার যোগ্যতা হারালেন। এরকম অযোগ্য স্রষ্টার দরকার নেই।

(রুম্মান চুপচাপ, সে নিবিড়ভাবে তাকিয়ে আছে মোল্লার দিকে। বুঝতে পারল, এত সহজে ঘায়েল করা যাবেনা মোল্লাকে) ......... to be continued...



মাঝবয়সী বাবু

1 on: "মোল্লা vs নাস্তিক (২য় পর্ব) (সিরিজ ২)"
  1. তৃতীয় খণ্ডটা কই ব্লগার ভাই?

    ReplyDelete